মাগফিরাত লাভের প্রত্যাশায়

  • মাহমুদ আহমদ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাগফিরাত লাভের প্রত্যাশায়

মাগফিরাত লাভের প্রত্যাশায়

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় রহমতের দশক শেষ করে আমরা মাগফিরাতের দশকে প্রবেশ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। বিশ্বময় করোনার ভয়াবহতার কারণে কেউ আজ নিরাপদ নয়। এখন কেবলমাত্র আল্লাহতায়ালাই পারেন তার সৃষ্টিকে রক্ষা করতে। আমাদের উচিত মহামারি করোনার এ দিনগুলোতে বৃথা সময় নষ্ট না করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষভাবে রত হওয়া।

পৃথিবীর সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও তিনি ইচ্ছে করলে এক মুহূর্তেই পারেন বিশ্বের সব বালা-মুসিবত দূর করতে। কিন্তু এর আগে আমাদের সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। পবিত্র রমজানের এদিনগুলোতে আমাদের উচিত হবে রাত্রিগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখা আর সেজদার স্থানগুলোকে অশ্রুজলে সিক্ত করা।

বিজ্ঞাপন

হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত হয় শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়। অতঃপর একটি দরজাও খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, অতঃপর এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। এক আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন, হে পুণ্যের অন্বেষণকারী! সম্মুখে অগ্রসর হও আর হে মন্দের অন্বেষণকারী! থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহতায়ালা অনেককে দোজখের আগুন থেকে মুক্তি দেন। আর এটা প্রতি রাতেই সংঘটিত হয়ে থাকে’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)।

মাগফিরাতের এ দশকে উঠতে-বসতে সর্বাবস্তায় আমরা এ দোয়া পাঠ করব-‘আসতাগফিরুল্লাহ রব্বি মিন কুল্লি যামবিন ওয়াতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘আমি আমার প্রভু আল্লাহর কাছে আমার সমুদয় পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।’

বিজ্ঞাপন

বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা যেহেতু বাসায় অবস্থান করছি আর এ সুবাদে হাতে প্রচুর সময়ও রয়েছে তাই এখন সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পিতামাতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কোনো পিতা তার পুত্রকে উত্তম শিষ্টাচার অপেক্ষা অধিক শ্রেয় আর কোনো বস্তু দান করতে পারে না।’ (তিরমিজি)

তাই পিতামাতার উচিত হবে পুরো রমজানে সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেয়ার বিষয়ে বিশেষ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা। আবার পিতামাতার প্রতিও সন্তারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি আমাদের যা করণীয় এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক একমাত্র তারই ইবাদত করার এবং পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার তাগিদপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন। তোমার জীবদ্দশায় তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদের উদ্দেশ্যে বিরক্তিসূচক উহ্-ও বলো না এবং তাদেরকে বকাঝকা করো না, বরং তাদের সাথে সদা বিনম্র ও সম্মানসূচক কথা বলো। আর তুমি মমতাভরে তাদের উভয়ের ওপর বিনয়ের ডানা মেলে ধর। আর দোয়ার সময় বলবে, হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি সেভাবে দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমায় লালনপালন করেছিল।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ২৩-২৪)

আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে থাকেন পরীক্ষা করার জন্য। অনেককে আল্লাহ তাআলা প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন ঠিকই কিন্তু সেই ধন-সম্পত্তির সঠিক ব্যবহার না করার ফলে দেখা যায় সে ধ্বংস হয়ে যায় আবার কাউকে সন্তান-সন্তুতি দেন ঠিকই কিন্তু তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করার ফলে এই সন্তান তার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

সন্তান-সন্তুতি যদি প্রকৃত নৈতিকগুণ সম্পন্ন না হয় তাহলে মাতা-পিতার জন্য তা একটি আজাব বই কিছুইনা। জীবন-বিধান আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার সৌন্দর্য। এ সন্তান-সন্তুতি যদি আদর্শ চরিত্রের না হয় তাহলে তা হয় মা-বাবার জন্য পরীক্ষার কারণ-দুঃখের বোঝা।’ (সুরা কাহাফ: আয়াত ৪৬)

পরিশেষে এটাই বলতে চাই, আসুন রমজানের এই মাগফিরাতের দশকে নিজেদের পরিবারকে নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষভাবে রত হই। আল্লাহতায়ালার কাছে নিজেদের পাপের জন্য সকাতর ক্ষমা চাই।

হে পরম ক্ষমাকারী! তুমি আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে তোমার মাগফিরাতের চাদরে আমাদের জড়িয়ে নাও, আমিন।

লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- [email protected]