জলবায়ু পরিবর্তন: দশকের মধ্যেই শেষ ধ্বংস হতে পারে বাস্তুসংস্থান!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: আল জাজিরা

ছবি: আল জাজিরা

বিশ্বের বৃহত্তম রেইনফরেস্ট আমাজনের থেকেও বড় বাস্তুসংস্থান কয়েক দশকের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা জানান, পূর্বের অনুমানের চেয়ে অনেক দ্রুত ভেঙে পড়ছে বাস্তুসংস্থান। আর এ ভাঙন এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

সম্প্রতি সাইন্টিফিক জার্নাল কমিউনিকেশনসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

বিজ্ঞাপন

৪০টিরও বেশি বাস্তুসংস্থানের ওপর সমীক্ষা চালানোর পর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ছোট বাস্তুসংস্থান থেকে বড় বাস্তুসংস্থানগুলো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কোরাল রিফগুলোর (প্রবালদ্বীপ) বাস্তুসংস্থান দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে সমস্ত কোরাল রিফ নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। এছাড়া আমাজন রেইনফরেস্টের আকার ৫০ বছরের মধ্যে কমে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে গবেষকরা জানান, জলবায়ু ও বাস্তুসংস্থান নিয়ে কাজ করার জন্য বিশ্ব নেতারা যতটুকু সময় পাওয়ার আশা করছেন, ততটা সময় পাওয়া যাবে না।

বিজ্ঞাপন

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ুর ক্ষতির কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এছাড়া পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন ও কোরাল রিফগুলো দূষিত করায় বাস্তুসংস্থানগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানান গবেষকরা।

ছবি: আল জাজিরা

জাতিসংঘের জলবায়ু বিজ্ঞানের উপদেষ্টা প্যানেল (আইপিসিসি) আগে থেকেই জানিয়ে আসছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সাগরের অগভীর অংশের ৯০ শতাংশ কোরাল নষ্ট হয়ে যাবে। আর যদি ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তাহলে সমস্ত কোরাল মারা যাবে। ইতিমধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রায় ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমাজনের ক্ষেত্রে শেষ পর্যায়টি নির্দিষ্ট নয়। তবে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছে যে, ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে আমাজনের ৩৫ শতাংশ অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে গবেষণাটির প্রধান লেখক বানগোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল সাইন্সের শিক্ষক সাইমন ইউলকোক ইতিমধ্যে উল্লেখ করে বলেছেন যে, আমাজন ও অস্ট্রেলিয়ায় যে অপ্রতিরোধ্য দাবানলগুলো দেখা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। আর এর ফলে বাস্তুসংস্থান চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে বাস্তুসংস্থানের ক্রমহ্রাসমান অবস্থার বিষয়ে সতর্ক করছেন। তবে বৃহত্তর বাস্তুসংস্থানগুলোর আকারের কারণে এগুলো স্থিতিস্থাপক বলে ধারণা করা হত। তবে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে যে, ছোটগুলোর থেকে বড় বাস্তুসংস্থানগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। এমনকি এই সিস্টেমগুলো ভেঙ্গে যেতে পারে ও বাস্তুসংস্থানগুলো অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।

সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক ভূগোলের অধ্যাপক এবং এই প্রতিবেদনের শীর্ষস্থানীয় লেখক জন ডিয়ার্ডিং বলেন, আমাদের প্রতিবেদনে সম্পন্নরুপে বার্তাটি রয়েছে। আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্র খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা দরকার। আমরা পূর্বে যতটুকু কল্পনা করেছিলাম তার থেকে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে।

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মোট ৪২টি বাস্তুতন্ত্রের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে ৪টি স্থলজ, ১৩টি মিঠাপানির ও ২৫টি সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত রয়েছে।