করোনার প্রভাবে মিয়ানমারের বৈদেশিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রভাবে মিয়ানমার বাণিজ্য কৌশল বদলে ফেলার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। কারণ মিয়ানমারের বিভিন্ন পণ্য চীনে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি চীনে করোনাভাইরাসের কারণে মিয়ানমারের পণ্য রফতানিতে ধস নেমেছে। এর ফলে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ৬২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে যেতে পারে। যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। তাই বিকল্প বাজার খুঁজতে দেশটি আসিয়ান মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে (এএফটিএ) অংশ নেবে।

এএফটিএ’র অধীনে মিয়ানমার আশা করছে তালিকাভুক্ত পণ্য আমদানির শুল্ক শূন্য থেকে ৫ শতাংশের বেশি হবে না

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমারের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ইউ অং এইচু বলেছেন, এএফটিএর কারণে কাস্টমে শুল্ক প্রায় শূন্য হবে এবং এর ফলে আসিয়ান দেশগুলো ইতিমধ্যে মিয়ানমারে আরও পণ্য রফতানির সুযোগ পাবে। স্থানীয় উৎপাদনকারীরা যাতে হুমকির সম্মুখীন না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা আমদানি সুরক্ষা আইন করেছি। আমদানি সুরক্ষা আইন মিয়ানমারকে আমদানিকৃত পণ্যগুলোর উপর তিন বছরের জন্য শুল্ক বাড়ানোর অধিকার দেয় যা স্থানীয় উৎপাদনকারীদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে।

অন্যদিকে, মিয়ানমারও এএফটিএ থেকে সুবিধা পাবে, আসিয়ানের মধ্যে রফতানি করার কারণে তারাও নিম্ন শুল্ক উপভোগ করবে। এই কারণে মিয়ানমার ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় রফতানি কৌশল (এনইএস) চালু করেছে।

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় এনইএসের আওতায় রত্ন ও গহনা, কৃষিভিত্তিক খাদ্য পণ্য, বস্ত্র ও পোশাক, যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মৎস্য ও বনজ এবং ডিজিটাল-ছয়টি সেক্টরকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে যুক্ত করেছে।

ডিজিটাল পণ্য, রসদ, মান নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য তথ্য এবং উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা এই পাঁচটি পরিষেবা খাতকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গঠনের জন্য একটি কাঠামোর আওতায় প্রয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউ অং এইচু।

বাণিজ্য প্রচার অধিদফতরের মহাপরিচালক ইউ অং সো বলেন, বেসরকারি খাতে উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে আরও অনেক কিছু করা দরকার। গণ উৎপাদন হলে রফতানি এবং স্থানীয় কারখানার জীবনযাত্রা এবং বেসরকারি খাতের অপারেশনাল দক্ষতা, প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

আগামী পাঁচ বছরে, আমরা রফতানিকারীদের জন্য কর্ম পরিকল্পনা করব এবং বিশেষত অর্থায়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ব্যবস্থা করব বলে তিনি জানান।

তিনি আরও যোগ করেন, রফতানি ক্রমবর্ধমান অব্যাহত রাখতে উৎপাদন মাত্রা বাড়ানো দরকার। এটি করার জন্য, আরও ভালো সরবরাহ এবং অবকাঠামোর প্রয়োজন। খামার থেকে পণ্য বহন ও সংরক্ষণের জন্য রাস্তা, গাড়ি বা গুদাম না থাকলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং দাম বেশি হবে। এটি আমাদের প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলবে। রসদ ইস্যু সমাধান করা আবশ্যক বলে তিনি জানান।

এদিকে, ইউ অং এইচু বলেন, মিয়ানমারের প্রধান কৃষিজাত অঞ্চল থেকে রফতানি করার জন্য আমাদের আরও প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে, কারণ এখন প্রচুর চাল, শিম, ভুট্টা এবং চিনি চীন ও ভারতে রফতানি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য নীতির ত্রুটিগুলো আগামী পাঁচ বছরে পুনরাবৃত্তি হবে না তা নিশ্চিত করে সরকারকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও অর্থায়নে বিনিয়োগ করতে বলেছে। মিয়ানমারের বাণিজ্য মন্ত্রকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনের সঙ্গে সীমান্ত বাণিজ্যে প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন ডলারের সমতূল্য হারাচ্ছে।

শান ও কাচিন রাজ্যের সীমান্ত বাণিজ্য অঞ্চলে ২৭ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চীনে রফতানি ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হ্রাস পেয়েছে, বাণিজ্যসচিব খিন মাং লুইন মিয়ানমার সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

মিয়ানমার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের পরিচালক থেট লুইন ওও বলেন, বাণিজ্য শূন্য হয়ে গেছে কারণ চীনের অভ্যন্তরে সে দেশের নাগরিকরা ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্রমণের বিধিনিষেধের কারণে সীমান্তে আসতে পারছেন না।

এদিকে মিয়ানমার ব্যবসায়ীদের চীনের ভিসা দেওয়া হচ্ছে না বলে মিয়ানমার রাইস প্রোডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সেন উইন হ্লেইং জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব চালের বাজারকেও প্রভাবিত করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় ধানের বাণিজ্য চুক্তির পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়েছে বলে জানান তিনি। সরকারি হিসেবে চীন ও মিয়ানমার সীমান্তে প্রতিমাসে বাণিজ্য হয় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের।

অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে চীন মিয়ানমার থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে এবং ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের মূল্য রফতানি করে।

খিন মাউং লুইন বলেছেন যে এখন চীনা পক্ষের কোনও ক্রেতা নেই বলে মন্ত্রণালয় নতুন রফতানি বাজারের সন্ধান করছে। আমরা কিছু ফল সমিতি ও সিঙ্গাপুরের বিপণনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পশু সম্পদ বাণিজ্যের জন্য, আমরা লাওসের সঙ্গে কাজ করছি।

তবে, তিনি বলেন এই জাতীয় পদক্ষেপগুলো কেবলমাত্র একটু সহায়তা করতে পারে কিন্তু চীনের মত একই পরিমাণে সেসব দেশে রফতানি করা কঠিন।

করোনাভাইরাস সঙ্কট বেশ কয়েক মাস অব্যাহত থাকলে ব্যবসার জন্য মারাত্মক পরিণতি হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।

কাঁকড়া মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য তুন লিন সো বলেন, চীনের বাজারের উপর নির্ভরশীল মাছ ব্যবসায়ীরাও এই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। মিয়ানমার নিয়মিতভাবে ৪০ টন সমুদ্রের কাঁকড়া এবং ৫০ টন মাছ চীনে পাঠায়।