মিসরে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে মুখ ঢেকে রাখে- এমন নেকাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দেশটিতে শিক্ষাবর্ষ শুরু হচ্ছে। তখন থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা চালু হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী রেদা হেজাজি গত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঘোষণা করেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে হেডস্কার্ফ পরতে পারবে। কিন্তু তারা মুখ ঢেকে রাখা নেকাব পরতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, শিশুদের অভিভাবকদের উচিত হবে শিশুদের পছন্দের ব্যাপারে সচেতন থাকা। কোনোভাবেই বাইরের চাপের কাছে নতি স্বীকার করা যাবে না। শিক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, আরবি ভাষা, ধর্মীয় শিক্ষা এবং সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক শিক্ষার শিক্ষকদের ভূমিকা রয়েছে এতে।
বিজ্ঞাপন
২০২৪ সালের ৮ জুন পর্যন্ত নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে। তবে নতুন এই সিদ্ধান্ত মিসরের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা।
সিদ্ধান্তটির প্রশংসা করে আলেকজান্দ্রার ৩৩ বছর বয়সী এক বিপণন ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘স্কুলে নেকাব নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটির পক্ষে আমি। কারণ এটি একটি স্বচ্ছ শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি মনে করেন, শিক্ষা প্রদানের সময় শিক্ষার্থীর শারীরিক ভাষা ও মুখের অভিব্যক্তি বোঝা শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাজধানী কায়রোতে বসবাস করা ৩৩ বছর বয়সী এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মনে করেন, স্কুলে মেয়েদের নেকাব নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি।
স্বাধীনভাবে নিজের পোশাক বেছে নেওয়ার বিষয়টিকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘মিসর একটি মুসলিম দেশ। নিরাপত্তা বাড়াতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলেও আমি এটিকে মানবাধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করি।’
জানা গেছে, শুধু নারীদের চুল ঢেকে রাখে কিন্তু মুখ ঢাকে না- মিসরে এ ধরনের হিজাব বেশ প্রচলিত। তবে কিছু রক্ষণশীল পরিবার রয়েছে, এসব পরিবারের মেয়েরা নেকাবের মাধ্যমে মুখও ঢেকে রাখেন।
স্কটল্যান্ডের সাউথ আয়ার শহরের জেমস স্ট্রিটের প্রাক্তন রেলওয়ে ক্লাবে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এটি হবে সাউথ আয়ার শায়ারের প্রথম মসজিদ উদ্বোধন।
মসজিদটি প্রাক্তন ভবনে হবে। যে সম্পত্তি গত এপ্রিল মাসে বিক্রির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। পরে আল-ফারুক এডুকেশন অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টার (AFECC) তা কিনে নেয়।
গ্লাসগোভিত্তিক দাতব্য সংস্থা AFECC এর লক্ষ্য ইসলামের মূল শিক্ষাকে সংরক্ষণ করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া। সংস্থাটি এখানে নামাজের জন্য নির্বাচন করে এটাকে অনুপ্রেরণামূলক কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটি রেলওয়ে ক্লাবের সম্পত্তি অধিগ্রহণ করে দক্ষিণ আয়ার শায়ারের প্রথম মসজিদ স্থাপনের জন্য তহবিল সংগ্রহ অভিযান শুরু করছে।
প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য প্রায় ১৪ লাখ ৯ হাজার পাউন্ড সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
AFECC-এর একজন মুখপাত্র বলেন, আয়ারে ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার জন্য AFECC এই সম্পত্তি কেনার ঘোষণা দিয়ে গর্বিত।
