আবিষ্কৃত হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পথ
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবিরা ৬২২ সালে পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পবিত্র মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের ১ হাজার ৪০০ বছর পরে মক্কা থেকে উত্তরে অবস্থিত ইয়াসরিব (পরবর্তী সময়ে মদিনা) শহরের যাত্রাপথটি অবশেষে আবিষ্কৃত হয়েছে।
আবিষ্কৃত রাস্তাটি বর্তমানে মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার রাস্তার কাছাকাছি। তবে সাওর পর্বত থেকে নবী কারিম (সা.) পরিচিত পথে না যেয়ে, তুলনামূলক দূর্গম ও কিছুটা দূরের রাস্তা দিয়ে মক্কা ত্যাগ করেন। মক্কার পর আফসান এলাকা হয়ে মাবেদ, বনি মুদলিজের বাড়ি অতিক্রম করে আল কাহা উপত্যকা ধরে একে একে আল ফাজাহ, আল জায়ে ও তুবরান উপত্যকা দিয়ে মদিনার পথে যান নবী কারিম (সা.)। তুবরান থেকে আল আকিক উপত্যকা হয়ে কুবা পল্লী দিয়ে মদিনায় পৌঁছান তিনি।
‘রিহলাত মুহাজির’ নামের একটি সংগঠন জানিয়েছেন, নবী কারিম (সা.)-এর হিজরতের আবিষ্কৃত হয়েছে। এখন সেটা দ্বিতীয়বার যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আগ্রহীরা নিজেদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত করতে চাইলে এ পথে মক্কা থেকে মদিনা যেতে পারবেন।
নবী কারিম (সা.)-এর জীবনী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের একটি দল কাজ করছে এ বিষয়ে। এ লক্ষে মক্কায় জাবাল আল সওর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে যুক্ত রয়েছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ, প্রদর্শনী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষায়িত সংস্থা সাময়া ইনভেস্টমেন্ট।
সংস্থার সিইও ফাওয়াজ আল-মেরহেজ বলেন, ‘মুহাজির’ প্যানোরামিক ফটোগ্রাফি ৩৬০-এ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নবী কারিম (সা.)-এর হিজরতের পথকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপে কাজ শুরু হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। গবেষক দলটি মক্কার সওর পর্বত থেকে শুরু করে ৪০টি স্টেশনের মধ্য দিয়ে গিয়ে নবীর হিজরতের পথে উদ্ধৃত সমস্ত অবস্থানের সন্ধান করে, যা মদিনার কুবা মসজিদে যাওয়ার পথ পর্যন্ত।
তিনি বলেন, জাবালে সওর সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নবীর হিজরতের কাহিনী কীভাবে উপস্থাপন করা যায়, তা বিবেচনা করার সময় রুটটি নথিভুক্ত করার ধারণাটি আসে। পথের ডকুমেন্টেশন মূলত প্যানোরামিক ফটোগ্রাফি ৩৬০ ডিগ্রি দ্বারা করা হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ড্রোন ব্যবহার করে নবীর যাওয়ার রাস্তা ডিজিটালভাবে নথিভুক্ত করা হয়। ফাওয়াজ আল-মেরহেজ আরও বলেন, তারা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন, যা ছিল এবড়োখেবড়ো রাস্তা এবং কিছু ঐতিহাসিক স্থানের নাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ইসলামিক সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিন সামিল আল-সালামি এবং অধ্যাপক সাদ বিন মুসা আল-মুসাসহ এই কাজে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন। রিয়াদের ইমাম মোহাম্মদ ইবনে সৌদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের অধ্যাপক সুলাইমান বিন আবদুল্লাহ আল-সুওয়াইকেত এবং অধ্যাপক আবদুল আজিজ বিন ইব্রাহিম আল-ওমারি, যারা এটলাস বায়োগ্রাফির বৈজ্ঞানিক কমিটিরও সদস্য, তারা মদিনার ভূচিত্র বিশেষজ্ঞ এবং নবী কারিম (সা.)-এর জীবনী নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন, এই প্রকল্পে তারাও সাহায্য করেছেন।