রমজানে দানের হাত বাড়িয়ে দিন

  • মুফতি শাব্বীর আহমদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আল নাজিহ শহরে রোজাদারদের মাঝে ইফতার বিতরণের দৃশ্য

সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের আল নাজিহ শহরে রোজাদারদের মাঝে ইফতার বিতরণের দৃশ্য

সব জিনিসের একটা মৌসুম থাকে। রমজানুল মোবারক ইবাদত-বন্দেগির মৌসুম। মৌসুমের সময় কোনো জিনিস যত বেশি সঞ্চয় করা যায়, অন্যসময়ে তা সম্ভব হয় না। এ মাসে বান্দা যতবেশি আমল করবে, তার পরকালীন ভাণ্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। রমজানের অন্যতম আমল দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করা। বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসে দানের ফজিলত অনেক বেশি। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে এত পরিমাণ দান-খায়রাত করতেন যে, হাদিসে তাকে বেগমান বাতাসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসকে ‘শাহরুল মুওয়াসাত’ বা সহমর্মিতার মাস নামে অবহিত করেছেন। কেননা এক মাসের রোজা পালন দ্বারা রোজাদার ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এর ফলে তার অন্তরে আর্ত-পীড়িত ও ব্যথিত মানবগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা জাগে। রোজাদারের উচিত তার এই জাগ্রত সহানুভূতিকে কাজে লাগানো এবং তাদের কষ্ট উপশমে কার্যকরী ভূমিকা রাখা। তা বুদ্ধি-পরামর্শ ও কায়িক সহযোগিতা এবং দান-দক্ষিণা বিভিন্নভাবে হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

মুমিন ব্যক্তি অন্যের জন্য দুনিয়াতে যা দান করে, মহান আল্লাহ তা অত্যন্ত যত্নশীলতার সঙ্গে লালন করেন এবং তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করেন। আখেরাতে এই দান বহুগুণ বৃদ্ধি অবস্থায় সে ফেরত পাবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে সদকা করে তাদের উপমা হলো একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে রয়েছে একশত শস্যদানা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ -সুরা আল বাকারা : ২৬১

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা কতই না উত্তম, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, এতে তিনি তোমাদের কিছু পাপ দূর করে দেবেন। আর তোমরা যে আমল করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।’ -সুরা আল বাকারা : ২৭১

বিজ্ঞাপন

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজানে তিনি আরও বেশি দানশীল হতেন, যখন হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। রমজানে হজরত জিবরাইল (আ.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। হজরত জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে নবী কারিম (সা.) মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেশি কল্যাণময় দানশীল হতেন।’ -সহিহ বোখারি : ৩২২০

হজরত আনাস (রা.) আরও বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, সবচেয়ে উত্তম সদকা কী? তিনি বললেন, রমজান মাসের সদকা। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দান করতেন। -সুনানে তিরমিজি : ২৩৫১

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী কারিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি।’ -সহিহ মুসলিম : ১৮৪২

দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ -সহিহ বোখারি : ১৬৩১

আমরা স্বভাবতই কমবেশি দান-খয়রাত করে থাকি। কখনও দানের জন্য একটি মোক্ষম সময় অনুসন্ধান করি। সেই সেরা সময় হলো- রমজান। রমজানের পবিত্র আবহে দানের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। এর তাৎপর্য নিঃসন্দেহে অন্যমাসের তুলনায় অনেক বেশি। তাই নবী কারিম (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান করতেন এবং মানুষকে দানে উৎসাহিত করতেন।

আমাদের সমাজে এমন অনেক অসহায়-নিঃস্ব মানুষ আছেন, যারা সাহরি ও ইফতারে সামান্য খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খায়। বছরের অন্যসময় কোনোভাবে চলে গেলেও রমজান কাটে তাদের অত্যন্ত কষ্টে। অনেক মানুষ লজ্জায় মানুষের কাছে চাইতে পারে না। এ ধরনের মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক ও ধর্মীয় কর্তব্য। এই ইবাদতের মৌসুমে দান-সদকার হাত প্রসারিত করে নিজেদের রমজানকে সার্থক করে তুলি।