কাবার গিলাফের ক্যালিগ্রাফার বাংলাদেশি মুখতার শিকদার
পবিত্র কাবার গিলাফ ‘কিসওয়া’। কাবার গিলাফে সোনার হরফে আরবি ক্যালিগ্রাফিগুলো আঁকেন এক বাংলাদেশি। নাম মুখতার আলম শিকদার। কিওয়াহ (কাবার ঘরের গিলাফ) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ২০ বছর প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হস্তলিপি ও ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। সৌদি আরবে হস্তলিপি শেখার প্রসিদ্ধ সব পুস্তিকাগুলোও তার রচিত।
আচরণে অমায়িক, ব্যক্তিত্বে সম্ভ্রান্ত ও কথাবার্তায় অত্যন্ত বিনয়ী এ মানুষটি এখন বাংলাদেশের লালসবুজের পতাকার এক নতুন সফলতার গল্পের নায়ক। বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশি নাগরিকদের সৌদি আরবে নাগরিকত্ব দেওয়ার রাজকীয় ঘোষণার পর প্রথম দিনেই তিনি সৌদি আরবের নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।
হারামাইন পরিষদের চেয়ারম্যান, পবিত্র কাবার প্রধান ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস মুখতার আলম শিকদারের হাতে এ সংক্রান্ত চিঠি হস্তান্তর করে তাকে বিশেষ সম্মাননাও দিয়েছেন। সৌদি গেজেট সূত্রে এ খবর জানা যায়।
চলতি মাসের ১১ নভেম্বর (২০২১) সৌদি বাদশাহর এক রাজকীয় নির্দেশনায় বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়া কথা জানানো হয়। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’-এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন পেশার দক্ষ বিদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষে রাজকীয় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সৌদি সংবাদ মাধ্যম আশ শারাক আল আওসাতের বরাত দিয়ে সৌদি গেজেট জানায়, নাগরিকত্ব পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন, পবিত্র কাবার গিলাফের (কিসওয়া) প্রধান ক্যালিগ্রাফার মুখতার আলম, ইতিহাসবিদ ড. আমিন সিদো, ড. আবদুল করিম আল সামমাক, প্রখ্যাত গবেষক ড. মুহাম্মদ আল বাকাই ও প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী সামান আল আনি।
সৌদি গেজেটের প্রতিবেদনে মুখতার আলমের পরিচয়ে বলা হয়, মুখতার আলম বর্তমানে মক্কার কিসওয়া কারখানায় পবিত্র কাবার কিসওয়ার প্রধান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে কাজ করছেন। সৌদি আরবসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রদর্শনীতে তার ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শিত হয়েছে। মক্কার দ্য ইনস্টিটিউট অব হলি মস্ক তথা পবিত্র মসজিদে হারামে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক তার বই পাঠ্য।
মুখতার আলম মক্কার বিখ্যাত উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বর্তমানে পিএইচডি গবেষণা করছেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপ্লোমা, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের সার্টিফিকেটের ক্যালিগ্রাফার হিসেবেও কাজ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সংস্থা থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সনদ পেয়েছেন তিনি।
শৈশব থেকেই ক্যালিগ্রাফির প্রতি আগ্রহী মুখতার আলম জানান, ছোটবেলায় প্রাথমিক স্তরে পড়ার সময় থেকেই তার ক্যালিগ্রাফির প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। এমনকি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াবস্থায় তিনি অন্যদের ক্যালিগ্রাফি শেখাতেন। তাছাড়া সেই ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্থানে ক্যালিগ্রাফি শেখাতেন ও ক্লাস করাতেন।
মুখতার আলম শিকদার ১৩৮২ হিজরি (আনুমানিক ১৯৬২ সাল) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের রশীদের ঘোনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৩৯৮ হিজরি তিনি পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। ১৪১৩ হিজরি তিনি মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলা বিয়য়ে স্নাতক করেন। ১৪২২ হিজরি তিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৪১৬ সাল থেকে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিল্পকলা বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৪২৩ হিজরি থেকে তিনি পবিত্র কাবা ঘরের গিলাফ (কিসওয়া) প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। আরবি ক্যালিগ্রাফি পেশায় তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত কাজ করছেন।
মুখতারের বাবার নাম মুফিজুর রহমান বিন ইসমাঈল শিকদার। মায়ের নাম শিরিন বেগম। তার বাবা কর্মজীবনের শুরুতে কিছুদিন ঐতিহ্যবাহী চুনতি হাকীমিয়া আলিয়া মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘ সময় সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফার্মাসিস্ট হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন। মূলত বাবার কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সময় সৌদিতে কাটিয়েছেন। বর্তমানে মুখতার তার মা, স্ত্রী ও চার মেয়েকে নিয়ে মক্কায় বসবাস করেন।