নামাজে কাতার সংযুক্ত করে দাঁড়ানোর ফজিলত



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বিচ্ছিন্ন কাতারকে যুক্ত করা অনেক ফজিলতের কাজ, সওয়াবের আমল

বিচ্ছিন্ন কাতারকে যুক্ত করা অনেক ফজিলতের কাজ, সওয়াবের আমল

  • Font increase
  • Font Decrease

আমরা জানি, আল্লাহতায়ালার সামনে ফেরেশতারা গায়ে গায়ে লেগে লেগে মিলে মিলে দাঁড়ায়। তারা কাতারের মাঝে কোনো ফাঁকা রাখে না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, অমনোযোগীতা ও অসাবধনতার কারণে আমরা কাতারের মাঝে বেশ ফাঁকা রেখেই নামাজে দাঁড়িয়ে যাই; ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিচ্ছিন্ন কাতারকে যুক্ত করা অনেক ফজিলতের কাজ, সওয়াবের আমল।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি (বিচ্ছিন্ন) কাতারকে যুক্ত করবে আল্লাহতায়ালা তাকে (তার রহমতের সঙ্গে) যুক্ত করবেন। আর যে কাতারকে বিচ্ছিন্ন করবে আল্লাহ তাকে (তার রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন করবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৬

বিচ্ছিন্ন কাতারকে যুক্ত করার সবচেয়ে বড় ফজিলত হলো, এর দ্বারা মহান আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং ফেরেশতাদের দোয়া-ইস্তেগফার লাভ হয়।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যারা (বিচ্ছিন্ন) কাতারকে যুক্ত করে আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া-ইস্তেগফার করে। আর যে কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করেন।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ৯৯৫

কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সব বিষয়ে ডান দিক পছন্দ করতেন। কাতারের ক্ষেত্রেও একই কথা। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) যখন নবীজীর পেছনে নামাজ পড়তেন তখন কাতারের ডান দিকে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেন। হজরত বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, ‘আমরা যখন হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে নামাজ পড়তাম তার ডানে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬১৫

হাদিস শরিফে কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যারা কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায় আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া-ইস্তেগফার করে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৭৬

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের স্বাভাবিকভাবেই কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা দরকার। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর জন্য সামনের কাতারের বাম দিক খালি রেখে পেছনের কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো হবে। বরং চেষ্টা করবে, না হলে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই নামাজে দাঁড়াবে।

   

কবরের জীবন সহজ হওয়ার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল বাকি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কবরের আজাব দেখানো হয়েছিলো, ফলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কবরের চেয়ে ভয়াবহ দৃশ্য দেখিনি।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৩০৮

নবী কারিম (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা মৃতদেরকে দাফন করা বাদ দিয়ে দেবে, এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যেন তিনি তোমাদেরকে কবরের কিছু আজাব শুনিয়ে দেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৭১০৬

হাদিসে এসেছে, ‘যে মুমিন ব্যক্তি মুনকার-নাকিরের প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারবে, তাকে কবরে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হবে, তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, ফলে সে জান্নাতের সিগ্ধ হাওয়া ও সুগন্ধি পেতে থাকবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৭৫৩

এগুলো দেখার পর সে বলবে, ‘হে আল্লাহ! দ্রুত কেয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার এবং সম্পদের দিকে ফিরে যেতে পারি।’ -সহিহুল জামে : ১৬৭৬

আর কাফের-মুশরেকদের জন্য কবরকে সংকীর্ণ করে দেওয়া হবে এবং সে তার জাহান্নামের স্থানটি দেখতে পাবে। ফলে ভয়ে আল্লাহকে বলবে, ‘হে রব! কেয়ামত সংঘটিত করবেন না।’ -আল মুসনাদ : ১৮৬৩৭

এজন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের আজাব এবং ফেতনা থেকে বারবার পানাহ চাইতেন। আমরাও নবী কারিম (সা.)-এর ভাষায় এভাবে দোয়া করতে পারি-

اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

হজরত উরওয়াহ ইবনে যুবাইর (রহ.) থেকে বর্ণিত, হজরত আয়েশা (রা.) তাকে বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) নামাজে দোয়া বলতেন- (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল ক্বাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ দাজ্জালি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামাতি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মাছামি ওয়াল মাগরামি।

অর্থ : হে আল্লাহ! কবরের আজাব থেকে, মাসিহে দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং জীবন ও মৃত্যুর ফেতনা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ্! গোনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকেও আপনার নিকট আশ্রয় চাই। তখন এক ব্যক্তি তাকে বলল, আপনি কতই না ঋণগ্রস্ততা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তিনি (আল্লাহর রাসুল সা.) বললেন, যখন কোনো ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন কথা বলার সময় মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে। -সহিহ বোখারি : ৮৩২

;

তুরস্কের প্রবীণ আলেম ড. লুতফি দুগানের ইন্তেকাল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

লুতফি দুগান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তুরস্কের প্রবীণ আলেম রাজনীতিবিদ ও ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ড. লুতফি দুগান ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) আংকারার বাসকেন্ট ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯৩ বছর।

তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘তুরস্কের ধর্মবিষয়ক সাবেক প্রধান ও ইসলামি পণ্ডিত লুতফি দুগানের মৃত্যুত আমি গভীর শোক জানাচ্ছি। মহান আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ করুন এবং তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়দের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দিন।’

লুতফি দুগান ১৯৩০ সালে গুমুশানে প্রদেশের সালিয়াজি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুহাম্মদ ফাহমি আফেন্দির কাছে তিনি পবিত্র কোরআন শিক্ষা লাভ করেন এবং খালু হাফেজ ফাওজি আফেন্দির কাছে হিফজ সম্পন্ন করেন।

তৎকালীন সময়ের বড় বড় আলেমদের কাছে আরবি ভাষা, কেরাত ও তাজবিদ বিষয়ক শিক্ষা লাভ করেন। স্থানীয় উজকান মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।

পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালে ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় অনুষ্ঠিত ইফতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শহরের সহকারী মুফতি ও মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিয়া বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন এবং ধর্মবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৬৮ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তুরস্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন এরবেকানের আহ্বানে তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮০ সালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর তিনি চার মাস কারাবন্দি ছিলেন। বহু ভাষায় পারদর্শী এই আলেম ১৯৮৭ সালে ইসলামিক সায়েন্স রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিশিং ফাউন্ডেশন নামে একটি ইসলামি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন এবং এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

;

জলবায়ু সম্মেলনে চালু হলো ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

কপ-২৮ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিস’(কপ-২৮) জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সবচেয়ে বড় সম্মেলন। ৩০ নভেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলা জলবায়ু সম্মেলনের চতুর্থদিনে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ধর্মীয় প্যাভিলিয়ন। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতেই তা চালু করা হয়।

প্যাভিলিয়ন আয়োজনে সহযোগিতা করে কপ-২৮ প্রেসিডেন্সি, সহনশীলতা ও সহাবস্থান মন্ত্রনালয়, দি হলি সি, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) ও মুসলিম কাউন্সিল অফ এল্ডার্স।

৪ ডিসেম্বর (রোববার) প্যাভিলিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, সহনশীলতা ও সহাবস্থান বিষয়ক মন্ত্রী শেখ নাহিয়ান বিন মুবারক আল নাহিয়ান ও পোপ ফ্রান্সিসের প্রতিনিধি ভ্যাটিকান স্টেট সেক্রেটারি কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে বিশ্বাসী সম্প্রদায় ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করাই প্রধান লক্ষ্য।

এ সময় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন মিসরের বিশ্বখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমাম শায়খ ড. আহমদ আল-তাইয়েব এবং পোপ ফ্রান্সিস। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

আল-আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, ‘মুসলিম কাউন্সিল অব এল্ডার্সের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ সত্যিই নানা কারণে প্রশংসনীয়। প্রথমত, কপ-২৮ এর আবুধাবি আন্তঃধর্মীয় বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য এখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কপ-২৮ এ প্রথমবারের মতো ফেইথ প্যাভিলিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জের সময়ে ধর্মীয় নেতাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর জন্য মূল্যবান সুযোগ তৈরি হয়েছে।’

এ সময় আল-আজহারের ইমাম গাজায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন রক্ষায় ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পোপ ফ্রান্সিস বলেন, ‘আজ বিশ্বের এমন জোটের প্রয়োজন যা কারো বিরুদ্ধে নয়; বরং সবার উপকারে কাজ করবে। আসুন, ধর্মীয় প্রতিনিধি হিসাবে আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করি যেন আমরা দেখাতে পারি, পরিবর্তন সম্ভব। যেন সবাইকে সম্মানজনক ও টেকসই জীবনধারা দেখাতে পারি। আসুন, আমরা বিশ্বনেতাদের আমাদের সাধারণ ঘর রক্ষা করার জন্য বলি।’

কপ-২৮ এর সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের রাজনীতি, সীমানা বা ধর্ম নিয়ে চিন্তা করে না। তাই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য নিশ্চিত হবে ওই সময় যখন আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারব। কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক দায়িত্ববোধ ও সচেতনতা প্রচারে ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের গ্রহের সুরক্ষায় ধর্মীয় নেতারা ঐতিহাসিক মুহূর্তে একত্রিত হয়েছে।

;

যেসব নেয়ামত পরীক্ষার বিষয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষের আসল আবাস জান্নাত। কিছু দিনের জন্য তাদের দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে। আবার আমাদেরকে জান্নাতে যেতে হবে। তবে এমনিতেই নয়, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। দুনিয়ায় মানুষকে ভালো-মন্দ, আনন্দ-বেদনা, আলো-অন্ধকার, সুখ-দুঃখ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করতে হয়। দুনিয়ার এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে আমরা দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক, অভাব-অনটন ইত্যাদিকেই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মনে করি। কিন্তু বাস্তবতা হলো- দুঃখ-দুর্দশা, রোগ-শোক ইত্যাদি অপ্রীতিকর অবস্থা যেমন পরীক্ষা তেমনি সুখ-শান্তি, সম্পদ-প্রাচুর্য, আরাম-আয়েশ, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি প্রীতিকর অবস্থাও পরীক্ষার বিষয়।

