ডারবানের শতবর্ষী মসজিদে আগুন

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ডারবানের শতবর্ষী মসজিদে আগুন, ছবি: সংগৃহীত

ডারবানের শতবর্ষী মসজিদে আগুন, ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ আফ্রিকার তৃতীয় জনবহুল শহর ডারবান। চমৎকার জলবায়ু এবং দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত থাকার কারণে শহরটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। এখানে ব্রিটিশ ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকের সংখ্যা বেশি। সেই ডারবান শহরের ১৩৯ বছরের ঐতিহাসিক গ্রে স্ট্রিট মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ গোলার্ধের বৃহত্তম মসজিদগুলোর অন্যতম বড় মসজিদ এটি।

সোমবার (২৪ আগস্ট) এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও আগুনের উৎস সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তবে, সাউথ আফ্রিকান মুসলিম নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান ফয়সাল সুলাইমান বলেন, মসজিদের কর্মচারীদের থাকার জন্য মসজিদের ওপরে রুম ফ্ল্যাট রয়েছে, সম্ভবত সেখান থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার ঘটনাকে দুর্ঘটনা মনে করা হচ্ছে। অনেকে অবশ্য নাশকতা বলেও সন্দেহ করছেন। আগুনে হতাহতের কোনো ঘটনা জানা যায়নি।

আল জাজিরার টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনতলা মসজিদটির ওপরের তলা থেকে আগুনের শিখা বের হচ্ছে। মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অগ্নিনির্বাপনকারী সংস্থার সদস্যরা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।

বিজ্ঞাপন

জরুরি সেবা সংস্থার মুখপাত্র রবার্ট মেকেনজি এএফফিকে বলেছেন, আগুনে মসজিদ লাগোয়া আরও তিনটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মধ্য ডারবানের এ মসজিদটিতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম হয়, এখানে একসঙ্গে সাত হাজারের মতো মুসল্লির নামাজ আদায় করতে পারেন।

ঐতিহাসিক এ মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী নেতা নেলসন মেন্ডেলা, ব্রিটিশ কণ্ঠশিল্পী ইউসুফ ইসলাম (যিনি কেট স্টিভেনস নামে বেশি পরিচিত) ও বক্সিং সুপারস্টার মোহাম্মদ আলী।

দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকা মহাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২ লাখ ২১ হাজার ৩৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটির জনসংখ্যা ৫৫ মিলিয়ন। মুসলমানদের সংখ্যা দুই মিলিয়নের কিছু কম।

মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, রাজনৈতিক প্রভাব আর অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমানদের পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সংখ্যালঘু মুসলমান বলা হয়। তারা দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রচুর ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন, যা অনেক মুসলিম দেশে কল্পনাও করা যায় না।

জোহানেসবার্গ, কেপটাউন আর ডারবানে রয়েছে মুসলিম মালিকানাধীন ও টিভি স্যাটেলাইট রেডিও। ডেইলি মুসলিম নিউজ, আল কলম পত্রিকাসহ দৈনিক ডজনখানেক পত্রিকা প্রকাশিত হয় মুসলমানদের সম্পাদনায়। অনলাইন মাধ্যমেও মুসলমানরা অনেক এগিয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ৫০০ মসজিদ, ৩০টি ইসলামিক সেন্টার ও দেওবন্দি ধারার ৮৫টি বিভিন্ন ধরনের ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া প্রায় মসজিদেই রয়েছে ইসলামি বিষয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা।

বর্তমান সংসদে ২২জন মুসলিম প্রতিনিধি রয়েছেন। ১৯৯৪ সালের প্রথম জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারে চারজন মুসলমান মন্ত্রীত্ব পান। সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুসলমানদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। সংগ্রামী মুসলিম নেতাদের নামে অনেকগুলো জাতীয় সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। শরিয়াভিত্তিক মুসলিম পরিবার আইনকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম মসজিদের নাম আওয়াল মসজিদ। যা আজ থেকে প্রায় তিনশ’ বছর পূর্বে নির্মিত হয়। আওয়াল মসজিদের প্রথম ইমাম ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে আবদুস সালাম।

-আল জাজিরা অবলম্বনে