রোজাদারের প্রাপ্তি



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

  • Font increase
  • Font Decrease

দুনিয়া ও আখেরাতের অফুরন্ত কল্যাণ রয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার যাবতীয় হুকুম পালনের মধ্যে, বিশেষথ রমজানের রোজা পালনের মধ্যে অশেষ শারীরিক-মানসিক-আত্মীক কল্যাণ। পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরিফে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে। এগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো, যাতে রোজাদারের জন্য বিরাট কল্যাণ ও প্রাপ্তি বিবরণ রয়েছে, যা একজন প্রকৃত রোজাদার পেয়ে থাকেন।

* রোজার প্রতিদান আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন:

প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সাওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে। যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে সাওয়াব বা পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি অন্য সকল আমলের সাওয়াব থেকে আলাদা। কারণ, রোজার সাওয়াব বা প্রতিদান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার বিশেষ ঘোষণা রয়েছে। ইসলামের অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে এমন অনন্য সুযোগ আর একটিও নেই। একটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সাওয়াব দশগুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোজা আলাদা। কেননা, তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করবো। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে’ (মুসলিম শরিফ: ১১৫১)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে রোজা রেখেছে আমারই জন্য। আমি নিজেই তার পুরস্কার দেবো আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ’ (বোখারি শরিফ: ১৮৯৪)। হাদিসে এমনও বলা হয়েছে যে: ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো’ (বোখারি শরিফ: ১৯০৪)। রোজার এতো বড় প্রতিদানের কারণ এটাও হতে পারে যে, রোজা ধৈর্য্যরে ফলস্বরূপ। আর ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তায়ালার সুসংবাদ হলো: ‘ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সাওয়াবের অধিকারী হবে’ (সুরা যুমার: আয়াত ১০)।     

* আল্লাহ তায়ালা রোজাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন:

এটা তো পরম সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তায়ালা রোজাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন। একটি হাদিসে হযরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে: ‘আল্লাহ তায়ালা নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন’ (মুসনাদে বাযযার: ১০৩৯)। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। কিয়ামতের দিন রোজাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোজাদার ব্যতিত অন্য কারো আগমন ঘটবে না’ (মুসনাদে বাযযার: ৮১১৫)।

* রোজা জান্নাত লাভের পথ হবে:

সকল আমলই জান্নাতের পথকে সুগম করে। কিন্তু রোজা সুনির্দিষ্টভাবে জান্নাত লাভের পথ বা পন্থা। হযরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ‘আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম। তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলে মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, মৃত্যুর পর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সাদাকা করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩৩২৪)। হযরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে: ‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো। তিনি (মহানবী) বলেন, তুমি রোজা রাখ। কেননা, এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি (মহানবী) বললেন, তুমি রোজা রাখ’ (মুসনাদে আহমাদ: ২২১৪৯)। 

* রোজাদার জান্নাতে প্রবেশ করবে রাইয়্যান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে:

রোজাদার শুধু জান্নাতেই প্রবেশ করবে না, বরং এবটি বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যে সুযোগ কেবলমাত্র রোজাদারদের জন্য নির্ধারিত। হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘জান্নাতের একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়্যান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোজাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোজাদারগণ? তখন তারা উঠে দাঁড়াবে। তারা ব্যতিত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোজাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে অন্য কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না’ (বোখারি শরিফ: ১৮৯৬)। হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘জান্নাতে রোজাদার ব্যক্তির জন্য একটি বিশেষ দরজা আছে। যার নাম রাইয়্যান। রোজাদারগণ ছাড়া অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন সর্বশেষ রোজাদার ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে জান্নাতের পানীয় পান করবে। আর যে পান করবে সে কখনো পিপাসার্ত হবে না’ (তিরমিজি শরিফ: ৭৬৫)। আরেক হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক প্রকাশের নেক আমলকারীর জন্য জান্নাতে একটি করে বিশেষ দরজা থাকবে। যার যে আমলের প্রতি অধিক অনুরাগ ছিল, তাকে সে দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে। রোজাদারদের জন্যেও একটি বিশেষ দরজা থাকবে, যা দিয়ে তাদেরকে ডাকা হবে। সেই দরজার নাম রাইয়্যান।  হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ, এমন কেউ কি হবেন, যাকে সকল দরজা থেকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য আহ্বান করা হবে? তিনি (মহানবী) বললেন, হ্যাঁ, আমি আশা করি তুমিও তাদের একজন হবে’ (মুসনাদে আহমাদ: ৯৮০০)। 