আয়ারে মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, নামাজ এবং সামাজিক কর্মসূচির জন্য একটি কেন্দ্রের জোরালো প্রয়োজন তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় শতাধিক স্থানীয় মুসলিম পরিবারের জন্য একটি উপযুক্ত নামাজ আদায়ের স্থান এবং সামাজিক যোগাযোগ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন এই সম্পত্তি শহরের কেন্দ্রের কাছে সুবিধাজনকস্থানে অবস্থিত। আশা করা হচ্ছে, জায়গাটি মুসলিমদের নামাজ এবং জমায়েতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হয়ে ওঠবে।
আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কেন নবীপ্রেম একজন মুমিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? কেন আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে নবীকে ভালোবাসতে বলেছেন? আজকের আলোচনায় আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব- ইনশাআল্লাহ
নবীপ্রেমের গুরুত্ব অনেক। এর বহুবিধ ফায়দা রয়েছে। এর কয়েকটি হলো-
ঈমানের পরিপূর্ণতা: নবীপ্রেম ছাড়া ঈমান পূর্ণ হয় না। নবীকে ভালোবাসা শুধু মুখের কথা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটানো। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি (নবীজি সা.) তার নিকট তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং সব মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় না হই।’ -সহিহ বোখারি : ১৩-১৪
নবীপ্রেম প্রতিটি মুমিনের এক অমূল্য সম্পদ। নবীপ্রেম সবার অন্তরে থাকলেও সবকিছুর ওপরে তাকে প্রাধান্য দেওয়া ঈমানদারের জন্য ফরজ। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘(হে নবী)! আপনি বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা-মাতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই-বোন, তোমাদের বংশ, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের এমন ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর; আল্লাহতায়ালা ও তার রাসুল এবং তার রাস্তায় জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় না হয়, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।’ -সূরা তাওবা : ২৪
আল্লাহর ভালোবাসা লাভ: কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ -সূরা আলে ইমরান : ৩১
অর্থাৎ নবীকে ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসা লাভের একটি নিশ্চিত পথ।
জান্নাতের নিশ্চয়তা: হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ -জামে তিরমিজি : ২৭২৬
নবী কারিম (সা.) হলেন আল্লাহর রাসূল: তিনি আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনিই আমাদের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল। তাই তাকে ভালোবাসা মানে আল্লাহকে ভালোবাসা।
নবী কারিম (সা.) আমাদের জন্য কোরআন নিয়ে এসেছেন: কোরআন হলো- আল্লাহর কালাম। নবীকে ভালোবাসা মানে কোরআন মাজিদকে ভালোবাসা।
নবী আমাদের জন্য সুন্নাহ রেখে গেছেন: সুন্নাহ হলো- নবীর জীবন ও বাণী। তিনি আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তাকে ভালোবাসা মানে তার সুন্নাহ অনুসরণ করা।
নবীপ্রেম একজন মুসলিমের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। আসুন, আমরা সবাই নবীকে ভালোবাসার চেষ্টা করি এবং তার সুন্নাহ অনুসরণ করি।
আল্লাহতায়ালা সবাইকে নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দিন এবং আমাদেরকে তার সুন্নাহ অনুসরণ করার তওফিক দিন আমিন।
দক্ষিণ আমেরিকান দেশ কলম্বিয়া। দেশটির সীমান্তবর্তী মাইকাও হলো কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলা সীমান্তের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের একটি ছোট শহর। ধুলোবালিতে ভরপুর শহরটির বিভিন্ন প্রান্ত কলম্বিয়ার লা গুয়াজিয়া প্রদেশ সংলগ্ন। যা একসময় ছিলো কলম্বিয়ার আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাণকেন্দ্র।
এখন মাইকাও ঠিক তা নয়, যা হওয়ার কথা ছিল। যদিও এখানে আরব সম্প্রদায়ের প্রভাব অনেকদিন ধরেই। শহরটিতে আছে মসজিদ, আরব স্কুল এবং রাস্তার ওপর একটি ছোটখাটো আরব-পরিচালিত ব্যবসায়িক সাজসজ্জা। এ কথা উল্লেখ না করলেও চলে, শহরটির শাসনভার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন লেবানিজ-কলম্বিয়ান মোহাম্মদ জাফর দাসুকি হাজি। কলম্বিয়ার ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র তিনিই।
