রমজানে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

রমজান মাসের রোজা ব্যক্তিগত আমল হলেও তা মুসলিম উম্মাহ এবং সমাজের সকল মানুষকে নানাভাবে উজ্জীবিত ও উদ্বেলিত করে এবং সৃষ্টি করে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। কারণ, মতাদর্শগত দিক থেকে, বিশ্বের সকল মুসলমান এক দেহ, এক প্রাণ, এক অন্তর। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিমদের একটি শরীরের মতো বলেছেন। কারণ, নানা দেশের নানা রকমের মানুষগুলো ইসলামের আদর্শে একতাবদ্ধ রয়েছেন। ঈমান ও আমল তাদেরকে করেছে নিকটবর্তী ও পরস্পরের স্বজন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে:

‘আর তিনি তাদের অন্তরসমূহের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতির বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছেন। অথচ তুমি যদি দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদও ব্যয় করতে, তবুও এ মানুষগুলোর অন্তরের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার বন্ধন স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এদের মাঝে প্রীতি স্থাপন করে দিয়েছেন। অবশ্যই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা আনফাল: আয়াত ৬৩)।

‘হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমি তোমাদের জন্য জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো। কিন্তু আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে আল্লাহ তায়াকে বেশি ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সবকিছু জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন’ (সুরা হুজুরাত: আয়াত ১৩)।

‘তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো’ (সুরা বাকারা: আয়াত ৪৩)।

ফলে ইসলাম গোষ্ঠী, বর্ণ, অঞ্চল, গোত্র নয়, ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে সমগ্র মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও একাকার হওয়ার আহ্বান ও অনুপ্রেরণা জাগায়। তৌহিদের ভিত্তিতে সুন্নাহর আলোকে বিশ্বের সকল মুসলমানের মধ্যে প্রীতি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের চেতনা সৃষ্টি করে ইসলাম। সেই ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতিসত্ত্বার কাছে আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার বিশেষ নেয়ামত হলো মাহে রমজান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে:

‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রদান করা হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পারো’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)।

‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহ রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো এবং কখনো বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমরা তোমাদের উপর দেওয়া আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা একে অপরের শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের মনের মাঝে ভালোবাসার সঞ্চার করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তাঁর অনুগ্রহে একে অপরের ভাই হয়ে গেলে’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৯৮)।

‘তোমরা তাদের মতো হয়ে যেও না, যাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, এরাই হচ্ছে সেসব মানুষ, যাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে’ (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১০৫)।

মহানবী সাল্লøাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসংখ্য হাদিসেও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। একটি হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:

‘আমার কাছে প্রত্যাদেশ এসেছে যে, তোমরা পরস্পরে বিনয় অবলম্বন করো। কেউ কারো উপর জুলুম করো না। কেউ কারো উপর দম্ভ করো না’ (মুসলিম শরিফ: ৬৪)।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের এসব গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনায় ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র স্বার্থের ঊর্ধ্বে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ দেখার তাগিদ করা হয়েছে। ঈমান ও আমলের ভিত্তিতে প্রতিটি মুসলমান একে অপরের ভাইয়ের মর্যাদা পেয়েছে। তার হক যেমন আদায় করতে হবে, তেমনি তাকে কোনোভাবেই কষ্ট দেওয়া ও দম্ভ করা যাবে না। রমজানের পবিত্র পরিস্থিতিতে কেবল নিজের সাওয়াব ও লাভের চিন্তা না করে মুসলিম উম্মাহর অপর ভাইয়ের কথা চিন্তা

করাও তাই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। দরিদ্র ও অসহায়কে সাহায্য করা এবং রোজা পালনের জন্য আর্থিকভাবে সহযোগিতা করাও প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

