হেফাজতের চতুর্থ মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হেফাজতের চতুর্থ মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা সাজিদুর রহমান

হেফাজতের চতুর্থ মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) আল্লামা সাজিদুর রহমান

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া মহাসচিব পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন হেফাজতে ইসলামের প্রথম যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান।

সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীর জানাজার আগে তাৎক্ষণিক এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে আল্লামা সাজিদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়। জানাজার আগে এ কথা ঘোষণা করেন হেফাজতের সহ-সভাপতি, পীরে কামেল অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী (পীর সাহেব দেওনা)।

বিজ্ঞাপন

আল্লামা সাজিদুর রহমান একইসঙ্গে কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও আল হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া দারুল আরকামের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।

আল্লামা সাজিদুর রহমান ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার অন্তর্গত বেড়তলা গ্রামে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ এলাকায় প্রাথমিক ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জামিয়া ইউনুসিয়ায় মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা থেকে ১৯৮৪ সালে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিস পাস করে মাওলানা সনদ লাভ করেন।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের নাজিরহাট বড় মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু। পরে হাটহাজারী মাদরাসায় তিন বছর শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে আরবি ভাষা ও সাহিত্য এবং হাদিস বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য কাতার গমন করেন। ১৯৯৪ সালে দেশে ফিরে এসে জামিয়া ইউনুসিয়ায় মুহাদ্দিস হিসেবে নিয়োগ পান। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া।

চতুর্থ মহাসিচব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া আল্লামা সাজিদুর রহমান শিক্ষাবিদ ও গবেষক আলেম হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। তার মতো ব্যক্তির কওমি মাদরাসাভিত্তিক ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতার দায়িত্ব পাওয়ায় নেতাকর্মীরা খুশি।

নেতাকর্মীদের মতে, মাত্র এক বছর দুই মাসের একে একে ইন্তেকাল করেছেন হেফাজতের চার জন শীর্ষ নেতা। এভাবে শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুর ঘটনায় সংগঠনটির নেতৃত্বে অপূরণীয় শূণ্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। যে শূন্যতা কখনও পূরণ হওয়ার মতো নয়।

২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেন। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর ১৮ নভেম্বর (২০২০) হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিলে মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সংগঠনটির নতুন আমির এবং ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। এক মাসের মাথায় ১৩ ডিসেম্বর (২০২০) আল্লামা কাসেমীও ইন্তেকাল করেন।

এরপর ২৬ ডিসেম্বর সংগঠনটির মহাসচিব নির্বাচিত হন ঢাকার খিলগাঁও আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদরাসার মহাপরিচালক মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী।

চলতি বছরের ১৯ আগস্ট হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর হেফাজতের আমির হন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাবুনগর মাদরাসার পরিচালক আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। তার বয়স নব্বইয়ের বেশি। আমির হওয়ার পর দুইবার তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে বর্তমানে তিনি অনেকটা সুস্থ।

এদিকে সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদীর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হেফাজতে ইসলাম ব্যাপক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালে। ওই বছর সংগঠনটি দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৩ দফা উত্থাপন করে। দাবিরে পক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল প্রথমে ঢাকা অবরোধ ও ৫ মে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকে।

হেফাজতে ইসলামের ইসলামের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর আমিরের দায়িত্ব পালন করেন আল্লামা আহমদ শফী রহ.। আর মহাসচিবের হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ.।