অকৃতজ্ঞতা মানুষের মন্দ স্বভাব
সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা মানুষকে একমাত্র তার ইবাদত-বন্দেগির জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তাদেরকে এজন্য রিজিক দিয়েছেন যে, তারা তার শোকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) আদায় করবে। তার পরও মুসলিম বাদে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহ ব্যতিত অন্যের ইবাদত করে। আবার মুসলিমদের মধ্যেও অনেকেই তার প্রতি কৃতজ্ঞশীল নয়। কারণ, মানবজাতির মধ্যে অকৃতজ্ঞতার বৈশিষ্ট্য খুবই জোরালো।
অতএব, আপনি যখন দেখবেন, অন্যেরা আপনার করুণাসমূহকে ভুলে যাচ্ছে ও আপনার সদয় আচরণসমূহকে অবজ্ঞা করছে তখন হতাশ হবেন না। কিছু মানুষ যথার্থ কোনো কারণ ছাড়া আপনাকে ঘৃণার সঙ্গেও দেখতে পারে এবং আপনি যে তাদের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন শুধুমাত্র একারণেই আপনাকে শক্র ভাবতে পারে। ‘আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নিজ গুণে সম্পদশালী করেছিলেন, শুধুমাত্র এ কারণ ছাড়া তারা আক্রোশ-পোষণ করার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পায়নি।’ -সুরা তাওবা : ৭৪
ইতিহাসের পাতায় এমন ঘটনা সর্বাপেক্ষা বেশি ঘটে, তা হলো- পিতা-পুত্রের ঘটনা। পিতা-পুত্রকে বড় করে তোলে, প্রতিষ্ঠিত করে, পুত্রের মুখে খাবার তুলে দেয়, তার পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করে এবং তাকে উত্তম শিক্ষা দেয়, পিতা রাতকে রাত বিনিদ্র অবস্থায় কাটায় যাতে করে তার পুত্র আরামে ঘুমোতে পারে, পুত্রের খাবারের জন্য নিজে না খেয়ে থাকে এবং পুত্রের আরামের জন্য নিজে কঠোর পরিশ্রম করে। আর যখন ছেলে বড় হয় ও শক্তিশালী হয় তখন পিতাকে অবাধ্যতা, অসম্মান ও অবজ্ঞার মাধ্যমে পুরস্কৃত করে!
সুতরাং আপনি যে ভালো কাজ করেছেন, তার বিনিময় যদি আপনাকে অকৃতজ্ঞতার মাধ্যমে দেওয়া হয়; তবে আপনি শান্ত থাকুন। এ কথা জেনে আনন্দিত হোন যে, যার অধিকারে (আল্লাহ) সীমাহীন সম্পদ আছে, তিনিই আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।
একথা বলবেন না, অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা থেকে আপনার বিরত থাকা উচিত। বরং আসল কথা হলো, অকৃতজ্ঞতা পাবার জন্যই দান করুন। কেননা, এ মনোভাব থাকলেই আপনি নিশ্চিতভাবে সফল হবেন। অকৃতজ্ঞ লোকেরা আসলে আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এ জন্য আপনি আল্লাহর প্রশংসা করুন। বস্তুত ওই লোক সীমালংঘনকারী আর আপনি অনুগত বান্দা। একথাও মনে রাখুন, দান গ্রহণকারীর চেয়ে দানকারী উত্তম।
‘তারা বলে, (আমরাতো) শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে খাদ্য খাওয়াই। আমরা তোমাদের নিকট না কোনো পুরস্কার আশা করি, আর না কোনো ধন্যবাদ।’ -সুরা আদ দাহর : ৯
অনেকেই অন্যের অকৃতজ্ঞতায় মর্মাহত হন, যেন তারা কখনও (নিম্নোক্ত) এই আয়াত বা এমন অন্যান্য আয়াত দেখেনি, আর তা হলো, ‘আর যখন মানুষকে কোনো মুসিবত (বিপদ) পেয়ে বসে তখন সে শুয়ে, বসে ও দাঁড়ানো অবস্থায় আমার নিকট আকুল আবেদন করে, কিন্তু আমি যখন তার থেকে মুসিবত দূর করে দেই তখন সে এমনভাবে চলে যেন সে কখনও তার ওপর আপতিত মুসিবতের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা করেনি।’ -সুরা ইউনুস : ১২
এ কারণেই, যদি আপনি কাউকে উপহারস্বরূপ একটি কলম দেন আর সে এটাকে আপনার জন্য বিদ্রুপের বিষয় বানায় অথবা আপনি যদি কাউকে ভর দিয়ে হাঁটার জন্য একটি লাঠি দেন আর সে এ লাঠি দিয়ে আপনাকে প্রহার করে তবে আপনি রাগান্বিত হবেন না।