* রোজা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে:

হযরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব, আমি তাকে পানাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। অতঃপর তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’ (মুসনাদে আহমাদ: ৬৬২৬)।

*রোজাদারের সকল গোনাহ মাফ হবে:

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (বোখারি শরিফ: ৩৮২০১৪)। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করেছেন। আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবির নামাজ সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা ও তারাবির নামাজ আদায় করবে, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যে দিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছিল’ (মুসনাদে আহমাদ: ১৬৬০)।

*রোজা পালন গোনাহের কাফফারা স্বরূপ:

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘মানুষের জন্য তার পরিবার, ধন-সম্পদ, তার নফস, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী ফিতনা স্বরূপ। তার কাফফারা হলো নামাজ, রোজা, দান-সাদাকাহ, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’ (মুসলিম শরিফ: ৫২৫)। এজন্য ফরজ রোজার পাশাপাশি নফল রোজার মাধ্যমে পাপের ক্ষমা চাওয়া উচিত।

*রোজাদারের দোয়া কবুল হয়:

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করে তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’ (ইবনে মাজা: ১৭৫৩)। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। ন্যায়পরায়ন শাসকের দোয়া, রোজাদার ব্যক্তির দোয়া, ইফতারের সময় পর্যন্ত দোয়া ও মজলুমের দোয়া। তাদের দোয়া মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, আমার ইজ্জতের কসম, বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাদের সাহায্য করবো’ (মুসনাদে আহমাদ: ৮০৪৩)। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না’ (মুসন্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৮৯৯৫)।

*রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত:

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে, তখন তার রোজার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে আর আল্লাহ তাকে পুরস্কার দেবেন, তখন সে আনন্দিত হবে’ (মুসনাদে আহমাদ: ৯৪২৯)। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশির সময় রয়েছে। একটি হলো, ইফতারের সময় এবং অপরটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়’ (মুসলিম শরিফ: ১১৬১)।

* রোজাদার পরকালে সিদ্দিকীন ও শহীদগণের সাথে থাকবে:

হযরত আমর ইবনে মুররা আল জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমি যদি এ কথার সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসুল আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি, জাকাত প্রদান করি, রমজান মাসের সিয়াম (রোজা) ও কিয়াম (তারাবি ও অন্যান্য নফল-নামাজ আমল) আদায় করি, তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হবো? তিনি (মহানবী) বললেন, সিদ্দিকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে’ (ইবনে হিব্বান: ৩৪২৯)।

* রোজা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে:

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: ‘সবরের মাসের (রমজান মাস) রোজা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের (আইয়ামে বীয) রোজা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৩০৭০)। বস্তুত রোজার ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য মানবজবিনে বহুমাত্রিক, যা একমাত্র রোজাদারগণই পেয়ে থাকেন।

   

শিক্ষাদানের শর্তে যে যুদ্ধের বন্দিরা মুক্তি পায়



মাওলানা সাইফুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সহযোগিতায় আসমান থেকে ফেরেশতা এই পাহাড়ে অবতীর্ণ হয়, বর্তমান নাম জাবালে মালাইকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বদর যুদ্ধে বিপুলবৈভব কুরাইশদের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অভাবনীয় বিজয় অর্জিত হয়। এই যুদ্ধে ৭০ জন কুরাইশ যোদ্ধা নিহত হয় এবং সমপরিমাণ ব্যক্তি বন্দি হয়। যুদ্ধ শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছার পর সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে যুদ্ধবন্দিদের ব্যাপারে পরামর্শ করলেন। হজরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ওরা তো চাচাতো ভাই এবং আমাদের আত্মীয়-স্বজন। আমার মত হলো, ওদের কাছ থেকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোক। এতে অর্জিত সম্পদ অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের শক্তিতে পরিণত হবে। আর এমনও হতে পারে, আল্লাহতায়ালা তাদের হেদায়েত দেবেন এবং তারা একসময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে।

হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) ভিন্ন মত দিলেন। তিনি বললেন, কুরাইশ যোদ্ধাদের হত্যা করা হোক, যেন ইসলামের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণের সাহস কেউ না পায়। এ ছাড়া এ যুদ্ধবন্দিরা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তাদের অনুপস্থিতি অবিশ্বাসী শিবিরকে দুর্বল করে দেবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবুবকরের পরামর্শ গ্রহণ করলেন। কিন্তু আল্লাহতায়ালা হজরত ওমরের সিদ্ধান্তটিই অধিক সঠিক ছিল বলে জানিয়ে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) নিকটবর্তী একটি গাছের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার কাছে ওদের আজাব এই গাছের চেয়ে নিকটতর করে উপস্থাপন করা হয়েছে। -তারিখে ওমর ইবনে খাত্তাব, ইবনে জওজি, পৃষ্ঠা ৩৬

