কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য এখনও উদঘাটন করে শেষসকরতে পারেনি গবেষকরা

কোরআনে কারিমের শব্দ ও আয়াতের পুনরাবৃত্তির রহস্য এখনও উদঘাটন করে শেষসকরতে পারেনি গবেষকরা

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআনে কারিমের অনেক জায়গায়ই একের সঙ্গে অন্যের তুলনা উপস্থিত করা হয়েছে। এ তুলনা উপস্থিত করার ব্যাপারে একটি অবিশ্বাস্য মিল লক্ষ্য করা গেছে এবং তা হচ্ছে, সে দু’টি নাম অথবা বস্তুকে আল্লাহতায়ালা তার কিতাবে সমান সংখ্যায় উল্লেখ করেছেন। এ তুলনার ক্ষেত্রে আরেকটি অলৌকিক বিষয় হলো, যেখানে তুলনাটি অসম সেখানে সংখ্যা দু’টিকেও অসম রাখা হয়েছে। যেমন, কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘সুদ’ এবং ‘বাণিজ্য’ এক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ শব্দ দু’টির একটি কোরআনে এসেছে ছয় বার এবং অন্যটি এসেছে সাত বার।

বলা হয়েছে, জান্নাতের অধিবাসী আর জাহান্নামের অধিবাসী সমান নয়।’ জান্নাতের সংখ্যা হচ্ছে- আট আর জাহান্নামের সংখ্যা সাত। কিন্তু ‘জান্নাত’ ও ’জাহান্নাম’ শব্দ দু’টো কিন্ত একই রকম এসেছে, মোট ৭৭ বার করে।

ঠিক তেমনিভাবে ‘কাজ’ এর পরিণাম হচ্ছে- ‘বিনিময়’, তাই দু’টো শব্দ এসেছে ১০৭ বার করে। কাউকে ভালোবাসলে তার আনুগত্য করা যায়, তাই এ দু’টো শব্দও কোরআনে সমান সংখ্যক অর্থাৎ ৮৩ বার করে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘নারী ও পুরুষ’- যে আল্লাহর কাছে সমান তা কোরআনে এই শব্দ দু’টোর সমান সংখ্যা থেকেই আমরা বুঝতে পারি। কোরআনে এ দু’টো শব্দ এসেছে ২৪ বার করে।

সুরা ‘আরাফ’-এর এক আয়াতে আছে ‘যারা আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ অস্বীকার করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- কুকুরের মতো।’ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আমরা দেখি, ‘যারা আমার সুস্পষ্ট আয়াতকে অস্বীকার করে’ এ বাক্যটি কোরআনে সর্বমোট পাঁচবার এসেছে। যেহেতু তাদের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে কুকুরের সঙ্গে, তাই সমগ্র কোরআনে ‘আল কালব’ তথা কুকুর শব্দটাও এসেছে পাঁচবার।

‘সাবয়া সামাওয়াত’ কথটির অর্থ হলো- ‘সাত আসমান।’ আশ্চর্যের বিষয় হলো, কোরআনে এ ‘সাত আসমান’ কথাটা ঠিক সাত বারই এসেছে। ‘খালকুস সামাওয়াত’ আসমানসমূহের সৃষ্টির কথাটাও সাত বার এসেছে, সম্ভবত আসমান সাতটি তাই। ‘সাবয়াতু আইয়াম’ মানে ৭ দিন। এ কথাটাও কোরআনে সাতবার এসেছে। ‘সালাওয়াত’ শব্দটি সালাত এর বহুবচন। কোরআনে সালাওয়াত শব্দটি ৫ বার এসেছে, সম্ভবত ৫ বার নামাজ ফরজ হওয়ার কারণে এটা এভাবে বলা হয়েছে।

‘দুনিয়া ও আখেরাত’ এ দু’টি কথাও কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে সর্বমোট ১১৫ বার করে। ‘ঈমান ও কুফর’ শব্দ দু’টোও সমপরিমাণ বলা হয়েছে, অর্থাৎ ২৫ বার করে। ‘উপকার ও ক্ষতি’ সমভাবে এসেছে ৫০ বার করে। ঠিক একইভাবে ‘শান্তি’ ও ‘অশান্তি’ শব্দটি এসেছে ১৩ বার করে। ‘গরম ও ঠান্ডা’ যেহেতু দু’টো বিপরীতমুখী ঋতু তাই এ শব্দ দু’টো কোরআনে ৫ বার করে এসেছে। ‘সূর্য’ আলো দেয় বলে দু’টো শব্দই কোরআনে সমান সংখ্যায় এসেছে, ৩৩ বার করে।

