স্বর্ণমিশ্রিত জাফরান দিয়ে লেখা কোরআন ৭০০ বছর ধরে সংরক্ষিত মসজিদে আকসায়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্বর্ণমিশ্রিত জাফরান দিয়ে লেখা কোরআন, ছবি: সংগৃহীত

স্বর্ণমিশ্রিত জাফরান দিয়ে লেখা কোরআন, ছবি: সংগৃহীত

স্মরণীয় হয়ে থাকতে শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অভিনব কিছু কাজ করেছিলেন সুলতান আল মারিনি। তার অন্যতম কাজ হলো, কস্তুরিমিশ্রিত জাফরানের কালিতে নিজ হাতে কোরআনে কারিমের অনুলিপি তৈরি করে পবিত্রতম স্থান আল আকসা মসজিদে উপহার হিসেবে প্রেরণ।

কস্তুরি মিশ্রিত জাফরানের কালিতে লেখা পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে কারিমটি মুসলমানদের প্রথম কেবলা ইসরাইল অধিকৃত ফিলিস্তিনের মসজিদে আকসার সংগ্রহশালায় ৭০০ বছর ধরে সংরক্ষিত রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৩৪৪ সালে মরক্কোর তদানীন্তন সুলতান আলী আবুল হাসান আল মারিনি নিজ হাতে কোরআনের ঐতিহাসিক এ অনুলিপিটি তৈরি করে আল আকসায় হাদিয়া হিসেবে পাঠান। কোরআনে কারিমের কপিটি মরোক্কান শাসকদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। এটি সুলতান মারিনির কোরআন প্রেম, উন্নত রুচি ও একনিষ্ঠতার এক চিত্তাকর্ষক উদাহরণ।

আল আকসা ছাড়াও একইরকম তৈরিকৃত কোরআনে কারিমের পৃথক দু’টি পাণ্ডুলিপি মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতেও হাদিয়া পাঠিয়েছিলেন সুলতান আল মারিনি। তবে কালের পরিক্রমায় সেগুলো সংরক্ষিত থাকেনি।

বিজ্ঞাপন

৭০০ বছর পূর্বের মরক্কোর সেই সুলতানের স্মৃতিচিহ্ন ধারণ করে থাকা কোরআনে কারিমের ঐতিহাসিক এ পাণ্ডুলিপিটি সংরক্ষিত আছে আল আকসার কুব্বাতুস সাখরায়।

রৌপ্যখচিত আবলুস কাঠে নির্মিত বর্গাকৃতির একটি বক্সে করে এ হাদিয়াটি পাঠিয়েছিলেন সুলতান আল মারিনি। বক্সের ভেতরের অংশ ত্রিশটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। যেগুলোতে সংরক্ষিত আছে কোরআননে কারিমের পৃথক পৃথক ত্রিশ পারার অংশ।

বর্গাকৃতির বক্সে সংরক্ষিত থাকায় এটিকে ‘মরক্কোর রাবা’ বলা হয়। আরবিতে ‘রাবা’ অর্থ ‘বর্গাকৃতি।’

কোরআনে কারিমের এ পাণ্ডুলিপিটি আল আকসায় হাদিয়া পাঠানোর সময় সুলতান আল মারিনি অসিয়ত করে বলেছিলেন, শুধু কুব্বাতুস সাখরার ভেতরে প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় এই পাণ্ডুলিপিটি তেলাওয়াত করতে হবে।

তেলাওয়াতের আগে পড়ে সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস এবং সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত বিশেষভাবে পড়তে হবে। তেলাওয়াত শেষে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম ও তার পরিবারবর্গের প্রতি দরূদ এবং সুলতানের পরিবারের জন্যকল্যাণ এবং ক্ষমার দোয়া করতে যেন কোনো পাঠকই ভুল না করে এ ব্যাপারেও ‘অসিয়তনামায়’ স্পষ্ট আবদার রয়েছে।

স্বর্ণমিশ্রিত জাফরান দিয়ে লেখা কোরআন, ছবি: সংগৃহীত

সুলতান আল মারিনি উন্নত চামড়ায় বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। যেন কাগজের মতো সহজেই ক্ষয় না হয়ে যায়। লেখার ক্ষেত্রে তখনকার প্রচলিত কুফি লিখন রীতি এবং বিন্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ ফিতার সাহায্যে জ্যামিতিক নানা সূত্র অনুসরণ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক এ পাণ্ডুলিপির কালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কস্তুরিমিশ্রিত জাফরান যাতে কার্বন এবং স্বর্ণমিশ্রিত কালিও পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল।

কোনো সূরা বা পারার শুরু-শেষে বিশেষ আলঙ্করিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠায় কারুকার্যের মাধ্যমে বিশেষ নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

তবে গত শতকের প্রথমদিকে ফিলিস্তিন নিয়ে বিভিন্ন অস্থিরতা তৈরি হলে ঐতিহাসিক এ পাণ্ডুলিপির ৬টি অংশ লুট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। বর্তমানে ‘মরোক্কান রাবাতে’ ২৪ পারা বিদ্যমান।

মরক্কোর সুলতান আলী আবুল হাসান মনসুর বিল্লাহ আল মারিনি বিখ্যাত মামলুক সুলতান মুহাম্মদ বিন মনসুর কল্লানের সমসাময়িক ছিলেন। ধর্মপরায়নতা ও সুশাসনের তার বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।

মুসলিম শাসকরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সময়ে পবিত্রতম স্থান আল আকসায় নানা উপহার প্রেরণ করেছেন। তবে কোরআনে কারিমের এই পাণ্ডুলিপিটিকে আল আকসায় পাঠানো সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

যদিও ফিলিস্তিনের পুরোনো পাণ্ডুলিপি গবেষক সমর বাকিরাত বলেছেন, কোরআনে কারিমের এই কপিরি শৈল্পিক গুণমান এবং বিন্যাস নিয়ে পর্যাপ্ত একাডেমিক গবেষণা হয়নি। তবে সমর বাকিরাত এটা জানিয়েছেন, গত শতাব্দীর শুরুতে ফিলিস্তিনে বহুমাত্রিক অশান্তির কারণে ঐতিহাসিক পান্ডুলিপির ছয়টি অংশ লুট করা হয়। বর্তমানে ‘মরোক্কান রাবাত’-এর ২৪টি অংশ সংরক্ষিত আছে।

-মুসলিম ডটনেট অবলম্বনে