আল আমীন মিশন: পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রসারের নবদূত



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের একটি ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘সত্যিকারের শিক্ষক তারাই, যারা জাতিকে ভাবতে সাহায্য করেন। কাজের মাধ্যমে নিজের মমত্ববোধকে সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেন।’ এমনই একজন আলোকিত মানুষ এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত শিক্ষা সংগঠন ‘আল আমীন মিশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ভাবতে শিখিয়েছেন, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। তার দেখানো পথে জীবনে সাফল্য পেয়েছে হাজার হাজার মুসলিম শিক্ষার্থী। তিনি তাদের মাঝে স্বপ্নে বীজ বপন না করলে, ভারতের মতো দেশে কঠোর প্রতিযোগিতায় হারিয়ে যেত তারা। যথাযথ পরিবেশের অভাবে তাদের শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হতো না।

‘একমাত্র শিক্ষাই পাড়ে মানুষকে আলোর দিশা দেখাতে’ মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী এম নুরুল ইসলামের শিক্ষা বিপ্লবে কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে এক নবজাগরণ তৈরি হয়েছে। তবে এখনও অনেক পথ বাকি।

সত্তরের দশকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা যখন শিক্ষা থেকে যোজন যোজন কোষ দূরে, তখন আশির দশকের প্রায় শেষ দিকে মুসলিম সমাজকে শিক্ষার আলো দেখানোর জন্য এগিয়ে আসেন এম নুরুল ইসলাম। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের সর্বস্তরের বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আল আমীন মিশন।

পশ্চিমবঙ্গ আল আমীন মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৯ সালের ১৭ অক্টোবর হাওড়া জেলার খলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এম নুরুল ইসলাম ১৯৮৪ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় খলতপুর গ্রামে তিনি ‘ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। অবাক করা তথ্য হলো, সমাজের মানুষের ‘মুষ্টির চাল’কে আয়ের মাধ্যম ধরে স্থানীয় একটি কওমি মাদরাসার সহায়তায় ওই মাদরাসার ভবনে আবাসিক ছাত্রাবাস শুরু করেন। পরে ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি ইন্সটিটিউট অফ ইসলামিক কালচারের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়, ‘আল আমীন মিশন।’ বর্তমানে তিনি আল আমিন মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার মতে, ‘আমি মনে করি, আল্লাহতায়ালা হলেন সব থেকে বড় পরিকল্পনাকারী। এই যে আল আমীন মিশন, এসব তারই পরিকল্পনার ফসল।’

গোটা ভারত বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র যখন ইংরেজি মাধ্যমের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে, সবাই ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে সেদিকে, আল আমীন মিশন তখন দেখিয়ে দিয়েছে বাংলা মাধ্যমে পড়েও বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়। দেশে-বিদেশে কর্মে এবং গবেষণায় যুক্ত আল আমীনের ছেলে-মেয়েরাই তার উজ্জ্বল উদাহরণ।

আল আমিন মিশন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষার্থী বেরিয়েছেন এবং তাদের বেশিরভাগই ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবসেবায় নিযুক্ত। তাদের মধ্যে চিকিৎসক ৪ হাজার, স্বাস্থ্যকর্মী ৪ হাজার, ইঞ্জিনিয়ার ৩ হাজারের বেশি। কেউবা আবার মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক, আবার কেউ গবেষক। অনেকেই উচ্চপদে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। এছাড়া ডব্লিউবিসিএস, নার্সিং, হোমিওপ্যাথি, আর্য়ুবেদ এবং ভেটেনারিতেও মিশনের প্রভূত সাফল্য রয়েছে। এখনও প্রতি বছর চারশ’র বেশি ছেলে-মেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হচ্ছে। সাফল্যের হারের দিক থেকে এই ফলাফল ভারতের সংখ্যালঘু পরিচালিত সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা। বর্তমানে আল আমীন মিশনের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। ৩ হাজার শিক্ষক আর শিক্ষাকর্মী এসব ছাত্র-ছাত্রীদের সন্তানসম স্নেহে পড়াশোনা করিয়ে থাকেন।

