স্নায়ুযুদ্ধ: চলে যাওয়া, ফিরে আসা



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মধ্যপ্রাচ্যে চলছে 'ছায়াযুদ্ধ', ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে চলছে 'ছায়াযুদ্ধ', ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইংরেজি ‘কোল্ড ওয়ার’ বাংলায় স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। প্রায়-অর্ধ শতাব্দী সময়কাল পৃথিবী থরথর করে কেঁপেছিল স্নায়ুযুদ্ধের উত্তেজনায়। একদিকে ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব আর অন্য দিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক দুনিয়া। দুই পরাশক্তি জোটের মেরুকরণে বিশ্ব ছিল বিভাজিত এবং যুদ্ধ হয়-হয় উত্তেজনা ঘিরে রেখেছিল সারা বিশ্বের মানুষদের।

সেই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও চাপা উত্তেজনা ফিরে ফিরে আসছে। আমেরিকা আর চীনের দ্বন্দ্ব কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন-সৌদি জোট আর ইরান-সিরিয়া-রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থানের বর্তমান চিত্র মনে করিয়ে দেয় স্নায়ুযুদ্ধ সময়কালকে।

বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে চলছে ‘ছায়া-যুদ্ধ’, যা স্নায়ুযুদ্ধের প্রত্যাবর্তন বলে মনে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে অঘোষিত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। স্নায়ুযুদ্ধের চলে যাওয়া আর ফিরে আসার মুখোমুখি হয়ে এখন তটস্থ বিশ্ববাসী। সবার মনে শঙ্কা, এই বুঝি শুরু হলো যুদ্ধ; এই বুঝি লেগে গেলো সংঘাত!

স্নায়ুযুদ্ধের ফিরে আসার আতঙ্কগ্রস্ত বিশ্বের এহেন সংকুল পরিস্থিতিতে স্নায়ুযুদ্ধের উদ্ভব, বিকাশ ও অবসানের ঘটনাপ্রবাহ ফিরে দেখা যেতে পারে। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক রাজনীতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। মহাযুদ্ধের আগে বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপের একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, হল্যান্ড বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক রূপে গণ্য হতো।

চীন-মার্কিন প্রতিযোগিতা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে, ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে এবং যুদ্ধের কারণে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপের দেশগুলোর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক কাঠামোয় প্রবল আঘাত হেনে দেশগুলোকে বিরাট সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়। ফলে বিশ্ব রাজনীতিতে ইউরোপের প্রাধান্য খর্ব হয়ে উত্থান ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বৃহৎ শক্তি ও পরমাণু শক্তিধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে আত্মপ্রকাশ করে প্রবলভাবে। বিশেষত ইউরোপের পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি পরস্পরের মুখোমুখি হয়, যদিও বিশ্বযুদ্ধে দেশ দুটি এক জোট হয়ে হিটলারের জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।

মহাযুদ্ধের অব্যবহিত পরে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান ঘোষণা করেন যে, ইউরোপের বন্ধুদেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনে সাহায্য করবে আমেরিকা। মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই ঘোষণা ‘ট্রুম্যান ডকট্রিন’ নামে পরিচিত। এই নীতি রূপায়নের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্শাল পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের জন্য ব্যাপক মার্কিন অর্থ সাহায্য বরাদ্দের ঘোষণা করেন, যা ‘মার্শাল প্ল্যান’ নামে খ্যাত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরোপে মার্কিনিদের প্রভাব বিস্তারের পন্থা বলে অভিহিত করে এবং মার্কিন-সোভিয়েত মতবিরোধ শুরু হয়। একই সময় যুদ্ধোত্তর জার্মানির ভবিষ্যৎ নিয়েও দুই দেশের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হলে উভয় শক্তির অধীনে জার্মানি দ্বিখণ্ডিত হয়। জার্মানির পশ্চিম অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স দখল করে আর পূর্বাঞ্চল সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে আসে। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া প্রভৃতি দেশের উপর সোভিয়েত দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পর পশ্চিম ইউরোপের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং পূর্ব ইউরোপের উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। ফলে ইউরোপ মতাদর্শগত ও রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়। দুই পরাশক্তির নেতৃত্বে ইউরোপের এই বিভাজন অচিরেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বে মার্কিন ও সোভিয়েত পন্থী দুটি ক্ষমতা বলয় তৈরি হয়। দ্বিমেরুর এই বিশ্ব ব্যবস্থায় উভয় শক্তির প্রত্যক্ষ ইঙ্গিত ও অংশগ্রহণে শুরু হয় প্রচণ্ড উত্তেজনা ও যুদ্ধাবস্থা, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্নায়ুযুদ্ধ বা কোল্ড ওয়্যার-এর মাধ্যমে।

