জেনে নিন ইস্তেগফারের পুরস্কারসমূহ
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তর বারের অধিক ইস্তিগফার ও তওবা করি।’ -সহিহ বোখারি : ৬৩০৭
তওবা-ইস্তেগফার আরবি শব্দ। তওবা অর্থ অনুশোচনা করা, প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা ইত্যাদি। ইস্তেগফার অর্থ, ক্ষমা প্রার্থনা করা। শব্দ দু’টির অর্থ খুবই কাছাকাছি। ব্যাপক অর্থে তওবা বলা হয়, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের অন্যায় কিংবা পাপরাশি থেকে নিজেকে মুক্ত করা। অন্যায়ের প্রতি অনুশোচনা করে দৃঢ়তার সঙ্গে তা বর্জনের অঙ্গীকার করা এবং ভবিষ্যতে অন্যায় না করার মনমানসিকতা পোষণ করা।
ইস্তেগফার কখনও তওবার অর্থে হতে পারে। আবার কখনও শুধুমাত্র ক্ষমা প্রার্থনার শব্দগুলো উচ্চারণ করাকেও ইস্তেগফার বলা হয়। যেমন, আস্তাগফিরুল্লাহ (হে আল্লাহ! আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি)। আল্লাহুম্মাগফিরলি (হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও)।
ইস্তেগফার মানুষের পরকালকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি দুনিয়ার জীবনকেও সুন্দর করে। ক্ষমাপ্রার্থনা কেবল পাপ থেকে মুক্তি নয়, ক্ষমাপ্রার্থনা মানবজীবনের যাবতীয় সংকট ও বিপদাপদ থেকেও মুক্তির হাতিয়ার। বুজুর্গ আলেমদের মতে, ইস্তেগফারের অসংখ্য উপকার রয়েছে। মানুষ যদি খাঁটি দিলে বেশি বেশি ইস্তেগফার করে তাহলে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে অসংখ্য পুরস্কার দান করবেন।
মহান আল্লাহ কোরআনে কারিমের সুরা নুহের ১০-১২ নম্বর আয়াতে ছয়টি পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন। সেগুলো হলো-
১. সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন : মানুষের পাপের কারণে যে আজাব ও গজব অবধারিত হয়ে গিয়েছিল তা আল্লাহতায়ালা দূর করে দেবেন। যেমন, হজরত ইউনুস (আ.)-এর জাতি যখন আজাব প্রত্যক্ষ করেছিল তখন তওবা-ইস্তেগফার শুরু করে দিয়েছিল, ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং তাদের ওপর থেকে ভয়ানক আজাব সরিয়ে দিয়েছিলেন।
২. রহমতের প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করবেন : ইস্তেগফারের কারণে রহমতের বৃষ্টি বর্ষণের অনেক ঘটনা কিতাবে রয়েছে। আর এটা সবাই জানেন, বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা কেমন।
৩. ধন-সম্পদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন : অভাব-অনটন মানুষের নিত্যসঙ্গী। অন্যদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকের আয়ের সব উৎস প্রায় বন্ধ। অপরদিকে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে অর্থ-সম্পদ ব্যয় হচ্ছে। যার ফলে অভাবের আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় যদি আমরা ইস্তেগফার করতে শুরু করি, তাহলে আল্লাহর রহমতে এ আশঙ্কা কমে যাবে।
৪. সুসন্তানের মাধ্যমে সাহায্য করবেন : বিয়ের পর সন্তান লাভের জন্য মানুষ অনেক চেষ্টা করে। কেউ যায় মাজারে, কেউবা পড়ে ভণ্ডের খপ্পরে। কেউ ঈমান হারায় আবার কেউ অর্থ খোয়ায়, কিন্তু সন্তান পায় না। অথচ আল্লাহতায়ালা ইস্তেগফারের বিনিময়ে এমন সুসন্তানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, যারা মা-বাবার উপকারে আসবে। তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
৫. বাগ-বগিচা দান করবেন : অর্থাৎ ফল-ফলাদি, শাক-সবজি, তরি-তরকারি এবং ফসলাদিতে অনেক প্রাচুর্য দান করবেন। ফলে খাদ্যের কোনো অভাব হবে না।
৬. নদী-নালা প্রবাহিত করবেন : বর্তমানে নদী-নালার বহমানতা একেবারেই কমে গেছে। বহু নদী শুকিয়ে খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে। সাধারণ জেলেরা দূর-দূরান্ত ঘুরে বহু কষ্টে মাছ ধরলেও গ্রামের ছেলেদের জন্য এখন মাছ ধরা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই ইস্তেগফার করতে থাকলে আমাদের পানি এবং মাছ কোনোটারই সঙ্কট থাকবে না।
পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইস্তেগফারের আরও দু’টি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন।
৭. সুখময় জীবন দান করবেন : বর্তমানে বহু তরুণ-তরুণী এবং বহু দম্পতি অশান্তির আগুনে জ্বলছে। সুখের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরেও ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ কোরআন সুখময় জীবনের পথ-নির্দেশনা দিচ্ছে।
৮. সম্মানিতদের সম্মান বৃদ্ধি করবেন : বর্তমানে অনেক জ্ঞানী-গুণী, শিক্ষিত এবং সম্মানি লোক আছেন যারা সমাজে কাঙ্খিত মর্যাদা পান না। তারও কারণ এ ইস্তেগফার।
ইস্তেগফারের আরও একটি পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা সুরা হুদের ৫২ নম্বর আয়াতে।
৯. শক্তি বৃদ্ধি করে দেবেন : বর্তমানে আমরা সবক্ষেত্রে দুর্বল। আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করি, তাহলে তিনি আমাদের শারীরিক শক্তি, সামাজিক শক্তি, অর্থনৈতিক শক্তি, সামরিক শক্তি এবং রাষ্ট্রীয় শক্তির সঙ্গে গায়েবি শক্তি যুক্ত করে দেবেন।
সুরা আনফালের ৩৩ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে আরও একটি পুরস্কার।
১০. আজাব-গজব দেবেন না : আমরা যদি বেশি বেশি ইস্তেগফার করতে থাকি, তাহলে তিনি আজাব-গজব দূর করে দেবেন।
সুনানে আবু দাউদের ১৫১৮, সুনানে ইবনে মাজার ৩৮১৯ এবং মুসনাদে আহমদের ২২৩৪ নম্বর হাদিসে আরও তিনটি পুরস্কারের কথা বর্ণিত হয়েছে। যথা-
১১. সব প্রকার আপদ-বিপদ ও সঙ্কট দূর করে দেবেন।
১২. সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।
১৩. অকল্পনীয়ভাবে রিজিক দান করবেন।
ইসলামি স্কলাররা আরও বলেছেন, ইস্তেগফার পাঠকারী এমন হয়ে যান, যখন তিনি কোনো দোয়া করেন আল্লাহ তা কবুল করবেন এবং মৃত্যুর পর তাকে জান্নাত দান করেন।
তাই আসুন, বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করি। দুনিয়ার সব বিপদ-আপদ থকে বেঁচে আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার লাভ করতে চেষ্টা করি।