প্রবাসের জেলখানার চিঠি-২

‘আমার কতদিন জেল হয়েছে?’

  • মাজেদুল নয়ন, ম্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছয় বছর আগে সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি প্রিজন সেল থেকে একজন প্রবাসী শ্রমিক তার স্ত্রীকে চিঠি দেয়ার জন্য এক কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে চিঠি লিখতেন। কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডার জহির সেসব চিঠি ইমেইলে পাঠাতেন। সেই বাংলাদেশি কয়েদি এখন সাজা শেষে মুক্ত। সকলের অনুমতি সাপেক্ষে নাম ও পরিচয় গোপন রেখে এই চিঠিগুলো প্রকাশ করা হলো:

প্রবাসে একজন শ্রমিকের আবেগ, ভালবাসা, দেশে রেখে আসা স্ত্রী-সন্তানকে একবার দেখার আকুতি চিঠির প্রতিটি লাইনে।

বিজ্ঞাপন


প্রবাস থেকে জেলখানার দ্বিতীয় চিঠি:

বিজ্ঞাপন

”বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম শ্রদ্ধেয় জহির ভাই। পত্রের প্রথমে আমার সালাম গ্রহণ করবেন। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভাল আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। যাক, পরসমাচার এই যে আপনার কাছে অনুরোধ জহির ভাই চিঠি পাওয়া মাত্র আমার স্ত্রীর কাছে বাংলাদেশে ইমেইল করে পাঠিয়ে দিবেন।

‘শ্রদ্ধেয় রাখি,

পত্রের প্রথমে আমার সালাম গ্রহণ করবে। আশা করি আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের মাটিতে ভাল আছ। আমি আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে ভাল আছি।

পরসমাচার এই যে তোমাদের ছবি পেয়ে যে কত খুশি হয়েছি, একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন। তোমার ছবি ও রবিনের (সন্তান) ছবি খুব সুন্দর হয়েছে। যাক, তোমার এবং রবিনের শরীর কেমন আছে? সেটা চিঠির মাধ্যমে জানাবা। আমি সবসময় হাতে একটা চিঠি পাব সেই আশায় বসে থাকি। আমি রুহুল কি জেলখানার মধ্যে ভাল আছি? না। সবসময় তোমার ও রবিনের চিন্তা করি। তোমরা কেমন করে খাওয়া দাওয়া করো, তাও জানি না।

যাক রাখি, তুমি জানতে চেয়েছো, আমার কতদিন জেল হয়েছে? তা আমি চিঠির মধ্যে লিখতে পারবো না। কারণ যদি আমার অফিসার (জেল কর্তৃপক্ষ) জানতে পারেন, মারধোর করবে। আমার জেল বেশি দিন নাই। আল্লাহর রহমতে এসে পড়বো। যেমন করে হোক, খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট করবা না। যত টাকা লাগবে, সোহেলের (আত্মীয় বা বন্ধু) থেকে আনবা। ভুল করবা না। আমি রুহুল এখন কষ্টের মধ্যে আছি। আল্লাহর রহমতে একদিন রক্ত বিক্রি করে হলেও সোহেলের টাকা শোধ করবো। যাক সোহেল এবং সবার শরীর কেমন আছে? ভাল-মন্দ জানাবা। তারেক ভাই (আত্মীয়) কেমন আছেন, তাও জানাবা। বলবা আমার কাছে চিঠি দিতে।

যাক রাখি, আমার যে কত কষ্ট লাগে বাবা মা, বেঁচে থাকাকালীন আমার কাছে একটি চিঠিও দেয় নাই। যাক রাখি, যা হয়েছে, এক আল্লাহ পাক আমাদের সাথে আছেন। রাখি চিঠি পাওয়া মাত্র উত্তর দিবে। ভুল করবানা। চিঠি ইমেইল করে জহির ভাইয়ের কাছে পাঠাবা। তাহলে আমি পাবো।’

যাক জহির ভাই, অনুরোধ করে চিঠি পাওয়া মাত্র আমার স্ত্রীকে বলবেন উত্তর দেয়ার জন্য।

ইতি আপনার ছোট ভাই, রুহুল আমিন। ”

আরও পড়ুন- আমার ছেলে কত বড় হয়েছে!