স্নায়ুযুদ্ধ তৈরি করেছিল ভীতিকর পরিস্থিতি, ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপকে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হলেও তা ক্রমেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ সময়কালে বিশ্ব রাজনীতিতে স্নায়ুযুদ্ধের কারণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক ঘটনা সংঘটিত হয়। ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপে কেন্দ্রীভূত স্নায়ুযুদ্ধ ১৯৫০ সালে এশিয়া মহাদেশে প্রবেশ করে কোরিয়ার যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাবাধীন উত্তর কোরিয়া ১৯৫০ সালের ২৫ জুন মার্কিন প্রভাবাধীন দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে। নভেম্বরে এশিয়ার প্রথম কমিউনিস্ট দেশ চীন উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে স্নায়ুযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। ১৯৫৩ সালে কোরিয়ায় যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হলেও এবং শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও দুই জোটের মধ্যে উত্তেজনা, সন্দেহ, যুদ্ধাবস্থা অব্যাহত থাকে।

১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরির গণঅভ্যুত্থান সামরিক শক্তি দিয়ে ব্যর্থ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তখন হাঙ্গেরিকে ঘিরে তীব্র হয় স্নায়ুযুদ্ধ। একই বছর, সুয়েজ খাল সংকটকে কেন্দ্র করে মার্কিন ও সোভিয়েত দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। খালের মালিকানা নিয়ে মিশর ও ব্রিটেন মুখোমুখি হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন মিশরের পেছনে আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনের পেছনে সামরিক সমর্থন দান করে।

১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা বিমান ইউ-২ গুলি করে সোভিয়েত ভূখণ্ডে নামানোর জেরে আবার উত্তপ্ত হয় বিশ্ব রাজনীতি। এতে সোভিয়েত নেতা ক্রুশ্চেভ ও মার্কিন নেতা আইসেনহাওয়ারের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠক ভেস্তে গিয়ে উত্তেজনার বিস্তৃতি ঘটে। একই বছর আফ্রিকার কঙ্গোতে মুখোমুখি হয় দুই বিশ্বশক্তি।

১৯৬২ সালে কিউবায় মিসাইল নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ তীব্র হয়। তারপর ভিয়েতনাম যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ ইত্যাদিতে সোভিয়েত ও মার্কিনিরা পেছন থেকে পরস্পর বিরোধী অবস্থানে লড়তে থাকে। ৭০ দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন হলে মার্কিনিরা মুজাহিদিনদের অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দেয়। সে সময় মাটিতে যুদ্ধের পাশাপাশি তারকা যুদ্ধও শুরু হয়। একদিকে থাকে মার্কিন নেতৃত্বে ন্যাটো জোট আর অন্যদিকে সোভিয়েতপন্থী ওয়ারশ জোট। বস্তুত পক্ষে, সব সময় সরাসরি না হলেও বিভিন্ন পক্ষের পেছনে থেকে মার্কিন ও সোভিয়েতরা যুদ্ধ কিংবা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে পুরো পৃথিবীতে ফেলে দেয় স্নায়ুযুদ্ধের সুদীর্ঘ সময়কালে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হয়ে ১৯৯০-এর দশকে বার্লিন ওয়াল ভেঙে দুই জার্মানির একত্রীকরণ এবং পরিশেষে খোদ সোভিয়েত ইউনিয়ন রাষ্ট্রের অবসানের ফলে ৪৫ বছর ব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। একই সঙ্গে দ্বিমেরু বিশ্বে একমেরু কেন্দ্রিক ক্ষমতা-কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃত্ব চলে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র কব্জায়। তবে পূর্বতন সোভিয়েতের উত্তরাধিকারী ও পারমাণবিক শক্তি পেয়ে রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে আসে। দুই জার্মান এক হয়ে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। চীন আর্থিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম স্থানে চলে আসার অবস্থাও তৈরি হয়।

