জীবন-জীবিকার অনিশ্চয়তায় করোনাকালের ঈদ

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান প্রলয়ঙ্করী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে আরেকটি ঈদ এসেছে। গত বছরেও করোনার মধ্যে মুসলমানদের দুটি ঈদ উৎসব ছাড়াও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণ, খ্রিস্টানদের ক্রিসমাস, বৌদ্ধদের পূর্ণিমা, ইহুদিদের সাবাথ, জরাথ্রুস্টদের নওরোজ ইত্যাদি সীমিতভাবে পালিত হয়। ধর্মীয় ছাড়াও সামাজিক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলার অসংখ্য অনুষ্ঠান বিশ্বব্যাপী স্থগিত হয়েছে।  এমনই পটভূমিতে জীবনের নিরাপত্তা আর জীবিকার অনিশ্চয়তার দোলাচলে ২০২১ সালের ঈদ নিয়ে এসেছে আনন্দ-বেদনার চালচিত্র।

উৎসব বলতে যে নিরেট ও অকৃত্রিম আনন্দের হুল্লোড়, তা কারোনাকালের কোনও উৎসবেই নেই, ঈদের ক্ষেত্রেও থাকার কোনও কারণ নেই। অধিকাংশ মানুষও গৃহবন্দি বা লকডাউনের সম্মুখীন। জীবন হারানোর ভয়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই হারিয়েছেন জীবনের অবলম্বন। চাকরি বা পেশা হারানো মানুষ কেবল উন্নয়নশীল দেশেই নয়, উন্নত দেশেও গিজগিজ করছে। করোনা শুধু জীবনের ক্ষতি করেই ক্ষান্ত থাকছে না, জীবিকাও ক্ষতি করে চলেছে।

বিজ্ঞাপন

তবে, জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও জীবিকার অনিশ্চয়তার মধ্যেও মানুষের উৎসব থেমে থাকেনা। শখ ও আহ্লাদ পূর্ণ করার জন্য মরিয়া মানুষের অভাব নেই সমাজ-সংসারে। বিশেষত কৃচ্ছ্রসাধনার রমজানের রোজা পালনের শেষে বাংলাদেশে উৎসব পালনের যে উদগ্র আগ্রহ মানুষের মধ্যে দেখা গেলো, তা অভাবনীয় এবং অকল্পনীয়।

ঈদযাত্রা, ঈদ মার্কেটিং-এর পেল্লায় মচ্ছব দেখে মালুম হয় না যে মানুষগুলো সদ্যই এক মাস রিপু ও কামনা সঙ্গে লড়াই করেছে। ঈদের মাহেন্দ্রক্ষণের আবাহন হতেই অধিকাংশ মানুষ এক মাসের লড়াই অবলীলায় সাঙ্গ করে এবং কৃচ্ছ্রব্রতের যাবতীয় চেতনা ও মূল্যবোধ বেমালুম ভুলে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন হাট, বাজার, মার্কেট, মল, পথঘাট ও ঈদযাত্রায়।

বিজ্ঞাপন

আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেশে ও বিশ্বে যে একটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের থাবায় অকাতরে মানুষ মরছে, সে খেয়ালও মার্কেটিং-রত এবং ঈদযাত্রা-রত মানুষগুলোর নেই! জীবনকে ভাইরাস ও বিপজ্জনক ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে উৎসবের অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার মতো উদ্যমী মানুষ বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যত্র খুব একটা নেই। এমনকি, ঈদযাত্রাকালে করোনার বিপদের পাশাপাশি সড়কে, ট্রেনে, ফেরিতে জীবন বিপন্ন করতেও পিছপা হয় না বাংলাদেশের মানুষ।

এদেশে মারি, বন্যা, মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির মধ্যে অতীতের মতো এবারের করোনা পেন্ডামিকে ঈদ উৎসব সফল ও আনন্দময় হবে বলেই আশা করা যায়। তবে, পার্শ্ববর্তী ভারতে করোনার মারাত্মক আঘাতে যেভাবে মৃত্যুর মিছিল চলছে এবং যার জন্য কুম্ভমেলা উৎসবকে দায়ী করা হচ্ছে, তেমন কিছু আমাদের ক্ষেত্রে ঘটুক, তা আমরা কেউই প্রত্যাশা করিনা। ঈদ উৎসবের বাড়াবাড়ি রকমের জনচলাচলকে করোনা বিস্তারের জন্য অনুঘটক বলে চিহ্নিত করার সুযোগ যেন না ঘটে, সেটাই সবার কামনা।

এজন্য সরকারের নির্দেশাবলী তথা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মান্য করার ক্ষেত্রে মানুষকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল হতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, ঈদ উৎসবের মতো আনন্দের আয়োজনের সূত্রে যেন বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়। চলমান করোনা মহামারির প্রকোপ ও প্রভাব যেন উৎসবের কারণে মানুষের ব্যাপক মুভমেন্টের মধ্য দিয়ে বৃদ্ধি না পায়। এবং উৎসব যেন আনন্দ, সুখ ও নিরাপত্তার বিষয় হয়, বিপদ ও অনুশোচনার কারণ না হয়।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।