তদুপরি যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো সকল মুসলমানের লক্ষ্য রাখা উচিত তা হলো, কোনোভাবেই কোনো মুসলমানকে কষ্ট না দেওয়া বা বিপদে না ফেলা। বিশেষত যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত, তাদের দ্বারা ভেজাল বা দ্রব্যমূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায়, সেটা লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য। মানুষকে কষ্ট দিয়ে বা বিপদে ফেলে কখনোই আল্লাহকে খুশি করা সম্ভব নয়। বরং এতে ঈমান ও আমল বরবাদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যতই নামাজ, রোজা করা হোক না কেন, উপার্জন যদি হালাল না হয়, ঘুষ, দুর্নীতি, মজুতদারি, মূল্যবৃদ্ধি ও ভেজালের মাধ্যমে  হয়, তবে সেসব আমল কবুল না হওয়ারই কথা।

ফলে রমজানে নিজের সাওয়াব ও আর্থিক লাভের জন্য প্রচ-ভাবে ব্যক্তি স্বার্থের অনুসারী হওয়া ইসলামের ‘উম্মাহ কনসেপ্ট’ এবং ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য চেতনার সম্পূর্ণ বিরোধী। রোজার সময় নিজের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর অন্য সদস্যদের স্বার্থের দিকে মনোযোগী হওয়াও কর্তব্য। বিশেষ করে, দরিদ্র ও অসহায়দের আর্থিক ও নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা একান্ত অপরিহার্য। তদুপরি, চাকরিজীবীরা ঘুষ-দুর্নীতির দ্বারা এবং ব্যবসায়ীরা ভেজাল-মূল্যবৃদ্ধির দ্বারা সমাজের অন্য সদস্যদের বিন্দুমাত্র কষ্ট ও দুর্ভোগের কারণ হলে তাদের রোজা বা ইবাদত নস্যাৎ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে রমজান মাসে নিজের আমলের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহ, সমাজ ও অপরাপর মুসলমান নর-নারী তথা মানবতার স্বার্থ দেখাও বিশেষ কর্তব্য রূপে বিবেচিত হওয়া দরকার।       

   

কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

কানাডা বিনির্মাণে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

আজকের পরিচিত কানাডা বিনির্মাণে মুসলিম সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ১৮৭১ সালের প্রথম সরকারি আদমশুমারিতে এখানে ১০ জনের মতো মুসলিম ছিল। বর্তমানে কানাডার জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ মুসলিম। এখানে প্রতি মহাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। কানাডার মুসলিমরা প্রতিদিন কলা ও একাডেমির নানা শাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বৈচিত্র্য কানাডাকে আরো প্রাণবন্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে অবদান রাখছে।

কানাডায় অক্টোবর মাসজুড়ে ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থ (আইএইচএম) উদযাপন উপলক্ষে দেওয়া বিবৃতিতে কানাডার বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্ত বিষয়ক মন্ত্রী কামাল খেরা এসব কথা বলেছেন।

১৭ বছর ধরে মুসলিমদের সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি স্থানীয়দের মধ্যে তুলে ধরতে ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থ উদযাপিত হয়। তবে এবারই প্রথম ইসলামোফোবিয়া প্রতিরোধ বিষয়ক দেশটির বিশেষ প্রতিনিধি আমিরা আল-গাওয়াবি ঐতিহ্যের মাসটি উদযাপন করছেন। এবার শিল্পকলা ও বিজ্ঞানে মুসলিম নারীদের অবদান উদযাপন করা হবে।

এক বিবৃতিতে আইএইচএম জানিয়েছে, ‘ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থে কানাডা বিশ্বাস করে, শিক্ষা ও ইতিবাচক গল্প প্রচারের মাধ্যমে কানাডার সবাই সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একে অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। ২০০৭ সালে অটোয়া-ভ্যানিয়ারের এমপি মৌরিল বেলেঙ্গার মাসটি উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পর থেকে কানাডার সব প্রদেশ, পৌরসভা, জনগোষ্ঠী ও সংস্থাগুলো প্রতিবছর অসংখ্য ইভেন্ট আয়োজন করে থাকে। তারা একে অপরের কাছ থেকে শেখা ও ভালো বিষয়গুলো গ্রহণের জন্য সমবেত হয়।’

