ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার অন্তরে
ঈদ মানে আনন্দের জোয়ার। ঈদ মানে খুশির সঞ্চার। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর রমজানের শেষ দিনে আকাশের এক কোণে বাঁকা চাঁদের মিষ্টি হাসি ঈদের জানান দেয়। সবাই একই সুরে গেয়ে ওঠে কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমর সংগীত, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’
ঈদুল ফিতর প্রতিবছর এক অনন্য-বৈভব বিলাতে নিয়ে আসে খুশির বার্তা। বছরে একবার এই উৎসব দিবসটি খুশি ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে ফিরে আসে। এ জন্য এটাকে ঈদ বলা হয়। মহান আল্লাহ প্রতি বছর ঈদের মাধ্যমে বান্দাকে তার দয়া ও করুণা বর্ষণ করেন। সিয়াম পালনের দ্বারা রোজাদার যে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার সৌকর্য দ্বারা অভিষিক্ত হন, ইসলামের যে আত্মশুদ্ধি, সংযম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, দানশীলতা, উদারতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, সাম্যবাদিতা ও মনুষ্যত্বের গুণাবলি দ্বারা বিকশিত হন, এর গতিধারার প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে ঈদুল ফিতর আগমন হয়।
আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈদ হচ্ছে- বান্দার জন্য বিরাট আতিথেয়তা। এ দিন যে আনন্দধারা প্রবাহিত হয়, অফুরন্ত পুণ্যময়তা দ্বারা পরিপূর্ণ। সুদীর্ঘ এক মাস রোজার পর মুসলমানের ঘরে নিয়ে আসে ঈদ আনন্দ। এদিন নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা, ঈদগাহে নামাজ পড়া ও কোলাকুলি সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হন। ফিরনি-সেমাই খাওয়া প্রভৃতি ঈদের দিনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
ঈদ হলো- আল্লাহর নিয়ামত ও জিয়াফত। এই জিয়াফত ভোগ করতে যেয়ে আমরা যেন একটু বেপরোয়া হয়ে পড়ি। দীর্ঘ এক মাস রোজা আমাদের নিয়মমাফিক চলা ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণের ফলে জীবনাচরণের একটি ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হয়। এই ইতিবাচক প্রভাবটি যেন নেতিবাচক না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষগুলো বাড়ি যাওয়ার জন্য খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে চড়ে ঝুঁকিপূর্ণ সফর করেন, এতে অনাকাঙ্খিত বিপদ-আপদের শিকার হন। কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেওয়া যায়, অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বাড়ে। এ জন্য সফরে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে, কোনোভাবেই অসতর্কভাবে চলাফেরা করা যাবে না।
আমরা যখন ঈদের আনন্দে মেতে উঠব, ঠিক তখনও বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। হাজারও অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষের কান্নাকাতর ধ্বনি আমাদের ব্যথাতুর করবে। দেশে দেশে মজলুম মানুষের আহাজারি শোনা যাবে। তার পরও মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে ঈদ আসবে। তাই ঈদের আনন্দে সব মজলুম ও অসহায় মানুষের জন্য বস্তুগত কিছু করা সম্ভব না হলেও আমাদের দোয়ার হাত যে আরশের প্রভুর দরবারে উঠবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিদের নিয়ে আনন্দ উপভোগের এই বিরল সুযোগ হয়তো অনেকেই হাতছাড়া করবেন না। আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, ঈদ উৎসব অন্য দশটি উৎসবের মতো নয়, এটি ইবাদতকেন্দ্রিক উৎসব। তাই উৎসবের নামে বাড়াবাড়ি পরিহার করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা সবার কর্তব্য।
ঈদের করণীয়
১. ফজরের নামাজ আদায় করা, ২. মিসওয়াক করা, ৩. রোজা না রাখা, এ দিন রোজা রাখা হারাম, ৪. গোসল করা, ঈদের দিন গোসল করা সুন্নত। ৫. ঈদের দিন সকালবেলা কিছু খাওয়া, ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নত, ৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা, ৭. সুন্দর পোশাক পরিধান করা, ৮. সদকাতুল ফিতর আদায় করা। ৯. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া, ১০. ঈদের জামাতে যাওয়া-আসার পথ ভিন্ন হওয়া, ১১. তাকবীর বলা, তাকবির হলো- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, অল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ, ১২. ঈদে কুশল বিনিময় করা, সাহাবায়ে কেরাম এই দিনে একে অপরকে বলতেন- তাকাব্বালুল্লাহা মিন্না ওয়া মিনকুম, ১৩. ঈদের নামাজ আদায় করা। ১৪. খুতবা শোনা ও দোয়া করা, এটি ওয়াজিব।
ঈদের বর্জনীয়
১. জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা ২. ঈদের দিন রোজাপালন করা ৩. বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন করা ৪. নারী-পুরুষ একে অপরের বেশধারণ করা ৫. নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তাঘাটে বের হওয়া ৬. গান-বাজনা করা ৭. অযথা কাজে সময় নষ্ট করা ৮. অপচয় ও অপব্যয় করা ৯. আতশবাজি করা ১০. ঈদের নামাজ আদায় না করে আনন্দ-ফূর্তি করা।