ফলে স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর মার্কিন নেতৃত্ব অটুট থাকলেও বিশ্বে বেশ কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে এবং দেশগুলো নানা ইস্যুতে একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে পুরনো আরব-ইসরায়েল লড়াইয়ের জায়গা নিয়েছে ইরান ও সৌদি দ্বন্দ্ব। এতে সেখানকার ইসলামি দেশগুলো শিয়া ও সুন্নি ইসলামের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র লড়াই করছে। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান চার জাতিগোষ্ঠী, আরব, ইরানি, তুর্কি ও কুর্দিরা নিজস্ব কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পারিক লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌদি জোটের পেছনে আর রাশিয়া ও চীন ইরানের পেছনে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, ২০২০ সালের শুরুতেই মার্কিনিরা ইরানি জেনারেল সুলাইমানিকে হত্যা করে দৃশ্যপটে সরাসরি চলে এসেছে। পারস্য উপসাগরীয় দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটি থেকে মার্কিনিরা অস্ত্র ও কৌশলগত সাহায্য দিচ্ছে নিজের পক্ষের দেশ ও গোষ্ঠীকে।

ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নানা পরাশক্তি ও গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে এক ‘ছায়াযুদ্ধ’, যাকে অনেক বিশ্লেষক স্নায়ুযুদ্ধের ফিরে আসার সঙ্গে তুলনা করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যেভাবে মুখোমুখি অবস্থান, সামরিক উত্তেজনা, হুমকি-ধমকি ও প্রকাশ্য-গোপন লড়াই চলেছিল, ঠিক তেমনি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে। প্রতিদিন সেখানে বোমাবাজি-গুলি হচ্ছে, একদল আরেক দলকে অকাতরে মারছে, হাজার হাজার ঘর-বাড়ি-শহর-জনপদ পুড়ছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে শিবিরে শিবিরে মানবেতর ও নিরাপত্তাহীন জীবন কাটাচ্ছে।

এই ভয়ংকর রক্তাক্ত পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে নানা দেশ ও শক্তির হাত। স্নায়ুযুদ্ধের আমলের মতোই নেপথ্যে থেকে চালানো হচ্ছে রাজনৈতিক চাল ও সামরিক অভিযান। এর মাধ্যমে পৃথিবীর মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভীতিকর স্নায়ুযুদ্ধের স্মৃতি। একই সাথে সর্বত্র এই আশংকা তৈরি হয়েছে যে, আবার যেন ফিরে এসেছে আতঙ্কময় স্নায়ুযুদ্ধের কাল!

   

বেইজিংয়ে ঐক্য সংলাপে বসছে ফাতাহ-হামাস



আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বেইজিংয়ে ঐক্য সংলাপে বসতে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনের দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ও ফাতাহের প্রতিনিধিরা। শিগগিরই এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন হামাস ও ফাতাহর নেতৃবৃন্দ এবং চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐক্য সংলাপে বসার উদ্দেশে ফিলিস্তিনের দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ও ফাতাহের প্রতিনিধিরা শুক্রবার বেইজিংয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সংলাপে ফাতাহের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন গোষ্ঠীটির জ্যেষ্ঠ নেতা আজাম আল আহমেদ, আর হামাসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন ওই গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতা মুসা আবু মারজুক।