কাজ করলে কাজের পুরস্কার দেওয়া হবে বলেই সম্ভবত ‘কাজ করা’ ও ‘পুরস্কার’ শব্দটি এসেছে ১০৮ বার করে। আরবি ভাষায় ‘কুল’ মানে ‘বলো’ তার জবাবে বলা হয় ‘কালু’ মানে ‘তারা বললো।’ সমগ্র কোরআনে এ দু’টো শব্দও সমান সংখ্যক, অর্থাৎ ৩৩২ বার করে এসেছে। ‘বক্তৃতা’ বা ‘ভাষণ’ ‘মুখ’ থেকে আসে তাই তাই উভয় শব্দ এসেছে ২৫ বার করে।

আর রাসুল শব্দটি এসেছে ৫০ বার, আর যাদের কাছে রাসুলদের পাঠানো হয়েছে সে মানুষের কথা এসেছে ৫০ বার। পুণরাবৃত্তিসহ কোরআনে সব নবীদের নাম এসেছে ৫১৩ বার। বিস্ময়ের ব্যাপার রাসুল শব্দের মূল ধাতু অর্থাৎ ‘রেসালাহ’ শব্দটিও কোরআনে ৫১৩ বার।

জিহবা দিয়ে মানুষ বক্তৃতা দেয় বলে, ‘জিহবা’ ও ‘বক্তৃতা’ শব্দটি সমান সংখ্যক ৫০ বার করে এসেছে। মানুষ যখন জনগণের নিকট থাকে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাকে একটু জোরে কথা বলতে হয়, তাই কোরআনে ‘জোরে কথা বলা’ ও ‘জনগণের সামনে’ এ উভয়টাই এসেছে ১৬ বার করে।

আলোর সঙ্গে সম্পর্ক মানুষের মানুষের মনের। মনে আলো জ্বললেই তা দিয়ে দুনিয়ায় আলো ছড়ানো যায়। এ কারণেই সম্ভবত ‘মন’ ও ‘আলো’ শব্দ দু’টি কোরআনে একই সংখ্যায় এসেছে, মোট ৪৯ বার করে।

আল্লাহতায়ালা ‘বিপদে’ ‘শোকর’ আদায় করতে বলেছেন, তাই এই উভয় শব্দ এসেছে ৭৫ বার করে। আল্লাহর ‘রহমত’ হলে ‘হেদায়েত’ আসে তাই এই শব্দ দু’টো ও সমান সংখ্যায় এসেছে ৭৯ বার করে। কোরআনে ‘খেয়ানত’ শব্দটি এসেছে ১৬ বার, আর যে খেয়ানত করে সে একজন ‘খবিস’ কিংবা খারাপ লোক, তাই এ শব্দটিও এসেছে ১৬ বার। ‘মালাকুন’ কিংবা ‘মালায়েকা’ মানে ফেরেশতা কিংবা ফেরেশতারা। কোরআনে এটি এসেছে ৮৮ বার, একইভাবে ফেরেশতার চির শত্রু ‘শয়তান’ কিংবা ‘শায়াতীন’ এটিও এসেছে ৮৮ বার।

