অন্তরের রোজা



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

শরীর বা দেহ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতোই অন্তর ও হৃদয়কে রোজায় শামিল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অন্তর ও হৃদয়কে পাপাচার, কুচিন্তা, বক্রতা, শত্রুতা, কুটিলতা থেকে সরল, সোজা ও পবিত্রতায় ভরপুর ঈমানের পথে রাখাই ঈমানদারের কর্তব্য এবং রোজার দাবি। অন্তরের রোজার বিষয় অনুধাবণ করার জন্য প্রথমে অন্তর/মন/হৃদয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেছেন:

‘যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আল্লাহ তার অন্তরকে সরল পথ দেখান’ (সুরা তাগাবুন: আয়াত ১১)।

বস্তুত পক্ষে অন্তরের সরল পথ বা হেদায়েত হলো সকল হেদায়েতের মূল এবং তাওফিকের শিকড় তথা সকল সুকর্মের অনুপ্রেরণার উৎস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘শোন, দেহের মধ্যে একটি মাংসপি- রয়েছে, যখন তা সুস্থ থাকে তখন গোটা দেহটাই সুস্থ থাকে আর যখন তা অসুস্থ হয়ে যায়, তখন গোটা দেহটাই অসুস্থ হয়ে যায়। জেনে রাখো, তা হলো অন্তর’ (বোখারি শরিফ: ৫২)।

অন্তর সুস্থ থাকা কেবল মানুষের শরীর বা দেহের জন্যেই নয়, মানুষের যাবতীয় কল্যাণের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষের সুস্বাস্থ্য, শান্তি, কল্যাণ বহুলাংশে নির্ভর করে তার অন্তর, মানসিকতা ও মনের সুস্থতার উপর। দুনিয়া এবং আখেরাতের সাফল্য ও কল্যাণের প্রয়োজনে দেহের পাশাপাশি অন্তরকেও সুস্থ, সচল, পবিত্র রাখতে হয়। কারণ, শারীরিক অসুস্থতার মতোই অন্তরের অসুস্থতা ও সমস্যা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং দুনিয়ার কাজে এবং আখেরাতের কাজে পিছিয়ে দেয়। অন্তরকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন:

‘নিশ্চয় এর মাঝে যে ব্যক্তির জন্য প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যার একটি জীবন্ত অন্তর রয়েছে, অথবা যে ব্যক্তি একাগ্র চিত্তে শুনতে চায়’ (সুরা কাফ: আয়াত ৩৭)।

ফলে জীবন্ত, আগ্রহী, সুস্থ অন্তর একজন মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুধু অন্তর থাকলেই হবে না, একে জীবন্ত, সুস্থ ও পবিত্র রাখতে হবে। যদিও প্রতিটি মানুষেরই অন্তর আছে তথাপি অন্তর পবিত্র, সুস্থ ও জীবন্ত না হলে সেই অন্তর কোনো কাজে আসবে না।

সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে দুই ধরনের অন্তরের উপস্থিতি দেখা যায়। একটি হলো জীবন্ত অন্তর, যা ঈমানের নূরে উজ্জ্বল, তাকওয়া ও বিশ্বাসে ভরপুর। আরেক প্রকার অন্তর হলো মৃত, যা বেখেয়ালী, বেপরোয়া এবং ধ্বংস, অসুস্থতা ও অকল্যাণের কারণ। এরূপ অন্তর সত্য, কল্যাণ, আলো ও সুস্থতা থেকে বিমুখ হয়ে ধ্বংসের পথে গমনকারী। যাদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে:

‘মূলত এদের অন্তরে রয়েছে মারাত্মক ব্যাধি, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা এদের সে রোগ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক শাস্তি। কেননা, তারা মিথ্যা বলেছিল’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১০)।

এইসব মৃত, অসুস্থ ও পথভ্রষ্ট অন্তর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আরো ইরশাদ করা হয়েছে:

‘তারা বলে আমাদের অন্তরের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলতঃ তাদের ক্রমাগত অস্বীকার করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। অতঃপর তাদের সামান্য পরিমাণ লোকই ঈমান গ্রহণ করেছে।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ৮৮)।

‘তবে কি তারা এ কোরআন সম্পর্কে কোনো রকম চিন্তা গবেষণা করে না! নাকি এদের অন্তরসমূহের উপর তালা ঝুলে আছে!’ (সুরা মুহাম্মদ: আয়াত ২৪)।

‘তারা বলে, যে বিষয়ের দিকে তুমি আমাদের ডাকছো, তার জন্য আমাদের অন্তরসমূহ আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে, আমাদের কানেও রয়েছে বধিরতা’ (সুরা হা-মীম সাজদা: আয়াত ৫)।