শহরটির আকাশে ‘দ্য ওমর ইবনুল খাত্তাব মসজিদ’ হলো স্থানীয় সম্প্রদায়ের অনিবার্য শক্তির একটি বড় প্রমাণ। নজরকাড়া মার্বেল পাথরে নির্মিত মসজিদটি দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। ১৯৯৭ সালে মাইকাওয়ে আরব সম্প্রদায়ের শক্ত অবস্থানের প্রতীক হিসেবে নির্মিত হয়। মাইকাওয়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন গবেষক পেদ্রো ডেলগাডো মসজিদটিকে মাইকাও শহরের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মসজিদটিতে একসঙ্গে ৭০০ মুসল্লির নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে।
মসজিদটির গা ঘেঁষে দারুল ইকরাম স্কুল হলো- মাইকাওয়ের মুসলিম সম্প্রদায়ের আরেকটি প্রতীক। এক হাজারেরও বেশি ছাত্র নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি একসময় ছিল মাইকাওয়ের আরব মুসলিম এবং মুসলিম অভিবাসীদের গর্বের বস্তু। বিস্তৃতি ছিল আরও দুটি সেন্টারে। তবে চলতি বছর স্কুলটির ছাত্রসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫২ জনে। সেন্টার কমে হয়েছে একটি। এসব ছাত্রের অর্ধেকের শিকড়ই আরবে নয়।
১৯৮৭ সাল থেকে মাইকাওয়ে বসবাসকারী লেবানিজ নাগরিক ও দোকান মালিক নাসের গেবারা বলেন, ‘আমাদের এখন সময় ভালো যাচ্ছে না। আমাদের সম্প্রদায় কঠিন সংকট মোকাবেলা করছে। শহরটির প্রতি আমার ভালোবাসা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেলেও আমি অসংখ্যবার লেবাননে ফিরে যাওয়ার কথা ভেবেছি। পাশাপাশি এ-ও ভেবেছি, মাইকাও শহরের প্রতি আমার ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছে রক্তের প্রতিটি কণিকায়।’
মাইকাও শহরে এখনো যেসব মুসলিম ও আরব সম্প্রদায় টিকে আছেন; তারা একটি বিশেষ আবেগকে ভাগাভাগি করেন। নির্দিষ্ট একটি জায়গার প্রতি আনুগত্য তাদের যেমন অনেক কিছু দিয়েছে; তেমনি নিয়েছেও অনেক কিছু। কলম্বিয়া এবং বিশেষ করে মাইকাওয়ের আরব সম্প্রদায়ের বেড়ে ওঠা বুঝতে হলে কাউকে ফিরে যেতে হবে বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে।
এ অঞ্চলে আরবদের অভিবাসন একেবারে ১৮৮০ সালের দিকের, যখন মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেই অভিবাসন করেছেন অটোমান সাম্রাজ্য থেকে। যখন অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে; তখন কিছুসংখ্যক আরব উত্তর কলম্বিয়াকে তাদের গন্তব্য বানান। বারানকুইল্লা ও মাইকাওয়ের মতো শহরের দিকে ধাবিত হন। তারা তা করলেন তাদের প্রাথমিক প্রবেশ পথ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের বন্দরগুলো থেকে। ১৯৭০ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধ দেখা দিলে অনেক লেবানিজ নাগরিক অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সামান্য একটি অংশ চলে যায় কলম্বিয়ায়।
পরে আরব মুসলিম সম্প্রদায় ধীরগতিতে কিন্তু দৃঢ়তার সঙ্গে মাইকাওয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে। তবে এই সেটা সময় চিরস্থায়ী হয়নি। একসময় প্রতিবেশী ভেনেজুয়েলার অর্থনীতিতে ধস নামে। ২০০০ সালের প্রথমদিকে দেশটি ধাবিত হয় বড় ধরনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকটের দিকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ধাক্কা এসে লাগে মাইকাওয়ের ওপর। একসময় যে অঞ্চলে অফুরন্ত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ছিল, তা পড়ে স্থবিরতার কবলে। ফলে উদীয়মান আরব অভিবাসীরা অন্যত্র নিজেদের ভাগ্য অনুসন্ধান শুরু করে।
আরব সম্প্রদায়, তাদের মসজিদ, স্কুল এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে এসেছে। যে সম্প্রদায় একসময় যেকোনো জায়গায় ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার ছিল তাদের সংখ্যা। এখন এক হাজারের নিচে যদিও। তবে পুরোপুরি সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা মুশকিল।