আবার ‘আল খাবিস’ মানে অপবিত্র, ‘আত তাইয়্যেব’ মানে পবিত্র, সমগ্র কোরআনে এ দু’টি শব্দমোট ৭ বার করে অর্থাৎ একই সংখ্যায় নাজিল হয়েছে। প্রশ্ন জাগতে পারে দুনিয়ায় ভালোর চাইতে মন্দ তো বেশি, এখানে দু’টো শব্দ সমান রাখা হলো কিভাবে? এ কথার জবাবের জন্য কোরআনের ‘সুরা আনফালের ৩৭ নম্বর আয়াতটির দিকে লক্ষ করা যাক। এখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘অপবিত্রকে পবিত্র থেকে আলাদা করার জন্য তিনি অপবিত্রকে একটার ওপর আরেকটা রেখে তাকে পুঞ্জীভূত করেন এবং সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে ফেলে দেনে।’ এতে বুঝা যায়, যদিও পাপ পুণ্য সমান সংখ্যায় এসেছে, কিন্তু পুঞ্জীভূত করা দিয়ে তার পরিমাণ যে বেশি তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘ইয়াওমুন’ মানে ‘দিন’ সমগ্র কোরআনে এ শব্দটি ৩৬৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। বছরে যে ৩৬৫ দিন এটা কে না জানে। ইয়াওমুন শব্দের বহুবচন ‘আইয়াম’ মানে দিনসমূহ, এ শব্দটি এসেছে ৩০ বার। আরবি ভাষায় চাঁদ হচ্ছে- মাসের সূত্র সুচক, গড়ে বছরের প্রতি মাসে ৩০ দিন, আর এটাই হচ্ছে চন্দ্র বছরের নিয়ম। হতবাক হতে হয় যখন দেখি, চাঁদের আরবি প্রতিশব্দ ‘কামার’ শব্দটি কোরআনে মোট ৩০ বারই এসেছে। ‘শাহরুন’ মানে মাস, কোরআন মাজিদে এ শব্দটি এসেছে মোট ১২ বার। ‘সানাতুন’ মানে বছর, কোরআনে এ শব্দটি এসেছে ১৯ বার। কারণ হিসেবে আমরা সম্প্রতি আবিস্কৃত গ্রীক পন্ডিত মেতনের মেতনীয় বৃত্তের কথা উল্লেখ করতে পারি। তিনিই প্রথমে এ তত্ব আবিস্কার করেন যে, প্রতি ১৯ বছর পর সূর্য ও পৃথিবী একই বৃত্তে অবস্থান করে।

কোরআনের আরেকটি বিস্ময়কর শব্দ হচ্ছে- ‘রাত’ ও ‘রাতগুলো’, এ উভয় সংখ্যা কোরআনে এসেছে সর্বমোট ৯২ বার, ‘আল লাইল’ অর্থাৎ রাত নামের সুরাটির ক্রমিক সংখ্যাও হচ্ছে- ৯২।

কোরআনে চাঁদ শব্দটি সর্বমোট ২৭ স্থানে এসেছে। আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, চাঁদ পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষীণ করতে সময় লাগে ঠিক ২৭.০৩ দিন অর্থাৎ ২৭ দিন ৭ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। কোরআনে ‘ফুজ্জার’ পাপী শব্দটি যতবার এসেছে, ‘আবরার’ পুণ্যবান শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে। অর্থাৎ ‘ফুজ্জার’ ৩ বার আর ‘আবরার’ ৬ বার। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহ সবসময় শাস্তির তুলনায় পুরস্কারের পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন।

কোরআনের সুরা সাবার ৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘এ ধরণের লোকদের জন্য (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে। এটা হচ্ছে বিনিময় সে কাজের যা তারা দুনিয়ায় করে এসেছে।’ এ কারণেই দেখা যায়, গোটা কোরআনে ‘পাপী’ ও ‘পুণ্যবান’ শব্দের মতো, ‘আজাব’ শব্দটি যতবার এসেছে ‘সওয়াব’ শব্দটি তার দ্বিগুণ এসেছে।

কোরআনে একাধিক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করলে তিনি তার বিনিময় বাড়িয়ে দেবেন। সম্ভবত এ কারণেই কোরআনে ‘গরীবী’ শব্দটি এসেছে ১৩ বার, এর বিপরীতে ‘প্রাচুর্য’ শব্দটি এসেছে ২৬ বার।

কোরআন কারিমের বিভিন্ন জায়গায় এভাবে গাণিতিক সংখ্যার অদ্ভতু মিল দেখে যেকোনো কোরআন পাঠকই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভাবতে থাকে, এটা নিঃসন্দেহে কোনো মানুষের কথা নয়।