তবে আল্লাহতায়ালা ফিদইয়া গ্রহণের সিদ্ধান্তের বৈধতা দেন এবং প্রদেয় মুক্তিপণকে মুসলিমদের জন্য হালাল ঘোষণা করেন। তবে আল্লাহতায়ালা এ জন্য করেছেন যে তারা শুধু যুদ্ধবন্দি ছিল না; বরং তারা ইসলাম, মুসলমান ও মানবতার বিরোধী অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।

যুদ্ধবন্দিদের কাছ থেকে নেওয়া মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল এক হাজার থেকে চার হাজার দিরহাম পর্যন্ত। যাদের মুক্তিপণ দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না, তাদের পেশা দক্ষতার বিনিময়ে মুক্তি লাভের সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন- মক্কাবাসী লেখাপড়া জানত। পক্ষান্তরে মদিনায় লেখাপড়া জানা লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। ফলে যাদের মুক্তিপণ প্রদানের সামর্থ্য নেই এবং লেখাপড়া জানে, তাদের সুযোগ দেওয়া হলো যে তারা মদিনায় ১০টি করে শিশুকে লেখাপড়া শেখাবে। শিশুরা ভালোভাবে লেখাপড়া শেখার পর শিক্ষক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন বন্দিকে বিশেষ দয়া করায় তাদের কাছ থেকে ফিদইয়া গ্রহণ করা হয়নি, এমনিতেই মুক্তি দেওয়া হয়। তারা ছিল মোত্তালিব ইবনে হানতাব, সাঈফি ইবনে আবু রেফায়া ও আবু আযযা জুমাহি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তের ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন যে তিনি নবীনন্দিনী হজরত জয়নব (রা.)-র পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

এর কারণ ছিল যে হজরত জয়নব (রা.) আবুল ইবনে আসের ফিদইয়া হিসেবে কিছু সম্পদ পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে একটি হারও ছিল। হারটি হজরত খাদিজা (রা.) হজরত জয়নব (রা.)-কে আবুল আসের ঘরে পাঠানোর সময় উপহারস্বরূপ দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তা দেখে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন এবং আবেগে তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে আসে। তিনি আবুল আসকে ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে সাহাবাদের মতামত চান। সাহাবারা প্রিয় নবী (সা.)-এর এই প্রস্তাব সশ্রদ্ধভাবে অনুমোদন করেন। অতঃপর মহানবী (সা.) তার জামাতা আবুল আসকে এই শর্তে ছেড়ে দেন যে তিনি হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় আসার সুযোগ করে দেবেন। স্বামীর অনুমতি পেয়ে জয়নব (রা.) মদিনায় হিজরত করেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত জায়েদ ইবনে হারেসা এবং অন্য একজন আনসারি সাহাবিকে মক্কায় প্রেরণ করেন। তাদের বলা হয়, তোমরা মক্কার উপকণ্ঠ অথবা জাজ নামক জায়গায় থাকবে। হজরত জয়নব (রা.) তোমাদের কাছ দিয়ে যখন যেতে থাকবেন, তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। এই দুজন সাহাবি মক্কায় গিয়ে হজরত জয়নব (রা.)-কে মদিনায় নিয়ে আসেন। হজরত জয়নব (রা.)-এর হিজরতের ঘটনা অনেক দীর্ঘ এবং মর্মস্পর্শী।

;

ইতিহাস বদলে দেওয়া বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট



মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম
বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

বদর যুদ্ধে যেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাঁবু ছিল সেখানে পরে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে, নাম মসজিদে আরিশ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুসলিম ইতিহাসের প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধ বদর। দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনার উপকণ্ঠে বদর নামক স্থানে মুখোমুখি হয় মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনী। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। ইসলাম ও মুসলিমদের অস্তিত্বের সংগ্রাম। বদর যুদ্ধে আল্লাহতায়ালা অসম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মুসলিম বাহিনীকে বিজয় দান করেন। অস্তিত্বের সংকট থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি দিয়ে অমিত সম্ভাবনার দুয়ারে পৌঁছে দেন।

