‘সীমিত পর্যায়ে’ পবিত্র উমরা শুরুর আভাস

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা, ছবি: সংগৃহীত

প্রথমে সৌদি আরবে বসবাসকারীরা নির্দিষ্ট শর্তপূরণ সাপেক্ষে পবিত্র উমরা পালনের অনুমতি পাবেন। এর পর ধীরে ধীরে বিদেশিরা। তবে সেটাও হবে, সীমিত পর্যায়ে এবং সীমিত সংখ্যায়।

রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি সাপেক্ষে সীমিত পর্যায়ে উমরা পালনের অনুমতি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেক্ষেত্রে প্রথমে স্থানীয়রা (সৌদি আরবে বসবাসকারী) পরে ভিনদেশিরা অনুমতি পাবেন। হারামাইন শরিফাইন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সৌদি গেজেটের সংবাদে বলা হয়েছে, স্থানীয়দের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, উমরা পালনের সময়, তারিখ উল্লেখ করে ‘উমরা পারমিট’ দেওয়া হবে। তবে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত ঘোষণা ও পরিকল্পনা, উমরা শুরুর তারিখ সম্পর্কে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।

রোববার সৌদি সরকার আরও জানিয়েছে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সদস্যভুক্ত দেশের (কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব) নাগরিকরা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি আরবে যাতায়াত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাদের ভ্রমণের ৪৮ ঘন্টার মধ্যের করোনাভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব দেশের এক্সিট এবং রি-এন্ট্রি ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, রেসিডেন্স পারমিট ও ভিজিট ভিসাধারীরা এই সুযোগ পাবেন।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়া সৌদি আরবের নাগরিকরা বিশেষ কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কাজ, পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকলে, বিদেশে শিক্ষা এবং চিকিৎসাসহ কয়েকটি জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন সৌদি নাগরিকরা।

২০২১ সালের ১ জানুয়ারির পর সৌদি আরব নাগরিকদের জন্য জল, স্থল ও বিমান পথে চলাচলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চ থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করে সৌদি আরব।

এদিকে সৌদি আরবের অংশিক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালুর ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এখন যে কেউ সৌদি আরব যেতে কিংবা আসতে পারবেন। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। নির্দিষ্ট দেশের, নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকেরাই আপাতত এ সুবিধা পাবেন। বর্তমানে অনুমতি নিয়ে চার্টার্ড কিংবা বিশেষ ফ্লাইট চলাচল করছে। এখনও সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।

সৌদি আরবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ জনের।

বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সৌদি আরব করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে উমরা বন্ধ করে দেয়। তবে মসজিদে হারামে সীমিত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে জুমা ও জামাত চালু রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অল্পসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজ পালন করেছেন।

হজ শেষে ধারণা করা হচ্ছিল, উমরার কার্যক্রম শুরু করবে দেশটি। কারণ, ৪ আগস্ট দেশটির হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. হুসাইন আল শরিফ সৌদি গেজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিগগিরই উমরা কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে সৌদি সরকার।

ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, হজ মন্ত্রণালয় শিগগির উমরার প্রস্তুতি পর্ব শুরু করতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসরোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদ্য সমাপ্ত হওয়া হজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উমরার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

সেই থেকে অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী, কবে থেকে শুরু হবে উমরা। বিশেষ করে বাংলাদেশি মুসলমানরা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজ ও উমরা পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এ কার্যক্রমে জড়িত বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ধাপে ধাপে উমরা কার্যক্রম চালুর পর বিদেশিরা উমরার সুযোগ পেলে এজেন্সিগুলোর দুর্দিন কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সাধারণত প্রতি বছর হজের পর মহররমের মাঝামাঝি থেকে পবিত্র উমরা কার্যক্রম চালু করে সৌদি আরব। পবিত্র রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত উমরা ভিসা প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ থেকে বছরে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

করোনার কারণে আকস্মিকভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে উমরা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে ভিসা ও প্লেনের টিকিট কাটা সত্ত্বেও সৌদি যেতে পারেননি। পরে অবশ্য সংশ্লিষ্টরা টিকিটের টাকা রিফান্ড করেন।

একাধিক হজে এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন, উমরা পালনে আগ্রহী অনেকেই তাদের পাসপোর্ট এখনও এজেন্সিতে জমা দিয়ে রেখেছেন। আবার কবে উমরা ভিসা চালু হবে সে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন তারা।

উমরা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বেসরকারি দেড় হাজারের বেশি এজেন্সির চরম বিপাকে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এজেন্সির অফিসগুলো বন্ধ, তারপরও স্টাফদের বেতন, অফিস ভাড়া ও অন্যান্য খরচ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এজেন্সি মালিকরা। আপাতত উমরা চালু হলে এসব ক্ষতি কিছুটা পোষানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।