সাইকেলে ৬ দেশ পাড়ি দিয়ে আল-আজহার পড়তে গেলেন যুবক
বিশ্বখ্যাত ইসলামি বিদ্যাপীঠ মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সাইকেলে ছয় দেশ পাড়ি দিয়েছেন আফ্রিকার দেশ গিনির এক যুবক। এ সময় তাকে মরুভূমির তপ্ত গরমসহ নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘ এ যাত্রায় ওই যুবককে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। এ সময় তিনি ছয়টি দেশ অতিক্রম করেছেন। এ পথ অতিক্রম করতে তার চার মাস সময় লেগেছে।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া ওই যুবকের নাম মামাদু সাফায়উ ব্যারি (২৫)। এত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে তিনি স্বপ্নের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পূর্ণ স্কলারশিপ দিয়েছে। যদিও তার এ পথ মোটেও সহজ ছিল না। যাত্রাপথে তিনি বিভিন্ন দেশে তিনবার আটক হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত মিসর পৌঁছাতে সক্ষম হন।
চলতি বছরের মে মাসে যাত্রা শুরু করেন ব্যারি। তিনি বিবিসিকে জানান, পড়াশুনার ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা না থাকলেও কেবল নিজের সাইকেলে প্রবল আগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। তিনি গিনি থেকে মিসরে যাত্রাপথে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যুত্থান এবং সহিংসতায় বিপর্যস্ত কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়েছেন। তার পাড়ি দেয়া দেশগুলো হলো- মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, টোগো, বেনিন এবং শাদ।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে ব্যারি বলেন, বর্তমানে এসব দেশ ভ্রমণ করা খুব কঠিন। কেননা এসব দেশে রাজনৈতিক কারণে নিরাপত্তা অনিশ্চিত। মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে লোকেরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকত যেন আমি খারাপ মানুষ। সর্বত্রই আমি সামরিক বাহিনীকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় দেখেছি।
তিনি জানান, এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে তাকে তিনবার আটকের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর মধ্যে বুরকিনা ফাসোতে দুবার ও টোগোতে একবার আটক হয়েছেন তিনি। যাত্রাপথে শাদে পৌঁছালে তিনি এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন। পরে ওই সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি প্রকাশ করলে গিনিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্যের ঢেউ শুরু হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, ব্যারির এ দুর্দশার কথা জেনে শাদের লোকেরা তার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত অর্থ জোগাড় হওয়ায় তিনি শাদ থেকে বিমানে মিসর পৌঁছান।
খালিজ টাইমস জানিয়েছে, চার মাসের এ প্রতিকূল পথ পাড়ি দিয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান। সেখানে তিনি ইসলামিক স্টাডিজে ভর্তি ও বিভাগের ডিন ড. নাহলা এলসেইডির পক্ষ থেকে স্কলারশিপ পান। এমনকি বিশ্ববিদ্যলয়ের ফেসবুক পেজে তার একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়।
ইসলামিক স্টাডিজে বিভাগের ডিন ড. নাহলা জানান, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সব দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের এখানে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়। তারা শিক্ষার্থীদের যত্ন নেয় এবং অনুদান দিয়ে থাকে।