৬২৪ খ্রিস্টাব্দ তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান সংঘটিত হয়েছিল ইসলামে চিরস্মরণীয় ও গৌরবময় অধ্যায় বদর যুদ্ধ। এটি ছিল সত্য ও মিথ্যার, হক ও বাতিলের, মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যকার ঐতিহাসিক যুদ্ধ, ইসলামের প্রথম যুদ্ধ। মদিনার অদূরে অবস্থিত একটি কূপের নাম ছিল বদর। সেই সূত্রে এই কূপের নিকটবর্তী আঙিনাকে বলা হতো বদর প্রান্তর। এই বদর প্রান্তরেই মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিব নিরস্ত্র মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তার সঙ্গীদের বিজয়ী করেছিলেন হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার মোকাবেলায়।

ঘটনার সূত্রপাত
মদিনায় বইতে থাকা ইসলামের বসন্তের হাওয়া মক্কার কাফেরদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। না জানি কখন এই হাওয়া দমকা হাওয়ায় রূপ নিয়ে তাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়, কিংবা তাদের ব্যবসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই মুসলমানদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অর্থ জোগান ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয় করার উদ্দেশ্যে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কার একটি বিশাল বাণিজ্য কাফেলা শামে গিয়েছিল। মক্কার প্রতিটি ঘর থেকে প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছিল ৪০ জন সশস্ত্র অশ্বারোহী যোদ্ধার পাহারায় এক হাজার মালবাহী উটের একটি বাণিজ্যিক বহর।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিল মুসলমানরাও। তাই যখন তারা শাম থেকে ব্যবসা শেষে অস্ত্র নিয়ে ঘরে ফিরছিল, তখন তাদের ওপর হামলা করার সিদ্ধান্ত হলো। মুসলমানদের আত্মরক্ষার্থে হামলা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। বিষয়টি আবু সুফিয়ান টের পেয়ে দ্রুত সাহায্যের জন্য মক্কায় খবর পাঠায়। তবে খবরটি ছিল, মুসলমানরা আবু সুফিয়ানের কাফেলার ওপর হামলা করেছে। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ আবু জাহেলের নেতৃত্বে এক হাজার সশস্ত্র যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনী মদিনা আক্রমণের জন্য বের হয়। অথচ মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু আবু সুফিয়ানকে আটকানো।

এই যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে যেসব বিষয় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছিল তা ছিল নাখলার খণ্ডযুদ্ধ, কাফেরদের রণপ্রস্তুতি, আবু সুফিয়ানের অপপ্রচার, যুদ্ধপ্রস্তুতির জন্য অহি লাভ ও মক্কাবাসীর ক্ষোভ ইত্যাদি। আর পরোক্ষ কারণ হিসেবে দেখা হয়, মদিনা শরিফে সাফল্যজনকভাবে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কুরাইশদের হিংসা, আবদুল্লাহ বিন উবাই ও ইহুদিদের ষড়যন্ত্র, কুরাইশদের যুদ্ধের হুমকি, তাদের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা, কাফেরদের আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা, ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির ধ্বংসসাধন এবং রাসুল (সা.)-কে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার কাফেরদের অশুভ বাসনা।

যুদ্ধের ফলাফল ও প্রভাব

ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। মহান আল্লাহ এই যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’- সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্টকারী দিন বলে আখ্যা দিয়েছেন। আল্লাহর এই নামকরণ থেকেই বদর যুদ্ধের প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মূলত প্রতিষ্ঠিত শক্তি কুরাইশদের বিরুদ্ধে সদ্যঃপ্রসূত মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য বদর ছিল অস্তিত্বের লড়াই। বদর যুদ্ধের বিজয় ছিল মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রথম রাজনৈতিক স্বীকৃতি। এ যুদ্ধই ইসলামি রাষ্ট্রের পথচলার গতিপথ নির্ধারণ করে দিয়েছিল। বদর যুদ্ধের পূর্বাপর অবস্থা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, এই যুদ্ধ শুধু মদিনা নয়; বরং সমগ্র আরব উপদ্বীপে মুসলিম উম্মাহর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছিল।