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী দেখতে চাই এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যেসব রাজনৈতিক পক্ষ সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য স্থাপন করতে চায়, তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ওয়াং কেজিয়ান হামাসের প্রেসিডেন্ট ইসমাঈল হানিয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে সময় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই শান্তি সংলাপের প্রস্তাব দেন ওয়াং কেজিয়ান এবং হানিয়েও তাতে সম্মতি দেন।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ওয়াং ওয়েনবিন জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের প্রতিপক্ষ দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য স্থাপনই সংলাপের মূল উদ্দেশ্য।

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী চীনের এ বিষয়ে অতীত সাফল্যের রেকর্ড রয়েছে। ২০২৩ সালে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে নেতৃত্ব দিয়েছিল বেইজিং। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই নেতৃস্থানীয় দেশের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছিল।

;

ব্রাজিলে গেস্টহাউসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১০



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দক্ষিণ ব্রাজিলের পোর্তো অ্যালেগ্রে শহরে গৃহহীনদের অস্থায়ী আশ্রয় হিসাবে ব্যবহৃত একটি গেস্টহাউসে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আগুন লেগে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ড এবং হতাহতের খবর রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা।

রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল রাজ্যের ফায়ার বিভাগ বলেছে, উদ্ধারকর্মীরা সেখান থেকে ১০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে।

রিও গ্র্যান্ডে ডো সুল রাজ্যের ফায়ার বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ক্ষতিগ্রস্তদের সনাক্ত করতে এবং আগুনের কারণ অনুসন্ধান করতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।

রাজ্যের গভর্নর এডুয়ার্ডো লেইট বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর তাকে গভীরভাবে বিচলিত করেছে।

তিনি এক্স-এ লিখেছেন, ‘ফায়ার ডিপার্টমেন্ট আগুন নেভাতে পাঁচটি ট্রাক এবং কয়েক ডজন অগ্নিনির্বাপক কর্মী প্রেরণ করেছে।’

তিনি আর লিখেছেন, ‘আমরা এই ট্র্যাজেডির কারণ অনুসন্ধানে কাজ চালিয়ে যাব। নিহতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা।’

ব্রাজিলের মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, তিন তলা ভবনটি আগুনে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে এবং য়ায়ার সার্ভিসকর্মীরা আগুন নেভানোর জন্য লড়াই করছে।

মেয়র সেবাস্তিয়াও মেলো এক্স-এ লিখেছেন, একাধিক আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আহতদের সংখ্যা ১১ জন বলে জানানো হয়েছে।

;

ছয় বছরে বিজেপির গুগলে বিজ্ঞাপন খরচ ১০০ কোটি রুপি



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গুগল এবং ইউটিউবে ১০০ কোটি রুপির বেশি বিজ্ঞাপন দিয়েছে বিজেপি। এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতে এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দল এত টাকার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দিল।

২০১৮ সালের মে মাস থেকে বিজ্ঞাপনের ‘ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট’ প্রকাশ করেছে গুগল। তাতে দেখা গেছে, কংগ্রেস, ডিএমকে, রাজনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি (আই-প্যাক) মোট যত টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তারচেয়ে বেশি টাকার বিজ্ঞাপন একাই দিয়েছে বিজেপি। সেটি ১০১ কোটি রুপিও বেশি।

ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ৩১ মে থেকে ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত গুগলে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে যত খরচ করা হয়েছে, তার ২৬ শতাংশই করেছে বিজেপি। ছয় বছরে মোট ৩৯০ কোটি রুপি খরচ করা হয়েছে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনে।

গুগলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বলতে শুধু রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞাপনকেই বোঝায় না। এই তালিকায় রয়েছে সংবাদ মাধ্যম, সরকারের প্রচার বিভাগ, এমনকি রাজনীতিক, অভিনেতাদের দেওয়া বিজ্ঞাপনও।

গুগলের পরিসংখ্যান বলছে, ছয় বছরে দুই লাখ ১৭ হাজার ৯৯২টি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এক লাখ ৬১ হাজারটি বিজেপির।