আইএইচএম আরো জানায়, ‘এ বছর যুগ যুগ ধরে শিল্পকলা ও বিজ্ঞানের উন্নয়নে মুসলিম নারীদের ঐতিহাসিক অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কানাডার প্রথম মসজিদ আর-রশিদের প্রতিষ্ঠাতা হিলবি হামদুন, ইসলামিক হিস্ট্রি মান্থের সহপ্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদা ভ্যালিয়ানতি, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী খাদিজা হাফাজি ও কানাডিয়ান কাউন্সিল অব মুসলিম উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা লিলা ফালমান।’

কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে ইসলামের ইতিহাসের মাস উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে ইসলামিক সোসাইটি অব কিংস্টন ও গ্লোবাল পারসপেকটিভসের আয়োজনে মুসলিম নারী শিল্পীদের গল্প আলোচনা করা হয়েছে।

ইসলামিক সেন্টার অব কিংস্টনে এ মাসের ৮ তারিখ সিরাত সম্মেলন হবে এবং ২২ তারিখ স্থানীয় মুসলিম নারী শিল্পী ও বিজ্ঞানীদের অবদান উদযাপিত হবে।

১৭ তারিখ কুইনস ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ‘আলোকিত ইসলাম ও সংস্কার : মুসলিম বিশ্বে সংস্কারের উদ্ভব এবং আধুনিক অনুসন্ধান’শীর্ষক আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হবে।

;

চোখের গোনাহ থেকে সাবধান



এম কাউছার হামিদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য

বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য

  • Font increase
  • Font Decrease

দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে অন্তরের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ প্রথমে কোনো কিছু আত্মস্থ করে। বুঝে নেয় অথবা অনুমান করে। কোনো বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়ার পর তাকে নিয়ে ভাবা হয়। ভালো কিছুর প্রতি নজর করলে অন্তরে একটি ভালো রেখা অঙ্কিত হয়, মন ভালো থাকে।

আর খারাপ কিছুর প্রতি দৃষ্টি পড়লে মন খারাপ হয়। তাই বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য। কারণ দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দান। তার দেওয়া বস্তু তার নির্দেশিত পন্থায় ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় ইহকালীন ও পরকালীন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

ইসলামের সীমারেখা
দৃষ্টিপাত করার ক্ষেত্রে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি, নিদর্শন ও নেয়ামতের প্রতি দৃষ্টিপাত এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার দ্বারা স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে অশেষ সওয়াব রয়েছে। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মাঝে এবং রাত-দিনের বিবর্তনের মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন। যারা দাঁড়িয়ে ও বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে, আর বলে; হে আমাদের প্রভু! আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯১

পক্ষান্তরে নাচগান, সিনেমা কিংবা অশ্লীল দৃশ্য দেখা ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক বিশুদ্ধতা। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সে বিষয়ে অবগত যা তারা করে।’ -সুরা নুর : ৩০

পরবর্তী আয়াতে মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ -সুরা নুর : ৩১

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টির ক্ষতি
চোখ আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। নিষিদ্ধ জিনিস দেখার দ্বারা এ নেয়ামতের অবহেলা করা হয়, চোখের জ্যোতি কমে যায়। তাই ইসলামে এসব জিনিস দেখা হারাম করা হয়েছে। হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি হচ্ছে- শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।’ -মুসনাদে আশ শিহাব : ১/১৯৫

এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে নজর হেফাজত করতে হবে। অন্যথায় অগণিত নেকআমল করা সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘নজর এমন একটি তীর, যা মানুষের অন্তরে বিষের উদ্রেক করে।’ -ইবনে কাসির : ৩/১৭৬

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা দৃষ্টিকে নত করো, নিয়ন্ত্রণ করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো।’ -তাবারানি : ৮০১৮