আল আমীন মিশনের প্রতিষ্ঠাতা এম নুরুল ইসলাম, ছবি: সংগৃহীত

মাত্র সাত জন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি অনুন্নত এলাকায় পথ চলা শুরু আল আমীন মিশনের। ওই ছাত্রদের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট অর্থের দরকার ছিল, সেই অর্থ সংগ্রহ করতে এম নুরুল ইসলাম ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। জাকাতের টাকা ও কিছু সমাজসেবী মানুষের সাহায্যে চলতে শুরু করে আল আমীন মিশন। একটা সময় জাকাত ও সমাজসেবীদের সাহায্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় এম নুরুল ইসলাম স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে অর্থাভাব মিটিয়েছেন।

প্রথম থেকেই এম নুরুল ইসলামের ইচ্ছা ছিলো, শুধু শিক্ষিত নয়; মানুষের মতো মানুষ তৈরি করতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিপ্লব ঘটাতে হলে, শুধু একটি আবাসিক মিশন যথেষ্ট নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের সব জেলায় শুরু হয় আল আমীন মিশনের বিভিন্ন শাখা তৈরি কাজ।

বর্তমানে রাজ্যের ১৭টি জেলায় ৭০টি শাখা ছড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের মতো অন্যান্য রাজ্যে এখন আল আমীন মিশন বিস্তৃত। তার নিরলস পরিশ্রম, স্বপ্নকে ছোঁয়ার অদম্য জেদ ও প্রখর দূরদৃষ্টির জন্য মাত্র ৩৭ বছরে আল আমীন মিশন একটি আলোচিত শিক্ষাবিপ্লবের নামে পরিণত হয়েছে। আল আমীন মিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন সমাজে শিক্ষার আলো জ্বেলে দেওয়ার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের জন্য আল আমীনের মতো আরও অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার। এখন অবশ্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হতে শুরু করেছে।

আল আমীন মিশনকে বলা হয়, ‘দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের সাফল্যের সোপান।’ আল আমীন আছে বলেই মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। প্রতি বছরের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, নিট, ডাব্লুবিসিএসের ফলাফল প্রমাণ করে আল আমীন মিশন মুসলিম সমাজকে কতটা এগিয়ে নিয়েছে। আল আমীন না থাকলে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের অস্তিত্ব থাকতো না, আল আমীন মিশন তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলেই তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। বাংলার মুসলিম সমাজে শিক্ষার প্রতি আসক্তি তৈরি করছে আল আমীন মিশন।

আল আমীন মিশনের অধীনে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পপতি পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার আলহাজ মোস্তাক হোসেনের সেবামূলক সংস্থা জি ডি চ্যারিটেবল সোসাইটির জি.ডি স্কলারশীপ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষার কাজকে আরও বেগবান করতে ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের মাওলানা আজাদ এডুকেশন ফাউন্ডেশন ৪৫ লাখ, ২০০৩ সালে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক মৃণাল সেন মঞ্জুরীকৃত এমপি ল্যাডস ফান্ড ৮৮ লাখ টাকা দেয়। এভাবেই মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় মিশনের কাজ এগিয়ে চলছে।

দিনের পর দিন একই পোশাকে থেকে কোনোরকম পারিশ্রমিক ছাড়া কাজ করে যাচ্ছেন এমন নুরুল ইসলাম। মিশনের উত্তরণের জন্য জীবনে চাকরি করার ইচ্ছে ছিল না। তবুও ফান্ডের কথা ভেবে ১৯৯১ সালে মিশনের কাছেই আসন্ডা আদর্শ শিক্ষা সদনে চাকরি নেন। কিন্তু বেতনের টাকাটা জমা হতে থাকে মিশনের ফান্ডে।

আল আমীন মিশনের বর্ধমান ক্যাম্পাস, ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে নানির দেওয়া জায়গায় স্থায়ীভাবে মিশনের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পরে মিশনের কাজ সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন সময়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের মাইনুদ্দিন আহমেদ, সাজাহান বিশ্বাস, বীরভূমের হজরত দাতা মাহবুব শাহ ওয়ালী (রহ.) ওয়াকফ স্টেট, পশ্চিমবঙ্গ ওয়াকফ বোর্ড, বেঙ্গালুরুর সাদাতুল্লাহ খান, বিখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ.কে. জালালউদ্দিন, মৃণালকান্তি দুয়ারী, কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্রি কোচিং স্কিম ফান্ড, পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, সোলেমান মোল্লা, আব্দুর রহমান, এস এম আনোয়ার, খলিলুর রহমান, শওকত আলী, হারুন রসিদ, মুকতার আলম, তাবারক হোসেন মিস্ত্রি, আজিজুর রহমান মোল্লা ও মারুফ-ই-ইলাহীসহ অনেক সমাজ ও শিক্ষাদরদী মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতা পেয়েছে মিশন। এভাবে সমাজের অসংখ্য সহৃদয় শিক্ষানুরাগী, শুভানুধ্যায়ীরা আল আমীনের সঙ্গে আছেন। যারা বাংলার পিছিয়ে পড়া মুসলিম সমাজকে বিকশিত করার জন্য সবসময় চিন্তা করেন ও অকৃপণভাবে বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত।

