বরকতের নামাজ আওয়াবিন
হাদিসে কুদসিতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একপর্যায়ে সে আমার মাহবুব ও ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়।’ -সহিহ বোখারি: ২/৯৬৩
নফল ইবাদতের মধ্যে নফল নামাজ আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত নামাজের বাইরেও কিছু নফল নামাজ রয়েছে। এর অন্যতম হলো- আওয়াবিনের নামাজ।
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মাগরিবের ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর যে নফল নামাজ পড়া হয়- তাকে আওয়াবিন নামাজ বলে।
আওয়াবিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। হাদিসে ‘সালাতুল আওয়াবিন’ নামে এই নামাজের উল্লেখ করা হয়েছে। মাগরিবের নামাজের পর আওয়াবিনের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং এশার আগ পর্যন্ত তার সময় বাকি থাকে।
মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির (রহ.) থেকে বর্ণিত একটি মুরসাল হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজি ব্যক্তি যে নামাজ পড়ে একে সালাতুল আওয়াবিন (আওয়াবিনের নামাজ) বলে।’ -জামে সগির: ২/৪২৭
হাদিসে আওয়াবিন নামাজের অনেক ফজিলত, মাহাত্ম্য ও বরকতের কথা বর্ণিত হয়েছে। সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ গোনাহ মাফ হয় এ নামাজের মাধ্যমে।
হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মাগরিবের নামাজের পর যে ব্যক্তি ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে তার গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।’ -মাজমাউজ জাওয়াইদ: ৩৩৮০
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর এ নামাজ পড়বে তার মর্যাদা জান্নাতের উঁচু স্থানে হবে।’ -ইতহাফুস সাদাহ: ৩/৩৭১
১২ বছরের ইবাদতের সমান সওয়াবের সুসংবাদ রয়েছে আওয়াবিন নামাজে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পরে ছয় রাকাত নফল আদায় করে, মাঝখানে কোনো দুনিয়াবি কথা না বলে, তাহলে সেটা ১২ বছরের ইবাদতের সমান গণ্য হবে।’ -তিরমিজি: ১/৫৫৯
নিয়মিত আওয়াবিন পড়লে বেহেশতে ঘর তৈরি করা হয়। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নফল নামাজ পড়বে আল্লাহতায়ালা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর প্রতিষ্ঠিত করবেন (অর্থাৎ সে বেহেশতে যাবে)।’ -তিরমিজি: ১/৯৮
বহু হাদিসে নবী করিম এ নামাজের ফজিলতের কথা উল্লেখ করছেন। যেন মানুষ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। আওয়াবিন নামাজ কমপক্ষে ছয় রাকাত এবং সর্বাপেক্ষা বিশ রাকাত নফল নামাজ। ছয় রাকাত পড়ার সুযোগ না হলে মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত মিলিয়ে ছয় রাকাত পড়া যায়। নবী করিম (সা.) কখনও ৬ রাকাত (তিরমিজি) কখনও ৪ রাকাত (নাইলুল আওতার) কখনও ১২ রাকাত (ইতহাফুস সাদাহ: ৩/৩৭১) আবার কখনও ২০ রাকাত (তিরমিজি: ৪৩৫) পড়তেন। তবে ৬ রাকাতই অধিকাংশ সময় পড়তেন।
সাহাবায়ে কেরাম এ নামাজের প্রতি খুব গুরুত্ব দিতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় জামাত মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে এ নামাজ আদায় করতেন।’ -নাইলুল আওতার: ৩/৫৪
তাবেয়ি, তাবে তাবেয়ি ও পূর্বসূরী সবাই এর ওপর আমল করেছেন। এখনও অনেকে নিয়মিত এ নামাজ আদায় করেন। এই নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো- দুই দুই রাকাত করে তিন সালামে ছয় রাকাত আদায় করা।