কেবল পরকালের জন্যে নয়। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও পবিত্রতা রক্ষা না করা হলে দুনিয়ায়ও খারাপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। এর অন্যতম হলো- স্বামীর অন্তর অন্য নারীর দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং স্ত্রীর মন সমর্পিত হওয়া অন্য পুরুষের দিকে। এর পরিণতি হচ্ছে- পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে আশু বিপর্যয় ও ভাঙ্গন।

দৃষ্টিশক্তির বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তিনি দৃষ্টিসমূহের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে এবং (তারই কারণে) অন্তরে যে কামনা-বাসনা গোপনে জাগ্রত হয় তা ভালোভাবেই জানেন।’ -সুরা মুমিন : ১৯

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবি (রহ.) লিখেছেন, ‘বিশ্বাসঘাতক দৃষ্টি হলো- গায়য়ে মাহরাম নারীদের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ, তার প্রতি চুরি করে তাকানো বা চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা দৃষ্টির অন্যকোনো বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ।’ -তাফসিরে বায়যাবি : ২/২৬৫

অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে অবহেলা
বর্তমানে চোখের হেফাজত না করা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের গোনাহকে গোনাহ মনে হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই চোখের জিনা (ব্যভিচার) হচ্ছে- (অন্যায়) দৃষ্টিপাত করা।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৪৭

ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন-অফলাইনে সর্বত্রই নারীর ব্যাপক উপস্থিতি। অবাধে বিজ্ঞাপনে নারীদের ব্যবহার করা হয়। ইসলামে স্পষ্ট হারাম জিনিসকে কতটা হালকা করে দেখা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফিকে খারাপ ও হারাম মনে করলেও আমরা গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত হারাম মনে করি না। এ জন্যই আমরা নামাজে ও অন্য ইবাদতের স্বাদ পাই না। ইবাদত করাটা বোঝা মনে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবের বিষয়ে হাশরের মাঠে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬

ইসলামি স্কলাররা বলেন, মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করতে হলে এবং ইবাদতের স্বাদ পেতে হলে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চোখের হেফাজত করতে হবে।

;

মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী

মিসরে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন কোরআনের পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী

  • Font increase
  • Font Decrease

মিসরে পবিত্র কোরআনের পুরনো একটি পাণ্ডুলিপির প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে হিজরি প্রথম শতাব্দীতে (সপ্তম খ্রিস্টাব্দ) লেখা বিশ্বের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

মিসরের ফুসতাত নগরীতে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভস বিভাগ কোরআন মাজিদের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই আয়োজন করে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশটির সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ড. নেভিন আল-কিলানির সভাপতিত্বে অধ্যাপক ড. উসামা তালাতের তত্ত্বাবধানে ‘ঐতিহ্য সংরক্ষণে নতুন প্রজন্ম’ শীর্ষক এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

পবিত্র কোরআনের প্রাচীন এই পাণ্ডুলিপিতে ৩২টি পৃষ্ঠা রয়েছে, যা চামড়ার ওপর লিখিত। প্রথমে তা মিসরের প্রাচীন মসজিদ জামে আমর ইবনুল আস (রা.)-এ সংরক্ষিত ছিল। এরপর ১৯১১ সালে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করে ফুসতাতে জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষণ করা হয়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রচলিত হিজাজি লিপিতে এই পাণ্ডুলিপিটি লেখা।

বিভিন্ন শিলালিপি, সমাধি ও প্যাপিরাসে এ ধরনের লিপিশৈলীর দেখা মেলে, যা থেকে এর তারিখ অনুমান করা হয়।

ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ড. উসামা তালাত বলেন, ‘আজ আমরা হিজাজি মাসহাফ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম উদযাপন করছি। এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ মাসহাফগুলোর একটি। হিজরি প্রথম শতাব্দী তথা সপ্তম খ্রিস্টাব্দে তা লেখা হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক ও শৈল্পিক গবেষণার ভিত্তিতে এ কথা বলা যায়, এটি ওই শতাব্দীর প্রথম ধাপে লেখা হয়েছিল। এর মাধ্যমে সব যুগে লিখিতভাবে কোরআন সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়।’