স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসায় সতর্ক থাকা
এমন পরীক্ষার বিষয় হলো- স্ত্রী-সন্তানকে ভালোবাসা এবং স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠন। বিষয় দুটি আল্লাহতায়ালার নেয়ামতও বটে। তাই এই দুই বিষয় থেকে সতর্ক থাকা।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, মানুষ সবচেয়ে বেশি মহব্বত করে স্ত্রী ও সন্তানকে। তাদেরকে নিয়েই তার যত কল্পনা ও পরিকল্পনা। তাদের জন্যেই তার জীবন ও যৌবন সে তিলে তিলে ক্ষয় করে। এমন ভালোবাসার মানুষগুলো ও তাদের ভালোবাসার ক্ষেত্রগুলো পরীক্ষার বিষয়। স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের ভালোবাসা যেন আল্লাহর হুকুম পালন এবং তার সন্তুষ্টি লাভের পথে বাধা হতে না পারে- এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। দয়াময় আল্লাহতায়ালাও আমাদের এভাবে সতর্ক করেছেনে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কতক স্ত্রী ও কতক সন্তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাদের সম্পর্কে সচেতন থাকো।’ -সুরা তাগাবুন : ১৪

যে স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এত মহব্বত, যাদের জন্য মরণপণ এত সংগ্রাম, তারাই শত্রুতে পরিণত হতে পারে, যদি তাদের ভালোবাসায় নিজের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করা হয়, আল্লাহর হক বা বান্দার হক নষ্ট করা হয়।

বিদ্যা-বুদ্ধি ও দৈহিক নেয়ামত সম্পর্কে সচেতন থাকা
আল্লাহতায়ালা মানুষকে আত্মিক, দৈহিক, আর্থিক, ছোট, বড়- যাকে যে নেয়ামত দান করেছেন; সেই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং তা আল্লাহর হুকুমমতো ব্যবহার করতে হবে। যাকে আল্লাহতায়ালা বিদ্যা-বুদ্ধির নেয়ামত দান করেছেন তাকে ওই জ্ঞান ও বিদ্যার হক ও দাবি কী- তা জেনে সেগুলো আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।

যাকে আল্লাহতায়ালা স্বাস্থ্য-সুস্থতা ও রূপ-গঠনের নেয়ামত দান করেছেন তাকে এর শোকর আদায়ের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এই নেয়ামত যেন তাকে অহংকারী না বানাতে পারে এবং যারা এ নেয়ামত পায়নি তাদের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব যেন পয়দা না হয়, সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

তেমনি ইলম ও বিদ্যা অর্জন করে গর্বিত হওয়া যাবে না। যাকে আল্লাহতায়ালা ইলমের ক্ষেত্রে তার মত মর্যাদা দান করেননি তার প্রতি যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অহংকারের আচরণ না হয় এবং ইলম অনুযায়ী আমল থেকে গাফেল না হয়।

যে সুখ-শান্তি ও অর্থ-প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়েছে, সে যেন নেয়ামতের দাতাকে না ভোলে। আখেরাত থেকে গাফেল না হয়। শান্তি ও প্রাচুর্যের নেয়ামত পেয়ে খুশিতে মাতোয়ারা না হয়। আরাম-আয়েশ ও বিলাসিতায় মত্ত না হয়।

মোটকথা, আল্লাহতায়ালা মানুষকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, ছোট-বড় যত নেয়ামত দান করেছেন; ওই নেয়ামতের শোকর আদায় করব। এর হক ও দাবিগুলো জেনে সেসব আদায় করার চেষ্টা করব। এভাবে যদি আমরা কষ্ট-ক্লেশ, বিপদ-মসিবত ইত্যাদি প্রতিকূল ও অবাঞ্ছিত অবস্থায় সবর করি এবং সুখ-শান্তি, স্বস্তি-সুস্থতা ইত্যাদি অনুকূল ও বাঞ্ছিত অবস্থায় শোকর করি তাহলে নেয়ামত ও মসিবত সবই আমাদের জন্য কল্যাণকর হবে, আখেরাতের পাথেয় হবে এবং মর্তবা বুলন্দির কারণ হবে।

মুমিন এমনই হয়- এটিই প্রকাশ পেয়েছে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীতে, ‘ঈমানদারের অবস্থা কী অপূর্ব! তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর। আর এ শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য। যদি সে সুখ-সচ্ছলতা পায় তাহলে শোকর করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণের হয়। আর যদি দুঃখ-অনটনের শিকার হয় তাহলে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণের হয়।’ -সহিহ মুসলিম : ২৯৯৯

আল্লাহতায়ালা আপন রহমতে প্রত্যেক মুমিন-মুসলিমকে মসিবত ও নেয়ামতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করুন। সমস্ত খায়ের ও কল্যাণ দান করুন এবং সব ধরনের অকল্যাণ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;