শবেকদর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামের সব বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য, আত্মিক উৎকর্ষ সাধন

ইসলামের সব বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য, আত্মিক উৎকর্ষ সাধন

সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন, ‘লাইলাতুল কদর রমজান মাসের কোনো এক রাতে হয়।’ মূলতঃ কোরআন নাজিলের জন্য এ রাতের মর্যাদা ঘোষণা করা হয়েছে। এই রাত প্রসঙ্গে প্রায় ৪০টির মতো হাদিস রয়েছে। ওই সব হাদিসের সারাংশ হলো, রমজানের শেষ দশকে রাতটি লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

তবে শেষ দশকের কথা থাকলেও ২১ থেকে ২৯ রমজান পর্যন্ত বেজোড় রাতগুলোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ মহিমান্বিত রাতটি বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে আবর্তিত হয়। আর বিভিন্ন ধরনের সুস্থ-অসুস্থ, বৃদ্ধ ইত্যাদি ধরনের মানুষ নবীজীকে (সা.) ওই রাতের বিষয়ে বিভিন্ন বছরে এবং বিভিন্ন তারিখে ও সময়ে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নিয়েছেন বলে এতগুলো বর্ণনার অবতারণা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণের জন্য শেষ দশকের রাতসমূহ, দুর্বল, বৃদ্ধদের জন্য শেষ বোজোড় অথবা ৭ রাত এবং অসুস্থের জন্য শুধু ২৭ রাত উল্লেখ করেছেন বলে হাদিসগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মনে হয়। তবে তিনি নিজে শেষ দশক কঠিনভাবে পালন করেছেন, তা পাওয়ার জন্য ইতেকাফ করেছেন। আসলে এই নমনীয়তা হলো- ইসলামের সৌন্দর্য। অবশ্য আল্লাহতায়ালা নবীজীকে এই রাতের সুনির্দিষ্ট সময় জানিয়ে তা আবার ভুলিয়ে দিয়েছেন। এই ভুলিয়ে দেওয়াটাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য কল্যাণকর বলেছেন।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামের সব বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য, আত্মিক উৎকর্ষ সাধন। কাজেই সুনির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে ৭ থেকে ১০ দিনের একটা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বান্দার পরম আত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর সঙ্গে তৃপ্তিমূলক সম্পর্ক সৃষ্টির সুযোগ রাখা হয়েছে। আর এই উদযাপনকারী সময়টা সূর্যাস্ত থেকে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

কদরের রাত সম্মানিত এ জন্য যে, এই রাতে পৃথিবীর ইতিহাসের এবং ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বিশ্বজনীন নবী, কিতাব এবং অহির অভিষেক হওয়ার মাধ্যমে। আবার কদর অর্থ ভাগ্য বা আদেশ এ জন্য যে, এই রাতে পৃথিবীতে আগামী এক বছরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা, জন্ম, মৃত্যু, রোগ, অর্জন ইত্যাদির কার্যাদেশ সংশ্লিষ্ট কার্য সম্পাদনকারী ফেরেশতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। কাজেই মহাসম্মানিত এই রাত পালন করার লক্ষ্যে ঈমানদারগণের জন্য রয়েছে বিশেষ প্রণোদনা। সেটা হলো- এই রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।

আরবরা তখন মিলিয়ন বা বিলিয়নের হিসাব জানত না, তাই হাজারই ছিল তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা বা অসংখ্য হিসাব। কাজেই এই রাতের ইবাদত শুধু এক হাজার নয় বরং অসংখ্য মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এই রাতে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা অবতরণ করে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল বান্দাদের জন্য দোয়া করেন এবং সালাম পৌঁছে দেন।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় কিয়াম (নামাজ) করবে, তার পূর্বের সব পাপমোচন করা হবে।’ -সহিহ বোখারি : ১৮০২

আম্মাজান হজরত আয়শা (রা.) লাইলাতুল কদর রাতের দোয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) পড়তে বলেন- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা তুমি পছন্দ করো, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দাও।’