পবিত্র কোরআনের এমন বহু আয়াতের মাধ্যমে মূলতঃ এটাই স্পষ্ট হয় যে, মানুষের অন্তরও অসুস্থ হয়, তালাবদ্ধ হয় এবং সত্য জানতে বিমুখ হলে অন্তর এক সময় মরেও যায়। যদিও খোদাদ্রোহী, পথভ্রষ্ট ও অন্যায়কারীর বুকেও একটি অন্তর আছে, তথাপি সে অন্তর জীবন্ত, কল্যাণকামী, পবিত্র, আলোকিত ও সঠিক পথে বিচরণশীল নয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি করে এই দোয়া পড়তেন:

‘হে আল্লাহ, হে হৃদয়ের পরিবর্তনকারী, আপনি আমার হৃদয়কে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন’ (তিরমিজি শরিফ: ২১৪০)।

ফলে হৃদয় বা অন্তরকে সব সময় দ্বীনের দিকে রাখা দরকার এবং রোজার সময় সেটি আরো দৃঢ়ভাবে রাখা জরুরি, যাতে অন্তরের কুচিন্তা ও মন্দ প্ররোচনা দ্বারা ঈমান ও রোজার কোনো ক্ষতি না হয়। ইসলামী স্কলারগণ বলেছেন যে, অন্তরের রোজা হলো অন্তরকে ভ্রান্ত বিশ্বাস, কুমন্ত্রণা, কুচিন্তা, খারাপ ও গর্হিত চিন্তা বা কল্পনা থেকে মুক্ত রাখা।

বিশ্বাসী, ঈমানদার, মুমিন-মুসলমানের অন্তর সর্বদা ঈমানের নূরে আলোকিত থাকতে হবে। ঈমান, দ্বীন ও কল্যাণের চিন্তায় মুমিন-মুসলমানের হৃদয় সর্বদা আলোকিত থাকে। মিথ্যা, কুফর, অসৎ চিন্তা, ষড়যন্ত্র, কুচিন্তা, কুমন্ত্রণা ইত্যাদি অন্ধকার সেখানে স্থান পাবে না। এসব অন্ধকার এবং হিংসা অহংকার, গিবত, বড়ত্ব ইত্যাদি থাকলে অন্তর কালিমাময় হয়ে যায়। সে কারণে রোজার মাধ্যমে শারীরিক কৃচ্ছ্বতা সাধনের পাশাপাশি অন্তর বা হৃদয়কেও অন্ধকারাচ্ছন্ন বিষয় থেকে পরিপূর্ণভাবে সরিয়ে রাখতে হবে।

রোজায় শরীর যেমন পানাহার করবে না, অন্তরও তেমনিভাবে খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত থাকবে। রোজায় শারীরিকভাবে পানাহার বন্ধ করে অন্তরে অসৎ চিন্তা ও পরিকল্পনা বহাল থাকলে রোজার হক আদায় হবে না। পানাহারের কষ্ট হলেও মন-মানসিকতায় উন্নতি এবং অন্তর আলোকিত হবে না। এজন্য রোজার সময় শারীরিকভাবে পানাহার বন্ধ করা, রিপুকে দমন করা যেমন দরকার, তেমনি অন্তরকে ঈমানের চিন্তায় মশগুল রাখা এবং যাবতীয় অন্ধকারময় কুচিন্তাকে পরিশুদ্ধ রাখাও বিশেষভাবে অপরিহার্য্য। কারণ সুস্থ দেহে যেমন সুস্থ মনের অবস্থান, তেমনি সুস্থ মনে বা অন্তরেও তেমনিভাবে সুস্থ দেহের অবস্থান। দেহ ও মন পারস্পরিকভাবে গভীর সম্পর্কযুক্ত। ফলে শরীর ও মন উভয়টিকেই পবিত্র, স্বচ্ছ, নিষ্কলুষ, কালিমাহীন রাখা একজন ঈমানদারের শারীরিক-মানসিক-আত্মীক কল্যাণের জন্য অতীব জরুরি। রোজার সময় এ বিষয়ে অধিক মনোযোগী হতে হবে, যাবে শরীরের পাশাপাশি মনও পবিত্রতা, কৃচ্ছ্বতা আর ঈমানের আলোয় আলোকিত হয়।

একটি হাদিস থেকে জানা যায় যে:

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবি সম্পর্কে তিনবার বললেন, লোকটি জান্নাতি। সেই সাহাবিকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আপনি কোন আমলের দ্বারা জান্নাতের অধিকারী হলেন? সাহাবি বললেন, আমি যখন ঘুমাই তখন কারো প্রতি কোনো হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা থাকে না (খুতবাতুর রামাদান, পৃ. ৭৬)।

অতএব রোজায় দেহের পাশাপাশি মনের পরিশুদ্ধি সাধনের জন্যেও সচেষ্ট হওয়া কর্তব্য। যার মাধ্যমে ঈমানের নূরে অন্তর আলোকিত হবে এবং আধ্যাত্মিকতা বা রুহানিয়্যাতের সৃষ্টি হবে।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;