নারীদের জন্য অজুখানাসহ পৃথক নামাজের ব্যবস্থা জরুরি
হাইওয়েসহ রাস্তার পাশের মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য পৃথক বাথরুম ও অজুখানাসহ ছোট্ট নামাজঘরের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন তীব্র হচ্ছে।
অনেক সময় দেখা যায়, কোনো ধর্মপ্রাণ দম্পতি বাইরে বের হয়েছেন। সঙ্গীয় পুরুষ ঠিকই নামাজ পড়ছেন, কিন্তু নারী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নামাজ আদায় করতে পারছেন না- শুধু জায়গার অভাবে। তাই মসজিদে মসজিদে নারীদের পৃথক নামাজের জায়গা থাকা জরুরি।
রাস্তার পাশে প্রায়ই দেখা যায়, পুরুষ মসজিদে নামাজ পড়ছেন; আর সঙ্গীয় নারী ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে অনিরাপদ অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। অথচ তিনি নিয়মিত নামাজ পড়েন। এখন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা না থাকার কারণে তিনি নামাজ আদায় করতে পারলেন না। তাই পথযাত্রী নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করা বিশেষ প্রয়োজন।
দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীদের অনেকেই পড়াশুনা, চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে নানা কারণে ঘরের বাইরে যেতে হয়। এ সময়টাতে সঙ্গীয় পুরুষ মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেও নারীদের জন্য পৃথক কোনো নামাজের জায়গা না থাকায় প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তারা নামাজ আদায় করতে পারেন না। এ জন্য তারা তীব্রভাবে মনোকষ্টে ভোগেন, তাই মসজিদে মসজিদে নারীদের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা থাকা জরুরি।
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ফরজ। যদিও নারীদের জন্য তাদের নিজ নিজ ঘরে নামাজ আদায় করা উত্তম বলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেছেন। তবুও বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীরা কোনো প্রয়োজনে বাইরে বের হলে তার ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য পৃথক নামাজের জায়গা প্রয়োজন।
তাই সময়ের প্রয়োজনে নারীদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে তারা প্রয়োজনে বাইরে গেলেও তাদের সুবিধামতো নামাজ আদায় করে নিতে পারেন। শুধু নামাজ আদায় নয়- বাথরুমের ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।
তাই আমরা আশা করবো, রাস্তার পাশে অবস্থিত মসজিদ কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, শিল্প কারখানা, শপিং সেন্টার, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, লঞ্চঘাট, যানবাহন-যাত্রাপথ, পর্যটন এলাকা, বিনোদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে হোটেল-মোটেলসহ সব জায়গায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যেন শরিয়তসম্মতভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করবেন।
কেননা আমাদের দেশে এসব স্থানে পুরুষের পাশাপাশি প্রচুর নারী বিভিন্ন প্রয়োজনে চলাচল করে থাকেন। নামাজের ওয়াক্ত হলে পুরুষরা ঠিকই নামাজ আদায় করতে পারলেও সুযোগের অভাবে প্রতিদিন নামাজ কাজা হচ্ছে অসংখ্য নারীর। অন্যদিকে প্রস্রাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে অনেক নারী রীতিমতো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
ইতোমধ্যে (২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে) দেশের সকল মসজিদে নারীদের নামাজের সুব্যবস্থা চেয়ে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই রিটে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালককে (ডিজি) বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ ধারা অনুযায়ী নারী-পুরুষ সকলের ধর্ম অবলম্বন, পালন ও প্রচারের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা ধর্ম পালনে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এতে আরও বলা হয়, মুসলমানদের ধর্ম চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হলো- মসজিদ। পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও মসজিদে নামাজ আদায়ের পূর্ণ অধিকার রয়েছে।
রিটকারী আইনজীবী বলেন, সাংবিধানিক ও ধর্মীয়ভাবে নারীদের মসজিদে নামাজ আদায়ের পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুসলিম নারীরা যাতে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন সে জন্য বাংলাদেশের সব মসজিদে নারীদের জন্য আলাদা নামাজের জায়গা, অজু করার জায়গা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করতে হবে।
বলতে দ্বিধা নেই, রাস্তায় পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে উন্নতমানের টাইলস ও এসি সম্বলিত সুরম্য মসজিদ ভবন। কিন্তু নারীদের বাথরুম, অজু আর নামাজের বিষয় নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। মসজিদে নারীদের নামাজ আদায় নিয়ে মাসয়ালাগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব আলাদা একটি নামাজঘর নির্মাণের মাধ্যমে। নারীদের জন্য এভাবে না ভাবা খুব দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।