সিজদার চিহ্নগুলো জাহান্নামের আগুন জ্বালাতে পারবে না

  • মো. আবদুল হান্নান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কাবা চত্বরে নামাজ পড়ছেন উমরা পালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবা চত্বরে নামাজ পড়ছেন উমরা পালনকারীরা, ছবি: সংগৃহীত

সিজদা শব্দটি আরবি, যার শাব্দিক অর্থ- নম্রতা, বিনয়, মাথানত করা, আত্মসমর্পণ করা, ঝুঁকে পড়া, চেহারা মাটিতে রাখা ইত্যাদি। পারিভাষায় আল্লাহতায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে মানুষের সাতটি অঙ্গ দ্বারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যে ইবাদত করা হয় তাকে সিজদা বলে।

সাতটি অঙ্গ বলতে আমরা সরাসরি সহিহ বোখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিদ হাদিসের মাধ্যমে জানতে পারি, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে শরীরের সাতটি হাড়; যথা- নাকসহ কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগের সাহায্যে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কাপড়, দাড়ি ও চুল একত্রিত করে বেঁধে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। -মিশকাত: ৮৮৭

বিজ্ঞাপন

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি জ্বিন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।’ -সূরা আজ জারিয়াত: ৫৬

অন্য কারও কাছে মাথা নুয়ানোর জন্য নয়। যে ব্যক্তি যে নিয়তে সিজদা দেবে, সে ওই নিয়তের ফল ভোগ করবে। আল্লাহ যখন মানুষ সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই সিজদার ব্যবস্থা করেছেন। তাই তো আল্লাহতায়ালা সব ফেরেশতাকে হজরত আদম (আ.) কে সিজদা করার জন্য আদেশ দিলেন। তখন থেকে চলে আসছে সিজদার রীতি। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার বাণী, ‘আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয় আমি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি; অতঃপর যখন আমি তাকে সুঠাম করব এবং তাতে আমার পক্ষ থেকে রূহ সঞ্চার করব তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো, অতঃপর ফেরেশতারা সবাই একত্রে সিজদা করল, ইবলিস ছাড়া, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল। আল্লাহ বলেন, হে ইবলিস! তোমার কী হলো যে, তুমি সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলে না। সে বলল, আপনি গন্ধযুক্ত কাদার শুষ্ক ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে যে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আমি তাকে সিজদা করার নই।’ -সূরা হিজর: ২৮-৩৩

বিজ্ঞাপন

ইহকালে যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেছে ও তাকে সিজদা দিয়েছে তারা সিজদা দেওয়ার প্রতিফল পাবেই। এ ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে থেকে জানা যায়। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা (সাহাবাগণ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখতে পাবো? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের কি পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে অসুবিধা হয়? সবাই বলে উঠলেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি আবার বললেন, মেঘহীন আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের কি অসুবিধা হয়? সবাই বলে উঠলেন, না, হে আল্লাহর রাসূল! তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা সেরকমই আল্লাহকে দেখতে পাবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ লোকদেরকে একত্রিত করে বলবেন, যে যার ইবাদত করছিলে সে যেন তার অনুসরণ করে। তারপর যারা সূর্যের ইবাদত করত, সূর্যের অনুসরণ করবে। যারা চন্দ্রের ইবাদত করত, তারা চন্দ্রের অনুসরণ করবে। আর যারা তাগুতদের পূজা করত, তারা তাদের অনুসরণ করবে। বাকি থাকবে এই উম্মত। এদের মধ্যে এদের সুপারিশকারীরাও থাকবে অথবা রাবি বলেছেন, মুনাফিকরাও থাকবে।

এখানে বর্ণনাকারী হজরত ইবরাহিম (রহ.) সন্দেহ পোষণ করেছেন। তারপর আল্লাহ তাদের কাছে এসে বলবেন, আমিই তোমাদের রব। তখন তারা বলবে, যতক্ষণ আমাদের রব আমাদের কাছে না আসবেন, ততক্ষণ আমরা এ স্থানেই থাকব। আমাদের রব যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারব। তারপর আল্লাহ এমন এক সুরতে তাদের কাছে আসবেন, যে সুরতে তারা তাকে চিনবে। তখন তিনি বলবেন, তোমাদের রব আমিই। তারা বলে উঠবে হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। তারপর তারা তার অনুসরণ করবে। এরপর জাহান্নামের ওপর পুল কায়েম করা হবে। যারা পুল পার হবে, আমি এবং আমার উম্মত তাদের মধ্যে প্রথম থাকব। সেদিন একমাত্র রাসূলরা ব্যতীত আর কেউই কথা বলতে পারবে না। আর রাসূলদেরও আবেদন হবে শুধু আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম (আয় আল্লাহ! নিরাপদে রাখুন, নিরাপদে রাখুন)। (এবং) জাহান্নামে সাদানের কাঁটার মতো আঁকড়া থাকবে। তোমরা দেখেছ কি সাদানের কাঁটা? সাহাবারা বললেন, জি হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল!

মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ছেন মুসল্লিরা, ছবি: সংগৃহীত

 

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, জাহান্নামের সে কাঁটাগুলো এ সাদানের কাঁটার মতো। হ্যাঁ, তবে সেগুলো যে কত বড় হবে তা একমাত্র আল্লাহতায়ালাই জানেন। ওইসব কাঁটা মানুষকে তাদের আমলের অনুপাতে বিদ্ধ করবে। কিছু মানুষ থাকবে ঈমানদার, তারা তাদের আমলের কারণে নিরাপদ থাকবে। আর কেউ কেউ তার আমলের কারণে ধ্বংস হবে। কাউকে নিক্ষেপ করা হবে, আর কাউকে প্রতিদান দেওয়া হবে। কিংবা সেরকমই কিছু রাবী বলেছেন। তারপর (আল্লাহ) প্রকাশিত হবেন। তিনি বান্দাদের বিচার শেষ করে যখন আপন রহমতে কতক জাহান্নামবাসীকে বের করতে চাইবেন, তখন তিনি তাদের মধ্যকার শিরক থেকে মুক্তদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দেওয়ার জন্য ফেরেশতাদের আদেশ দেবেন। তারাই হচ্ছে ওসব বান্দা যাদের ওপর আল্লাহ রহমত করবেন, যারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। সিজদার চিহ্ন দ্বারা তাদেরকে ফেরেশতারা চিনতে পারবে। সিজদার চিহ্নগুলো ছাড়া সে সব আদম সন্তানকে সারাদেহ জাহান্নামের আগুন ভস্মীভূত করে দেবে।

সিজদার চিহ্নগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া আল্লাহ জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। অতঃপর তাদেরকে আগুনে দগ্ধ অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ঢালা হবে সঞ্জীবনীর পানি। এর ফলে নিম্নভাগ থেকে তারা এমনভাবে সজীব হয়ে ওঠবে, প্লাবনের পানিতে বীজ মাটি থেকে যেভাবে গজিয়ে ওঠে। এরপর আল্লাহতায়ালা বান্দাদের বিচার কাজ শেষ করবেন। এদের মধ্য থেকে একজন বাকি থেকে যাবে, যে জাহান্নামের দিকে মুখ করে থাকবে। জাহান্নামিদের মধ্যে এই হচ্ছে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। -সহিহ বোখারি: ৭৪৩৭