এরপর তিনি পাণ্ডুলিপিবিষয়ক নানা তথ্য ভিডিও চিত্রের সাহায্যে তুলে ধরেন।

মিসরের পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের পুরাকীর্তি পরিদর্শক মালাক নাসহি বলেন, পবিত্র কোরআনের এই কপিটি ‘মাসহাফ আল-হিজাজি’ নামে পরিচিত। কারণ তা খত্তে হিজাজি বা হিজাজি লিপিতে লেখা হয়েছে।

এই লিপিটি কুফি লিপির চেয়ে অনেক পুরনো। হিজরি প্রথম শতাব্দীতে এই লিপির প্রচলন ছিল। তাই এটি ইসলামি সভ্যতার প্রাচীনতম লিপিশৈলীর অন্যতম। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্কাইভসে প্রাচীন নথিপত্র, পাণ্ডুলিপিসহ পবিত্র কোরআনের প্রাচীন কপি সংরক্ষিত রয়েছে। এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ শিল্পীরা পাণ্ডুলিপি পুনরুদ্ধারে কাজ করেন।

মালাক নাসহি আরো বলেন, পবিত্র কোরআনের প্রাচীন এই পাণ্ডুলিপি নবী কারিম (সা.)-এর সাহাবিদের যুগে লেখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এটি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের দুর্লভ পাণ্ডুলিপিগুলোর অন্যতম। চামড়ার ওপর লেখা এই পাণ্ডুলিপিতে ৩২টি পৃষ্ঠা রয়েছে। এটি লোহার কালি দিয়ে পার্চমেন্টে লেখা হয়েছিল। অতঃপর তা খুবই সুন্দরভাবে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।

;

হজযাত্রীদের নতুন রুট, ৩৫ মিনিটে জেদ্দা-মক্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মক্কা-জেদ্দা মহাসড়ক

মক্কা-জেদ্দা মহাসড়ক

  • Font increase
  • Font Decrease

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বহুবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর অন্যতম হলো- জেদ্দা-মক্কা সড়ককে মহাসড়কে রূপান্তর করা। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসড়কে রূপান্তরের কাজ শুরু হয়েছে। এটি জেদ্দা বিমানবন্দরকে মসজিদে হারামের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

আট লেনের এই যুগান্তকারী অবকাঠামো বাস্তবায়িত হলে, হজযাত্রীদের ভ্রমণে সময় বাঁচবে এবং ভ্রমণ আরো নিরাপদ হবে।

শুধু এই সড়ক নির্মাণ নয়, সৌদি আরব হজযাত্রী, ওমরাহ পালনকারী এবং ভ্রমণকারীদের জন্য জন্য আরও নানাবিধ সুবিধা দিতে প্রস্তুত।

জেদ্দা-মক্কা সরাসরি সড়কটি জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত ওমরাহ যাত্রীদের আরাম, নিরাপত্তা ও সময় কম ব্যয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি ভ্রমণের সময়কে কমিয়ে মাত্র ৩৫ মিনিটে নিয়ে আসবে।

সৌদি ভিশন ২০৩০-এর লক্ষ্য ওমরাহ যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা। এটি অর্জনের জন্য সৌদি আরব মক্কার মসজিদে হারামের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। ওমরাহ পরিষেবা প্রদানকারীদের লাইসেন্স সম্প্রসারিত করেছে, ওমরাহ ভিসার বরাদ্দ ও সময় বাড়িয়েছে এবং পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ওমরাহতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রবিধান প্রণয়ন করেছে। এছাড়া সৌদি নাগরিকরা এখন অন্যদেশে তাদের পরিচিতদের ওমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানাতে পারছে।

জেদ্দা-মক্কা সরাসরি সড়ক শুধুমাত্র হজযাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার জন্যই নয়। বরং এটি সামগ্রিক সড়ক ও পরিবহন পরিষেবার উন্নতির জন্য, যার ফলে গড় ভ্রমণের সময় হ্রাস পাবে। এই আধুনিক হাইওয়েতে প্রতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে যানবাহন চলতে পারবে।

;