কোনো একটা কাজ করলে তার যে অবশ্যম্ভাবী ফল দাঁড়াবে তার উভয়টিকে আশ্চর্যজনকভাবে সমান সংখ্যায় বর্ণনা করা হয়েছে। ‘গাছের চারা’ উৎপাদন করলে ‘গাছ’ হয়। তাই এ দু’টো শব্দই এসেছে ২৬ বার করে। কোনো মানুষ ‘হেদায়েত’ পেলে তার প্রতি ‘রহমত’ বর্ষিত হয়, তাই এ দু’টো শব্দ কোরআনে এসেছে ৭৯ বার করে। হেদায়েতের অপরিহার্য পরিণাম হচ্ছে- ‘মউত’ এ শব্দ দু’টোও এসেছে ১৬ বার বরে।

আল্লাহ বলেছেন, ‘জাকাত’ দিলে ‘বরকত’ আসে, তাই কোরআনে কারিমে ‘জাকাত’ শব্দ এসেছে ৩২ বার ‘বরকত’ শব্দও এসেছে ৩২ বার। ‘আবদ’ মানে গোলামি করা, আর ‘আবিদ’ মানে গোলাম। গোলামের কাজ গোলামি করা, তাই কোরআনে এই উভয় শব্দই এসেছে ১৫২ বার করে। মানুষ ‘সৃষ্টি’ কথাটা এসেছে ১৬ বার, আর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে- ‘ইবাদত’ তাই এ শব্দটিও এসেছে ১৬ বার।

‘নেশা’ করলে মাতাল হয়, তাই এ দু’টো শব্দ এসেছে ৬ বার করে। প্রতিটি ‘দুঃখ কষ্টে’ আল্লাহ মানুষের ধৈর্য ধরতে বলেছেন- কোরআনে এই উভয় শব্দেই এসেছে ১০২ বার করে। ‘উপকার’ ও ‘ক্ষতি’ এসেছে ৫০ বার করে। আল্লাহ আমাদের শয়তান থেকে আশ্রয় চাইতে বলেছেন, সম্ভবত এই কারণে কোরআনে যতবার ‘শয়তানের’ নাম এসেছে ঠিক ততবারই ‘আশ্রয় চাওয়ার’ কথাও এসেছে, অর্থাৎ উভয়টাই ১১ বার করে এসেছে।

কোরআনে ‘ইনসান’ শব্দটি এসেছে ৬৫ বার। এবার ইনসান বানানোর উপকরণগুলোকে কোরআনের বিভিন্ন জায়গা থেকে যোগ করে মিলিয়ে দেখা যাক। প্রথম উপাদান ‘তোরাব’ (মাটি) শব্দটি এসেছে ১৭ বার, দ্বিতীয় উপাদান ‘নুতফা’ (জীবনকণা) শব্দ এসেছে ১২ বার, তৃতীয় উপাদান ‘আলাক’ (রক্তপিন্ড) শব্দ এসেছে ৬ বার, চতুর্থ উপাদান ‘মোগদা’ (মাংসপিন্ড) এসেছে ৩ বার। পঞ্চম উপাদান হচ্ছে ‘লাহম’ (হাড়), এটি এসেছে ১৫ বার। সর্বশেষ উপাদান হচ্ছে- ‘লাহম’ (গোশত), এ শব্দটি এসেছে ১২ বার। কোরআনে উল্লিখিত (সুরা হজ ৫)- এ উপাদানগুলো যোগ করলে যোগফল হবে ঠিক ৬৫। আর এসব উপাদান দিয়ে যে ‘ইনসান’ বানানো হয়েছে তাও কোরআনে ঠিক ৬৫ বার উল্লেখে করা হয়েছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনের সুরা ‘আল ক্বামার’- এর প্রথম যে আয়াতটিতে চাঁদ বিদীর্ণ হওয়ার সঙ্গে কেয়ামতের আগমন অত্যাসন্ন কথাটি বলেছেন, আরবি বর্ণমালার আক্ষরিক মান হিসাব করলে তার যোগফল হয় ১৩৯০, আর এ ১৩৯০ হিজরি (১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ) সালেই মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরণ করে, জানি না এটা কোরআনের কোন মোজেযা, না তা এমনিই এক ঘটনাচক্র, কিন্তু আল্লাহতায়ালার এ মহান সৃষ্টিতে তো ঘটনাচক্র বলতে কিছুই নেই। এ কারণেই হয়তো মানুষের চাঁদে অবতরণের সালের সঙ্গে কোরআনের আলোচ্য আয়াতটির সংখ্যামানের এ বিস্ময়কর মিল আমরা দেখতে পাই।

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;