আল্লাহর নৈকট্য লাভের আমল সম্পর্কে জানুন
কখনো কখনো মানুষের হৃদয় শুষ্ক ভূমির মতো রুক্ষ হয়ে যায়, আবার কখনো হয়ে যায় পাথরের চেয়ে কঠিন। তখন ভালো কথা আর ভালো লাগে না, ভালো কাজে মন বসে না। মানসিক অস্থিরতার কারণে মানুষ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এমতাবস্থায় হৃদয়ের কোমলতা ফিরিয়ে আনতে ইসলাম মানুষকে বেশি বেশি জিকির করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।
কারণ মানুষ যত বেশি আল্লাহর জিকির করবে, তত বেশি তার হৃদয় বিগলিত হবে, তার অশান্ত হৃদয় শান্ত হবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ -সুরা রাদ : ২৮
জিকিরের নানাবিধ ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ দশটি ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হলো-
অন্তরের মলিনতা দূর হয়
শয়তান মানুষকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। আর পাপের কারণে মানুষের অন্তর মলিন হয়ে যায়। জিকিরের মাধ্যমে হৃদয়ের এই মলিনতা দূর হয়ে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক বস্তু পরিষ্কার করার উপকরণ আছে। আর অন্তরের ময়লা পরিষ্কার করার উপকরণ হলো- আল্লাহর জিকির।’ -আত তারগিব ওয়াত তারহিব : ২/৩২৭
আল্লাহও জিকিরকারীকে স্মরণ করেন
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি বান্দার সঙ্গে ওইরূপ ব্যবহার করি, যেরূপ সে আমার প্রতি ধারণা রাখে। সে যখন আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে থাকি। সে যদি আমাকে অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে অন্তরে স্মরণ করি। সে যদি কোনো মজলিসে আমার কথা আলোচনা করে তবে আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তার আলোচনা করি।’ -সহহি মুসলিম : ২৬৭৫
জিকিরবিহীন থাকা মৃতের সমতূল্য
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে তার প্রতিপালককে স্মরণ করে আর যে করে না, তাদের দৃষ্টান্ত হলো জীবিত ও মৃতের মতো (অর্থাৎ যে আল্লাহকে স্মরণ করে সে জীবিত, আর যে স্মরণ করে না সে মৃত)।’ -সহিহ বোখারি : ৬৪০৭
জিকিরকারী আরশের নিচে ছায়া পাবে
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। (তাদের একজন হলেন) ওই ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে।’ -সহিহ বোখারি : ৬৪৭৯
জিকিরকারীকে আল্লাহর রহমত ঢেকে নেবে
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন, আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়, এবং তাদের ওপর সাকিনা (রহমত) নাজিল হয়, আর আল্লাহ তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৭০০
জিকিরে মুক্তি
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর জিকিরের চেয়ে আজাব থেকে অধিক নাজাত দানকারী আর কোনো আমল নেই।’ -মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ১৬৭৪৫
ক্ষমার ঘোষণা
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কিছু মানুষ আল্লাহর জিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয়; তখন আসমান হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গোনাহসমূহ নেকিতে পরিণত হয়েছে।’ -শোয়াবুল ঈমান : ৫৩৪
শ্রেষ্ঠ আমল
হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের কথা বলব না, যা তোমাদের সমস্ত আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদাকে আরো বৃদ্ধিকারী, আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা খরচ করা থেকে এবং জেহাদের ময়দানে শত্রুর প্রাণ নেওয়া ও শত্রুর হাতে প্রাণ দেওয়া থেকেও উওম? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, তা হলো- আল্লাহর জিকির।’ -জামে তিরমিজি : ৩৩৭৫
জিকিরকারীর সঙ্গে আল্লাহ থাকেন
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার জিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সঙ্গে থাকি। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সঙ্গে থাকে)।’ -মুসনাদে আহমাদ : ১০৯৬৮
জিকিরের জন্য আফসোস করবে
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে।’ -শোয়াবুল ঈমান : ৫১২