এমপি মাইজভান্ডারীর হস্তক্ষেপে নাজিরহাট মাদরাসার পরিস্থিতি শান্ত
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জামিয়া আরাবিয়া নাছিরুল ইসলাম নাজিরহাট বড় মাদরাসার শূরা কমিটির বৈঠক এবং মাদরাসার পরিচালক পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরে ফটিকছড়ির স্থানীয় সংসদ সদস্য, ধর্ম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
শনিবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে আগামী ২৮ অক্টোবর ডাকা শূরা কমিটির বৈঠক এবং মাদরাসার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মাদরাসার মুহতামিম দাবিদার মাওলানা সলিমুল্লাহ এলাকাবাসী ও ছাত্র-শিক্ষকদের উপস্থিতিতে মাদরাসার মাঠে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন উপস্থিত ছাত্রদের একাংশ মাওলানা সলিমুল্লাহকে ‘মুহতামিম মানি না, শূরা চাই, শূরা চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রদের একটি অংশ স্লোগানধারীদের সরিয়ে দিতে চাইলে উভয়পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। র্যাব-পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ছাত্রদের একাংশের দাবি, অবৈধভাবে মুহতামিম পদ দখল করে রাখা মাওলানা সলিমুল্লাহকে মাদরাসা থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শূরা কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হোক।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিরহাট মাদরাসা এলাকায় উত্তজেনা ছড়ায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এসএসপি (হাটহাজারী সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মাসুমের নেতৃত্বে পুলিশ সতর্ক অবস্থান নেয়।
সন্ধ্যার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী মাদরাসায় যান। তিনি নাজিরহাট মাদরাসার শূরা সদস্য আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান, সিনিয়র শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ছাত্রদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
পরে নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবকে মুরব্বি মেনেছি। তারা যেদিন শূরা বৈঠক বসাবেন আমি প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিয়ে তা সম্পন্ন করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করবো- ইনশাআল্লাহ্।
তিনি আরও বলেন, শূরা সদস্য এবং মাদরাসার ছাত্রদের শিক্ষকদেরকে বহিরাগতদের হামলা থেকে নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। আর শূরাসহ অভ্যন্তরীণ বিষয় দেখা-শুনা ও সার্বিক পরিস্থিতি দেখাশোনা করবেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তিনি যদি কালকে শূরার বৈঠক বসাতে চান, কালকেই ব্যবস্থা করবো। তিনি যেদিন বলবেন সেদিন করবো। তবে মাদারাসার ভেতরগত বিষয়ে আমি কিছু বলবো না।
আলোচনা-পর্যালোচনা করে আগামী সোমবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় শূরার বৈঠকের ঘোষণা দেন আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী।
শূরা বৈঠক পর্যন্ত বহিরাগতদের আক্রমণ থেকে শিক্ষক-ছাত্রদের নিরাপত্তা ও সার্বিক দেখভাল করবে স্থানীয় এমপির তত্বাবধানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ। এই দুই দিন মাদরাসার ভেতরে ও বাহিরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলেও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন আল জামিয়াতুল আরাবিয়া নাছিরুল ইসলামের (নাজিরহাট বড় মাদরাসা) পরিচালক আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইদ্রিস ইন্তেকাল করলে সহকারী পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিমের দায়িত্ব দেয় শূরা কমিটি। পরবর্তিতে মাদরাসার শূরা সদস্য হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক মরহুম আল্লামা আহমদ শফী মাওলানা সলিমুল্লাহকে ওই মাদরাসার মুহতামিম ঘোষণা করলে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমানসহ শূরার অন্য সদস্যরা তা মেনে নেননি।
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে মাদরাসাজুড়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদ্যমান জটিলতা নিরসনে ফটিকছড়ির এমপি পরে নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারী বাবুনগর মাদরাসায় আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সঙ্গে বৈঠক করে আগামী ২৮ অক্টোবর শূরা কমিটির বৈঠকের দিন নির্ধারণ করেন। সেমতে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী শূরার বৈঠক ডাকেন।