এর মধ্যে আবার দলের সব থেকে বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে কর্নাটকের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্য করে। কর্নাটকের বাসিন্দাদের উদ্দেশে গুগলে প্রকাশ করা হয় ১০ কোটি ৮০ লাখ রুপির বিজ্ঞাপন। তার পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ।

সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য ১০ কোটি ৩০ লাখ টাকার বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। তারপরের স্থানে রয়েছে রাজস্থান ও দিল্লি। এমনিতে গুগলে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে তামিলনাড়ুর উদ্দেশে। তারপরে রয়েছে তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ।

গুগলে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজেপির পর রয়েছে কংগ্রেস। ছয় বছরে ৪৫ কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা। এই সময়ে মোট ৫,৯৯২টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে তারা। তাদের লক্ষ্য ছিল মূলত কর্নাটক এবং তেলঙ্গানা। দুই রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্যই ৯.৬ কোটি রুপি করে খরচ করেছে কংগ্রেস। মধ্যপ্রদেশের জন্য ৬.৩ কোটি রুপি খরচ করেছে।

কংগ্রেসের পর রয়েছে ডিএমকে। গুগলে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন দেওয়ার নিরিখে তারা তৃতীয় স্থানে। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে গুগলে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৪২ লাখ রুপি খরচ করেছে তারা। তার মধ্যে ১৬.৬ কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা সংস্থা।

তামিলনাড়ুর বাইরে কর্নটকে ১৪ কোটি রুপি এবং কেরলে ১৩ কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিয়েছে এমকে স্ট্যালিনের দল। ভারত রাষ্ট্রসমিতি (বিআরএস) ২০১৩ সালের নভেম্বরে তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনের সময় ১২ কোটি রুপি খরচ করেছে। আইপ্যাক তৃণমূলের জন্য পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে গুগলে ৪.৮ কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিয়েছে।

লোকসভার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগে গুগলে বিজ্ঞাপন দিতে রাজনৈতিক দলগুলো যে পরিমাণ টাকা খরচ করেছে, তা জানলে বিস্মিত হতে হয়।

এ ক্ষেত্রে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে কংগ্রেস। ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল কংগ্রেস গুগলে ৫.৭ কোটি রুপির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আর বিজেপি দিয়েছে ৫.৩ কোটি রুপির।

;

ক্যাম্পাসের বিক্ষোভ আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য: অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন



আন্তর্জাতিক ডেস্ক বার্তা২৪.কম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোতে ছড়িয়ে পড়া ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।’

তবে, তিনি ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে দেশটির শিক্ষার্থীদের নীরবতার সমালোচনা করেছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

এদিকে, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কখনও কখনও রাসায়নিক টেজার ব্যবহার করছে। ফলে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে।

বিক্ষোভকে স্তব্ধ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বড় আকারের গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে দেশটির পুলিশ।

চীনের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একদিনের বৈঠকের পর বেইজিংয়ে বক্তৃতাকালে ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘এই ধরনের বিক্ষোভ আমাদের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নাগরিকরা যেকোনো সময় তাদের মতামত, উদ্বেগ এবং ক্রোধ প্রকাশ করতে পারে, যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে চীন।’

ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ধরনের বিক্ষোভ একটি দেশের শক্তিকে প্রতিফলিত করে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদকারীরা হামাসের নিন্দা করেনি, যারা গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অভূতপূর্ব হামলা চালিয়েছিল।’

গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, যুদ্ধ গতকাল শেষ হতে পারতো, এটি আগামীকালও শেষ হতে পারে। যদি হামাস তার অস্ত্র নামিয়ে বেসামরিকদের পেছনে লুকিয়ে থাকা বন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তি দেয়। তবেই শান্তি ফিরবে।’

তিনি বলেন, ‘তবে হামাস সেটি না করে যুদ্ধের পথ বেছে নিয়েছে।’

;