স্থানীয় দারুল ইকরাম স্কুলের ডিরেক্টর জর্জ মেনডোজা বলেন, ‘মাইকাও একটি সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। যা এখানকার বাণিজ্যকে প্রভাবিত করেছে। ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ছিলো আরব, যাদের অনেকেই সুযোগের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছে ছেলেমেয়েদের নিয়ে। আর এর প্রভাব পড়েছে স্কুলের ওপর।’
এত কিছুর পরও তারা মূল জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। অনেক কম শিশুকে এখন দারুল ইকরাম স্কুলের করিডোরে দেখা যায়। যদিও একসময় পরিপূর্ণ থাকা মসজিদের প্রার্থনা কক্ষের সামান্য জায়গাই ভরে যেত। তারপরও মাইকাওয়ের মুসলিম সম্প্রদায় এখানকার মৌলিক জনগোষ্ঠীর অংশ।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ১২ বছর বয়সী শিশু মো.মুনতাছির আলম মাত্র ছয় মাসে কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। অল্প সময়ের মধ্যে ৩০ পারা কোরআন মুখস্ত করে পরিবার, এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের অবাক করে দিয়েছে মুনতাছির।
সে উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়নের দারুল ফালাহ মাদরাসার হিফজ্ বিভাগের ছাত্র এবং মুনতাছির উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের বেপারী বাড়ির মো.শাহ আলম- রোকসানা আক্তার দম্পতির ছেলে।
জানা যায়, ছেলে জন্মের আগেই মায়ের নিয়ত ছিল ছেলে হলে তাকে কোরআনে হাফেজ বানাবেন। এতে মত ছিল বাবারও। যেমন নিয়ত,তেমন কাজ। এরপর ২০২৪ সালের শুরুর দিকে বাবা ও মায়ের ইচ্ছায় ছেলে মুনতাছিরকে বাড়ির পাশে দারুল ফালাহ মাদরাসার হিফজ বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর ৬ মাসে পবিত্র কোরআন মুখস্ত করে কোরআনে হাফেজ হন। এতে পরিবারে দেখা দেয় পরিবর্তন। পরিবারের সবার মধ্যে কথাবর্তা,আদব কায়দা, নামাজ কালামে পরিবর্তন চলে আসে। ছেলের এমন সাফল্যে খুশি মা-বাবাসহ এলাকাবাসী। বাবা-মায়ের প্রত্যাশা ছেলে নামকরা হাফেজে আলেম হয়ে দেশবাসীর কল্যাণে কাজ করবে।
মাদরাসার শিক্ষক ও স্থানীয়রা বলছে, মা-বাবা তার ছেলেকে ইসলামের পথে দেখতে চেয়েছিলেন। এ জন্য ছেলেকে মাদরাসায় হিফজ বিভাগে ভর্তি করান। তাদের স্বপ্ন পূরণে মনোযোগ দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে কোরআন মুখস্ত করে মুনতাছির। মুসলিম হিসেবে কোরআনে হাফেজ হওয়া পরিবার ও সমাজের জন্য সর্বোচ্চ পাওয়া।
শিশু হাফেজ মো.মুনতাছির আলম বলেন, মা-বাবা ও মাদরাসার ওস্তাদদের সহযোগিতায়া আমি ছয় মাসের মধ্যে হিফজ্ সম্পন্ন করি। সবার কাছে দোয়া চায় আমি যেন দেশ বরেণ্য হাফেজে আলেম হতে পারি।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু নাছের বলেন, শুধু মাদরাসার শিক্ষকরাই নয় এলাকাবাসীও শুভ কামনা জানিয়েছেন শিশু হাফেজ মুনতাছিরের জন্য। তাদের প্রত্যাশা ইসলাম প্রসারে ভূমিকা রাখবে এ ক্ষুদে হাফেজ। সমাজের মানুষ এ থেকে আরো বেশি দ্বীনি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হবে।
মুনতাছিরের বাবা শাহ আলম বলেন, আমার ছেলে জন্ম হওয়ার আগেই তার মায়ের নিয়ত ছিল ছেলেকে হাফেজ বানানোর। আল্লাহর রহমতে আমাদের আশা পূর্ণ হয়েছে। আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চায় আমার ছেলে যেন দেশ বরেণ্য হাফেজ ও আলেম হতে পারে।
দারুল ফালাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবুবক্কর ছিদ্দিক বলেন, ২০২৪ সালের শুরুর হিফজ্ বিভাগে ভর্তি হয়ে সে ছয় মাসের মধ্যে হিফজ্ সম্পন্ন করে। এতে তার পিতা-মাতার আন্তরিকতা সহযোগিতা এবং ওস্তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং সহযোগিতা ছিল। ২০১৮ সালে মাদরাসায় হেফজ বিভাগ চালু হওয়ার পর থেকে ৪৪জন ছাত্র হিফজু সম্পন্ন করে। বর্তমানে হিফজু বিভাগে ৬৪ জন ছাত্র অধ্যয়নরত রয়েছে। ভবিষ্যতে সে দেশ বরেণ্য হাফেজ ও আলেম হতে চায়। ছেলের জন্য দোয়া চেয়েছেন বাবা-মা।