গায়েবানা জানাজা প্রসঙ্গে ইসলাম

  • মুফতি শরিফুল আজম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হানাফি মাজহাবে গায়েবানা জানাজা জায়েজ নয়

হানাফি মাজহাবে গায়েবানা জানাজা জায়েজ নয়

জানাজা নামাজ সহিহ-শুদ্ধ হওয়ার জন্য লাশ সামনে উপস্থিত থাকা আবশ্যক। অনুপস্থিত লাশের গায়েবানা জানাজা নামাজ আদায়ের বিধান নেই। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় অসংখ্য সাহাবি মদিনার বাইরে দূর-দূরান্তে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক তাদের গায়েবানা জানাজা পড়ার কোনো ঘটনা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নেই। অথচ নবী কারিম (সা.) সাহাবায়ে কেরামের জানাজা নামাজ পড়ার ব্যাপারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। এজন্য তিনি বলে দিয়েছিলেন যে, তোমাদের কেউ মারা গেলে আমাকে জানাবে। কেননা আমার জানাজা নামাজ মৃতের জন্য রহমত। -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৩০৮৩

তদ্রুপ খোলাফায়ে রাশেদিন (খেলাফতের যুগ) থেকেও গায়েবানা জানাজা নামাজ পড়ার কোনো প্রমাণ নেই। অথচ তাদের খেলাফতকালে বিভিন্ন যুদ্ধে অনেক মুজাহিদ সাহাবি শহীদ হয়েছেন। গায়েবানা জানাজা নামাজ যদি সুন্নাহসম্মত হতো, তাহলে সাহাবিগণ অবশ্যই সুন্নতের অনুসরণ করতেন; কখনো পরিত্যাগ করতেন না।

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, কেউ কেউ গায়েবানা জানাজা প্রমাণের জন্য রাসুলে কারিম (সা.) কর্তৃক বাদশাহ নাজ্জাশির জানাজা পড়াকে দলিল হিসেবে পেশ করতে চান। কিন্তু নাজ্জাশির জানাজা সম্পর্কিত সকল হাদিস একত্র করলে বোঝা যায়, নাজ্জাশির লাশ কুদরতিভাবে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে উপস্থিত ছিল।

হজরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের ভাই নাজ্জাশি ইন্তেকাল করেছে। সুতরাং তোমরা তার জানাজা আদায় করো। ইমরান (রা.) বলেন, অতপর রাসুলে কারিম (সা.) দাঁড়ালেন। আর আমরা তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি তার জানাজা পড়ালেন। আমাদের মনে হচ্ছিল যে, নাজ্জাশির লাশ তার সামনেই রাখা ছিল। -মুসনাদে আহমদ : ২০০০৫

বিজ্ঞাপন

বর্ণনাটি হজরত আবান (রহ.)-এর সূত্রে হজরত ইমরান (রা.) থেকে বর্ণিত। তাতে বলা হয়েছে, ‘যখন নবী কারিম (সা.)-এর পেছনে জানাজা পড়েছি, তখন নাজ্জাশির লাশকে আমাদের সামনে উপস্থিত দেখতে পেয়েছি। -উমদাতুল কারি, শরহুল বোখারি : ৭/৩৩

এই হাদিসের বর্ণনাকারী তিনজন, ১. হজরত আবু হুরায়রা (রা.), ২. হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) ও ৩. হজরত ইমরান বিন হোসাইন (রা.)। তাদের কেউ নাজ্জাশির জানাজা সংশ্লিষ্ট হাদিস থেকে গায়েবানা জানাজার বৈধতা প্রমাণের চেষ্টা করেননি।

বাদশাহ নাজ্জাশি ইন্তেকাল করেন নবম হিজরির রজব মাসে। -হাশিয়ায়ে মুয়াত্তা মালিক : ২০৮

আর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) ইন্তেকাল করেন ৫৯ হিজরিতে। অর্থাৎ উক্ত ঘটনার পর হজরত আবু হুরায়রা (রা.) প্রায় ৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) ইন্তেকাল করেন ৭৯ হিজরিতে। সে হিসেবে তিনি ওই ঘটনার পর ৭০ বছর বেঁচে ছিলেন। আর হজরত ইমরান বিন হোসাইন (রা.) উক্ত ঘটনার পর জীবিত ছিলেন প্রায় ৪৩ বছর।

এত দীর্ঘ বছর বেঁচে থাকার পরও উক্ত ঘটনা থেকে এসব সাহাবিরা যদি গায়েবানা জানাজা জায়েজের প্রমাণ বুঝে থাকতেন, তাহলে তাদের জামানায় ইন্তেকাল হওয়া অসংখ্য সাহাবির গায়েবানা জানাজা তাদের পড়ার কথা। কিন্তু একজনেরও গায়েবানা জানাজা পড়ানোর কোনো প্রমাণ না কোনো হাদিসের গ্রন্থে আছে, না কোনো ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায়। যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, উক্ত ঘটনা দ্বারা কোনো সাহাবি গায়েবানা জানাজা জায়েজ বুঝেননি। তারা স্পষ্ট বুঝেছিলেন, নাজ্জাশির জানাজার নামাজটি গায়েবানা জানাজা নয়। বরং উপস্থিত ব্যক্তির জানাজা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মোজেজাস্বরূপ নাজ্জাশিকে নবী কারিম (সা.)-এর সামনে উপস্থিত করে দেওয়া হয়েছিল। আর সেই জানাজা সামনে নিয়ে নবী কারিম (সা.) জানাজা পড়িয়েছেন।

এই ভেদ জানার কারণে কোনো সাহাবি জীবনে কোনোদিন গায়েবানা জানাজা পড়েননি। কিংবা গায়েবানা জানাজা পড়ার দাবিও করেননি, কিংবা গায়েবানা জানাজার পক্ষে উক্ত হাদিসের দলিলও পেশ করেননি।

আবার অনেক মুহাদ্দিস নাজ্জাশির জানাজা সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, এটি একটি ঘটনা বিশেষ। কারণ, বাদশাহ নাজ্জাশির মৃত্যু হয়েছিল এমন এক ভূখণ্ডে- যেখানে তার জানাজা পড়ার মতো কেউ (মুসলিম) ছিল না। তাই আল্লাহর রাসুল (সা.) সাধারণ নিয়মের বাইরে তার জানাজা পড়িয়েছেন।

এছাড়া যে লাশের কোথাও জানাজার ব্যবস্থা আছে এবং তার জানাজা হয়েছে বা হচ্ছে তার গায়েবানা জানাজা পড়ার একটি ঘটনাও হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায় না। তাই এটি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।