২০১৫ সালে শিক্ষাক্ষেত্রে রাজ্যজুড়ে বিশেষ অবদানের জন্য আল আমীন মিশনকে ‘বঙ্গভূষণ সম্মাননা’য় সন্মানিত করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। একই মঞ্চে বঙ্গবিভূষণ সম্মাননায় ভূষিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। সরকারি দু’টি কমিটিতে আল আমীন মিশন প্রতিনিধিত্বও করছে। এর আগে আল আমীন মিশন টেলিগ্রাফ স্কুল অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সিলেন্স পায় ২০০২ সালে, ২০০৯ সালে পায় বেগম রোকেয়া পুরস্কার।

২০২০ সালেও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জয়েন এন্ট্রান্স ও নিট পরীক্ষায় আল আমীন মিশনের শিক্ষার্থীরা নজরকাড়া সাফল্য অর্জন করেছে। এমন কোনো বছর আর পরীক্ষা নেই- যেখানে রাজ্য মেধা তালিকায় আল আমীনের শিক্ষার্থী থাকে না। প্রতিবছর মিশনের ছাত্র-ছাত্রীদের নিট পরীক্ষার ফলাফল মানুষের নজর কাড়ে। ২০২০ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নিটে ৫৬৫ নম্বরের ওপর পেয়েছে ৩২০ জন ছাত্র-ছাত্রী। আল আমীন মিশন থেকে এ বছর সর্বভারতীয় স্তরে সর্বোচ্চ র‍্যাঙ্ক হয়েছে ৯১৬। গোটা ভারতে ১৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এ বছর নিট পরীক্ষা দিয়েছিল, তন্মধ্যে ৯১৬ র‍্যাঙ্ক করে মিশনের মুখ উজ্জ্বল করেছে জিসান হোসেন।

আল আমীন মিশনের একটি প্রতিষ্ঠান, ছবি: সংগৃহীত

যেখানে সত্তরের দশকে মুসলিম সমাজের ছাত্ররা ডাক্তার তো দূরের কথা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়তে পারবে কিনা সন্দেহ ছিল, সেখান এখন প্রতি বছর আল আমীন থেকে ৩০০-৪০০ জন ডাক্তার তৈরি হচ্ছে। এর থেকে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে? বিগত ৩-৪ বছর থেকে ডাক্তারের মোট আসনের ১৫-২০ শতাংশ আল আমীন মিশনের ছেলে-মেয়েরা লাভ করছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের এমন কোনো হাসপাতাল পাবেন না, যেখানে মিশনের ছাত্র-ছাত্রী নেই।

আল আমীন মিশন পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজকে আলোর দিশা দেখিয়েছে। এখন বাংলায় প্রতিটি মা-বাবা চায়, তাদের সন্তান যেন আল আমীনে পড়তে পারে। এম নুরুল ইসলামসহ আল আমীন মিশনের একান্ত চাওয়া, পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজ শিক্ষিত হয়ে নিজের মেরুদণ্ড শক্ত করে দাঁড়াক। এ জন্য তার মতো আরও অনেক মানুষ দরকার সমাজে।

নাম পরিবর্তনের পর ৩৪ বছর বহু গৌরবজনক অধ্যায় পেরিয়ে এসেও আল আমীন মিশনের কোনো লোগো ছিল না। ২০২০ সালের শেষদিকে মিশনের লোগো বানানো হয়েছে। হয়েছে মিশনের নিজস্ব অ্যাপ। করোনার সময়েও মিশন পঠন-পাঠন চালু রেখেছে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে। মিশনের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন গত এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত। এভাবে আল আমীন মিশনকে এগিয়ে নিচ্ছেন এম নুরুল ইসলাম ও তার সঙ্গিরা।

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;