সুখী মানুষের দেশ উগান্ডায় শুরু হচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং
উগান্ডা আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। ১৯৬২ সালে ব্রিটেনের স্বাধীনতা অর্জনের পর পূর্ব আফ্রিকার দেশটি একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে। পরে তা নৃশংস সামরিক একনায়কত্বে পরিণত হয় যার অবসান হয় ১৯৭৯ সালে। ১৯৮০-র দশকে বিতর্কিত নির্বাচন এবং পাঁচ বছরের একটি যুদ্ধ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইওওয়েরি মুসেভেনিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।
উগান্ডার রাষ্ট্রীয় নাম রিপাবলিক অব উগান্ডা। রাজধানী কামপালা। আয়তন ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গ কিলোমিটার। ইসলাম দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম।
উগান্ডা বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ হিসেবে বিবেচিত। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২১-এ সবচেয়ে সুখী দেশের খেতাব পায় উগান্ডা। ২০২২ সালের রিপোর্টেও সবচেয়ে সুখী দেশ ছিল উগান্ডা। তবে বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে ১১৭তে চলে যায় তারা। ২০২৩ সালে সবচেয়ে সুখী দেশের খেতাব হারালেও বৈশ্বিক র্যাংকিংয়ে বেশ উন্নতি হয়েছে উগান্ডার। এ বছর বিশ্বের মধ্যে ১১৩তম সুখী দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে তারা।
পূর্ব আফ্রিকার ‘খাদ্য ঝুড়ি’ বলা হয় উগান্ডাকে। ১৯৯৫ সাল থেকে উগান্ডায় সাংবিধানিক আইন চালু হয়। দেশটির চার কোটি ৬০ লাখ মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ মুসলিম। ২০১৯ সালে দেশটিতে শরিয়া আইন চালু হয়। প্রতিটি জেলায় গঠন করা হয় ইসলামি আদালত। এর পর থেকেই প্রচলিত আলাদতের চেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শরিয়া আদালত।
উগান্ডার মুসলিম সুপ্রিম কাউন্সিলের মুখপাত্র আশরাফ মুভাওয়ালা বলেন, দিন দিন এখানে শরিয়া বিচারব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের শরিয়া আদালতের বিচারকরা বেশ ব্যস্ত বিচারকাজ নিয়ে। প্রতিদিনই নতুন নতুন মামলা হচ্ছে শরিয়া আদালতে। মানুষের আস্থা এই আদালতের প্রতি দিন দিন যে বেড়ে চলেছে এ থেকেই তা প্রমাণ হয়।
উগান্ডার মুসলমানদের জন্য একটি টিভি ও রেডিও চ্যানেল চালু আছে। বেলাল রেডিও ও আস সালাম টিভি নামের চ্যানেলে ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় ইসলামি বিষয়াবলি সম্প্রচারিত হয়। রাজধানীতে অবস্থিত গাদ্দাফি ন্যাশনাল মসজিদ দেশটির জাতীয় ও অন্যতম বৃহত্তর মসজিদ হিসেবে পরিচিত।
উগান্ডায় এবার চালু হতে যাচ্ছে ইসলামি ব্যাংকিং। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব উগান্ডা’ বলেছে, তারা এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমোদন দেওয়া শুরু করবে, যারা ইসলামি ব্যাংকিং সেবা প্রদান করবে।
গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (গবেষণা) ড. আদাম মুগুমে বলেছেন, কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমন একটি আইনের জন্য অপেক্ষা করছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠান শুরু করার সুযোগ দেবে। আমরা এমন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে আরম্ভ করব, যারা ইসলামি ব্যাংকিং পরিষেবা প্রদান করবে। অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠান বিধিবদ্ধ আইনের জন্য অপেক্ষা করছে।
গত সপ্তাহে আইনটি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটা নাগরিকদের জন্য ব্যবসায়ে ইসলামি অর্থায়নের পথ খুলে দেবে।
গত সপ্তাহে উগান্ডার পার্লামেন্টের স্পিকার অনিতা আমং একটি নথি প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট মুসেভেনিসহ অন্যরা ‘দ্য ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন্স (অ্যামেন্ডাম) অ্যাক্ট, ২০২৩’-এ স্বাক্ষর করেছেন। যা উগান্ডায় ইসলামি ব্যাংকিংকে আইনি ভিত্তি প্রদান করেছে।
অবশ্য ২০১৬ সালে ‘দ্য ফিন্যানশিয়াল ইনস্টিটিউশন্স অ্যাক্ট’ শীর্ষক একটি অভিন্ন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। যার অধীনে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের সূচনা করা গেলে স্বতন্ত্র আইন না থাকায় দেশটিতে ইসলামি ব্যাংকিং বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছিল। নতুন আইনে সেসব জটিলতা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উগান্ডার ইসলামিক স্কলাররা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি দীর্ঘ প্রত্যাশিত একটি বিষয় ছিল।