নাৎসি বাহিনীর লুট করা সম্পদ রয়েছে সুইস ব্যাংকে
১৯৩০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় প্রায় ১২ হাজার হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সদস্য বাস করত। আর তাদের অনেকেরই সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ছিল। যেখানে ইহুদিদের থেকে লুটকৃত সম্পদ রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইমন উইসেন্থাল সেন্টারের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে সুইজারল্যান্ডের ক্রেডিট সুসিকে সুপ্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো শনাক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছে।
সাইমন উইসেন্থাল সেন্টার থেকে জানানো হয়, আমরা বিশ্বাস করি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকা এসব অ্যাকাউন্টে ইহুদিদের কাছ থেকে লুট করা অর্থ রয়েছে। এছাড়া আর্জেন্টিনার বুয়েন্সের নাৎসি বাহিনীর হেডকোয়ার্টারের স্টোররুম থেকে কাগজগুলো পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
১৯৩৫ সালে জার্মানের নাৎসি সরকার বর্ণবাদী আইন জারি করে ইহুদিদের সম্পত্তি দখল ও ১৯৪০ এর সালে হোলোকাস্টের (ইহুদিদের গণহত্যা) সময় প্রচুর পরিমাণ অর্থ চুরি করে। আর এই সম্পত্তির বেশিরভাগই সুইস ব্যাংক রাখা হয়।
এক চিঠিতে সাইমন উইসেন্থাল সেন্টার ক্রেডিট সুসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান কাং কে জানান, তালিকায় থাকা নাৎসিদের উত্তরাধিকারদের থাকার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আর্জেন্টিনার তালিকায় থাকা অনেক নাৎসির সুইজারল্যান্ডের স্কুজেরিস্কে ক্রেডিট্যান্সট্যাল্টে এক বা একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল। যা পরবর্তীতে ক্রেডিট সুসি নাম ধারণ করেছে।
১৯৩০-১৯৩৮ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জোস ফেলিক্স উরিবুরু এবং অগাস্টিন পেড্রো জাস্টো। তাদের নেতৃত্বে দেশটিতে নাৎসি সামরিক শাসন জারি ছিল। কিন্তু ১৯৩৮ সালে একটি স্পেশাল কমিশন নাৎসি বাহিনীর বিরোধী রবার্তোকে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট পদে বসান।
তবে ১৯৪৩ সালে মিলিটারি শাসনের মাধ্যমে নাৎসি বাহিনীর ফের আর্জেন্টিনার ক্ষমতায় আসে। ওই সময় কমিশনগুলো নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রমাণাদি পায় যা সবই আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি আর্জেন্টিনার তদন্তকারী পেদ্রো ফিলিপাজ্জি বার নাৎসিদের একটি আসল তালিকা খুঁজে পেয়েছেন।
ক্রেডিট সুসির এক বিবৃতির বরাতে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, ১৯৯৭-১৯৯৯ সালের ভোলকার তদন্তের সঙ্গে মিল রেখে নাৎসি বাহিনীর সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টগুলোর শনাক্ত করতে সহযোগিতা ক্রেডিট সুসি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি দেশ নাৎসিদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল। এর মূল কারণ স্বৈরশাসকরা তখন ওই দেশগুলো পরিচালনা করত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত নাৎসি বাহিনীর অনেক দাগী আসামি দক্ষিণ আমেরিকায় পালিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে হোলোকাস্টের মূল সংগঠক অ্যাডলফ আইচম্যানও ছিলেন। ১৯৬০ সালে ইসরায়েলি গোয়েন্দারা তাকে আর্জেন্টিনা থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং ১৯৬২ সালে জেরুজালামে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।