ঐতিহাসিকরা মনে করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় যে ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল, তার প্রকৃত প্রতিষ্ঠা বদর প্রান্তে বিজয়ের মাধ্যমেই হয়েছিল। এই বিজয়ের আগে মদিনার মুসলিমরা ছিল একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় মাত্র। কিন্তু কুরাইশদের মতো প্রতিষ্ঠিত শক্তির বিরুদ্ধে সামরিক বিজয় এই ধারণা পাল্টে দেয় এবং আরব উপদ্বীপে মদিনার মুসলিমদের একটি রাজনৈতিক পক্ষের মর্যাদা এনে দেয়। শুধু তা-ই নয়, বদর যুদ্ধ আরবের বহু মানুষের হৃদয়ের সংশয় দূর করে দেয় এবং তারা ইসলাম গ্রহণের সৎসাহস খুঁজে পায়। এ ছাড়া অসম শক্তির বিরুদ্ধে এই অসাধারণ বিজয় মুসলিম উম্মাহর জন্য অনন্ত অনুপ্রেরণার উৎস।

আরবের অমুসলিমদের ওপরও বদর যুদ্ধের প্রভাব ছিল অপরিসীম। বদর যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীর ৭০ জন নিহত হয়। তাদের বেশির ভাগই ছিল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ও খ্যাতনামা আরব বীর। আবু জাহেল, উতবা ইবনে রাবিয়া, শায়বা ইবনে রাবিয়া, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা, নদর বিন হারেস ও উমাইয়া বিন খালাফের মতো কুরাইশ নেতাদের করুণ মৃত্যু তাদের হৃদয়াত্মাকে কাঁপিয়ে দেয় এবং তাদের চোখ থেকে অহমিকার পর্দা সরে যায়। কারণ সমকালীন ইতিহাসে কুরাইশ গোত্রের এমন বিপর্যয় আরবরা দেখেনি।

এ ছাড়া বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর বিজয় কুরাইশদের অবাধ বাণিজ্য এবং আরবের অন্যান্য গোত্রের ওপর অন্যায় প্রভাব খাটানোর পথ বন্ধ করে দেয়। মদিনার উপকণ্ঠে ডাকাতি ও লুণ্ঠনের যে ধারা যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল- যার পেছনে কুরাইশ নেতাদের সহযোগিতা ও প্রশ্রয় ছিল, তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুসলিম বাহিনীর এই বিজয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে মদিনা ও আশপাশের সর্বস্তরের মানুষ। তারা স্বাগত জানায় সত্যপক্ষের এই মহান বিজয়কে।

;

পটিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পটিয়া মাদ্রাসা ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন, ছবি : সংগৃহীত

পটিয়া মাদ্রাসা ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদের সংবাদ সম্মেলন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গত ১৪ ফেব্রুয়ারির মজলিসে শুরাকে অবৈধ আখ্যায়িত করে এই শুরার মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মহাপরিচালক করে শতবর্ষী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পটিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাবেক কৃতি শিক্ষার্থী, শুভানুধ্যায়ী ও নিপীড়িত শিক্ষক-ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত পটিয়া মাদ্রাসা ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান মিলনায়তনে ঐতিহ্য পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বিতর্কিত মজলিসে শুরায় উপস্থিত মুরব্বিরা মহাপরিচালক মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাহর প্রতি সুবিচার করেননি। তারা মাওলানা ওবাইদুল্লাহর কোনো বক্তব্য শ্রবণ কিংবা আত্মপক্ষ সমর্পণের সুযোগ দেননি। এর ফলে তাদের প্রতি অভিভাবকসুলভ যে আস্থা ও বিশ্বাস জাতির ছিল, তা ক্ষুন্ন হয়েছে মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, পটিয়া মাদ্রাসায় বর্তমানে যে ব্যক্তিকে মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে তিনি একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এহসান এসের চেয়ারম্যান হিসেবে গরিব গ্রাহকদের শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুই ডজন মামলা বিচারাধীন রয়েছে। পটিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রদের ফুঁসলিয়ে যে নজিরবিহীন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটানো হয়েছে, মুরব্বিরা সেগুলোকে অনুমোদন দিয়েছেন এবং অপরাধীদের রক্ষা করেছেন।

