যে আচরণে উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচয় মেলে
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যা নিয়ে ইসলাম আলোচনা করেনি। ইসলামের সেই আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলা এবং সুন্দর আচরণ করা অন্যতম একটি। ভালো কথা, ভালো ব্যবহার, সুন্দর আচরণ যাই বলি না কেন, এগুলো হচ্ছে একটি শিল্প। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তির সার্বিক পরিচয় প্রকাশ পায়, তার উন্নত ব্যক্তিত্বের প্রমাণ মেলে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন।
মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ কিংবা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট সৃষ্টি করে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা। সুন্দর আচরণ আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। কিন্তু আমরা প্রায়ই অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে ভুলে যাই।
সামান্য একটু অসতর্কতার কারণে আমাদের আচরণে একজন মানুষ অনেক কষ্ট পেতে পারে। তাই আমাদের সবসময় সচেতন থাকা উচিত; যাতে আমাদের আচরণে কেউ বিন্দুমাত্র কষ্ট না পায়। যার আচরণ যত বেশি সুন্দর সবাই তাকে তত বেশি ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। যার আচরণ ভালো নয় সবাই তাকে ঘৃণা করে ও এড়িয়ে চলে।
সুন্দর ব্যবহার সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচয় বহন করে। মানুষের একটি ভালো কথা যেমন একজনের মন জয় করে নিতে পারে, তেমনি একটু খারাপ বা অশোভন আচরণ মানুষের মনে কষ্ট আসে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে আমাদের উচিৎ সর্বদা মানুষের সঙ্গে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা। সুন্দর ব্যবহারের কারণে যে মুখটি প্রিয় হয়, বিপরীতভাবে অসুন্দর ব্যবহার করায় একই মুখটি অপ্রিয় হয়ে যায়। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ ও সুন্দর ব্যবহার করতে হবে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়, পরকালে বিনিময় হিসেবে মেলে অনন্ত সুখের জান্নাত।
উত্তম আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে
মানুষ তার উত্তম ব্যবহার ও চরিত্র দ্বারা পরিবার-পরিজনসহ সমাজকে অলোকিত করে। এমন নৈতিক শক্তির কার্যকারিতা সুদূরপ্রসারী। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবসময় হাসিমুখে থাকতেন। চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করা যায়। ইসলাম মনে করে, গোমড়ামুখী হওয়া কোনো তাকওয়ার পরিচয় বহন করে না। ব্যক্তিগত জীবনে দেখা যায় অনেক সৎচরিত্রের অধিকারীদের চরিত্রে কোমলতা কম থাকে, মেজাজ থাকে কিছুটা কর্কশ। মুমিনের এমন চরিত্র হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়।
মানবিক সত্তা যতই চরিত্রের মাধুর্য অর্জন করে; ততোই সে হয়ে ওঠে স্বভাবে শিষ্ট। শিষ্টতা ব্যক্তির আচরণকে করে মার্জিত, বাচনকে করে সৎ ও সুললিত। শিষ্টাচারহীন মানুষ সবসময় উদ্ধত থাকে। তার আচরণে প্রাধান্য পায় অবজ্ঞা ও ঔদ্ধত্য। অহংকার অন্যকে ছােট ভাবতে প্ররােচিত করে কিন্তু শিষ্টতা মানুষকে সম্মান করতে প্রণােদনা দেয়। ভালো উত্তম আচরণই বলে মানুষটি কেমন।
শিষ্ঠতার পরিচয় শুধু তার বাহ্যিক দিক নয় বরং অন্তরের চিন্তা-ভাবনার প্রতিফলনে শিষ্ঠতার পরিচয় ফলে। কারণ মানুষ সৃষ্টিগত কারণেই মনের চিন্তা ভাবনাগুলোকে তার ভিতর থেকে বাহিরে প্রকাশের জন্যে উদ্যত হয়।
একজন মানুষের স্বভাবে আলাের দীপ্তি দেয় শিষ্টাচার। সে আলাে ব্যক্তি তথা পরিবার থেকে ছড়িয়ে পড়ে গােটা সমাজে, রাষ্ট্রে। এ আলােতে উজ্জ্বল ব্যক্তির আত্মিক মুক্তির সঙ্গে যােগ হয় মানবিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি। শিষ্টজন তার সৌজন্য আর বিনয়ের মাধ্যমে সকলের প্রিয়তা অর্জন করেন, অর্জন করেন অন্যের আস্থা। অন্যের সহানুভূতি, প্রীতি ও সম্মান লাভ করার জন্যে শিষ্টজনই উত্তম।
তাই সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার জন্যে শিষ্টাচারের বিকল্প নেই। এতে করে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে সকলের আন্তরিকতা প্রকাশ পায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে সমাজ হয় শান্তি ও সম্প্রীতির।