সেগুনবাগান তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা কমপ্লেক্সের পরিচালক হাফেজ মোহাম্মদ তৈয়বের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ফটিকছড়ি জামিয়া ইসলামিয়া বায়তুল হুদার মুহতামিম ও জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মজলিসে শুরার সদস্য হজরত মাওলানা এমদাদুল্লাহ নানুপুরী, শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আলীম, জামিয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামের সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা নুরুল আমীন মাদানি, পটিয়া পৌরসভার সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ ইবরাহীম, ছনহারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন, মাওলানা আবদুল আজীজ, মাওলানা আমিনুর রশীদ পটিয়াবী, মাওলানা কুতুবুদ্দীন, মাওলানা হোসাইন আহমদ ও মাওলানা উজাইরুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ২৮ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলার পর বিভিন্ন নিপীড়িত শিক্ষক-ছাত্রসহ মাওলানা জামালুদ্দীন, মাওলানা বোরহানুদ্দীন, মাওলানা সগির আহমদ চৌধুরী, হোযাইফা মালিক, জুবাইর ও সোহরাব হোসেন আইমন।

এক প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, হেফাজতে ইসলাম বা পটিয়া মাদ্রাসার কারও সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা পছন্দ-অপছন্দ নেই। হেফাজতে ইসলামের কতিপয় নেতা পটিয়ার ঘটনায় যে অনাধিকার চর্চা ও অনৈতিক হস্তক্ষেপ করছেন তা তাদের ব্যক্তিগত, এতে হেফাজতের সাধারণ কর্মি-সমর্থকদের কোনো সমর্থন নেই। উপর্যুক্ত ব্যক্তিবর্গ হেফাজতকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছেন বলে নেতৃবন্দ মন্তব্য করেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, যারা এই হস্তক্ষেপ করছেন তাদের নিজেদের মাদ্রাসায় কোনো শুরা নেই, পরিবারতন্ত্রই সেখানে নিয়ম, আয়-ব্যয়ের হিসাব নেই, কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই। অনেকে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার সুযোগ্য পরিবারকে অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করে দখলদারিত্ব কায়েম করে আছেন। কিন্তু পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক হবেন যোগ্যতার ভিত্তিতে, নিয়ম ও সংবিধানের আলোকে। পরিবারতন্ত্র, দখলদারিত্ব ও সন্ত্রাসী হামলা করে দুর্নীতিবাজদের পদায়ন পটিয়া মাদ্রাসার ঐতিহ্যের পরিপন্থী।

সংবাদ সম্মেলন থেকে পটিয়া মাদ্রাসায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি নতুন শুরা গঠনের নামে প্রহসনমূলক সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সেই সঙ্গে সরকার, প্রশাসন ও সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ জনগণের প্রতি আমাদের দাবি হলো-

পটিয়া মাদ্রাসা ইত্তেহাদুল মাদারিসের সংবিধান অনুযায়ী নিয়মাতিন্ত্রক ও বৈধ মজলিসে শূরার মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালনার ব্যবস্থা। ২৮ অক্টোবর (২০২৩) মাদ্রাসায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং মাদ্রাসার মহাপরিচালক হিসেবে মাওলানা ওবাইদুল্লাহ হামযাহর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহের সত্যতা যাছাইয়ে নিরপেক্ষ নিরপেক্ষ কমিটি গঠন। তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও দাবি জানানো হয়, পক্ষপাতদুষ্ট মুরব্বিদের বিভিন্ন মাদ্রাসায় আধিপত্যবাদী কর্মকাণ্ড বন্ধ এবং সন্ত্রাসে উস্কানি ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া এবং মাদ্রাসার স্থাবর সম্পত্তিতে জবরদখল, দুর্নীতি ও মধ্যস্বত্ত্বভোগের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী দোকান, মার্কেট ও ভাড়া বাসাসমূহের ভাড়া নির্ধারণ করে সুচারু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাদ্রাসার প্রাপ্য হক যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা।

;

২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: ধর্মমন্ত্রী



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: ধর্মমন্ত্রী

২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে: ধর্মমন্ত্রী

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল
মডেল। বিশ্বের ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। আমাদের এই অগ্রযাত্রার মূল নিয়ামক স্বাধীনতা।

বুধবার (২৭ মার্চ) সকাল ১০টায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঐতিহাসিক নেতৃত্ব এবং দেশের উন্নয়ন” শীর্ষক আলোচনা সভা ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি
এসব কথা বলেন।

ধর্মমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার
কাজ করে যাচ্ছেন। সবাই মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মুঃ আঃ হামিদ জমাদ্দার। সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মহা.
বশিরুল আলম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিচালক মোঃ হাবেজ আহমেদ। এতে অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ ফজলুর রহমান, প্রতিটি জেলা উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক মো. নজিবর রহমান, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক এ এস এম শফিউল আলম তালুকদার, পরিচালকবৃন্দ ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সহকারী পরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম।অনুষ্ঠান শেষে দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।

;