জেনে নিন মাহরাম ও গায়রে মাহরাম কারা

  • মুফতি শরিফুল আজম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গায়রে মাহরামদের সঙ্গে পর্দা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

গায়রে মাহরামদের সঙ্গে পর্দা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

গায়রে মাহরামদের সঙ্গে পর্দা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কোরআন মাজিদের কয়েকটি সুরায় পর্দা সংক্রান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে। পর্দার বিষয়ে আল্লাহতায়ালা সব শ্রেণির ঈমানদার নারী-পুরুষকে সম্বোধন করেছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন তিনি যেন তার স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিন নারীদের চাদর দ্বারা নিজেদের আবৃত রাখার আদেশ দেন। কিছু আয়াতে উম্মুল মুমিনীনদেরকেও সম্বোধন করেছেন, কোনো কোনো আয়াতে সাহাবায়ে কেরামকেও সম্বোধন করা হয়েছে।

মোটকথা, কোরআন মাজিদ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য পর্দার বিধান দান করেছে। এটি ইসলামি শরিয়তের একটি ফরজ বিধান।

বিজ্ঞাপন

ইসলামের বিধানগুলো শুধু আখেরাতে নাজাতের উপায় নয়, দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্তি ও পবিত্রতার রক্ষাকবচ। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অমুসলিমদের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে নিজেদের আর্দশ ত্যাগ করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছি। আমাদের পরিবার ও সমাজে পশ্চিমা সমাজের ভয়াবহ উপসর্গগুলো প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। পশ্চিমা সভ্যতা যেসব মরণব্যাধিতে আক্রান্ত তা থেকে যদি আমরা পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করতে চাই তার একমাত্র উপায় ইসলামের বিধান ও আদর্শের সামনে আত্মসমর্পণ। আমরা যদি পারিবারিক শান্তি ফিরে পেতে চাই, তাহলে নারী-পুরুষ সবাইকে পর্দা-বিধানের অনুসারী হতে হবে।

এ জন্য মাহরাম ও গায়রে মাহরাম বলতে কি বুঝায় এবং তাদের পরিচয় জানা থাকা দরকার। ইসলামে, একজন মাহরাম হলো পরিবারের একজন সদস্য যার সঙ্গে বিবাহ স্থায়ীভাবে বেআইনি (হারাম)। এর বিপরীত গায়রে মাহরাম। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য গায়রে মাহরামের সঙ্গে পর্দা করা ফরজ।

বিজ্ঞাপন

পর্দার সঙ্গে মাহরাম ও গায়রে মাহরামের সম্পর্কের বিষয়টি জড়িত। ইসলামি পরিভাষায় মাহরাম দ্বারা বুঝায়, যাদেরকে বিবাহ করা হারাম বা অবৈধ এবং দেখা করা বা দেখা দেওয়া জায়েয বা বৈধ। তবে স্ত্রীর বোনের সঙ্গে বিয়ে হারাম হলেও দেখা-সাক্ষাৎ করা বৈধ নয়। মূল কথা, শরিয়ত যাদের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক হারাম; তারাই মাহরাম।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, তোমাদের মেয়েদের, তোমাদের বোনদের, তোমাদের ফুফুদের, তোমাদের খালাদের, ভাতিজিদের, ভাগ্নীদের, তোমাদের সেসব মাকে যারা তোমাদের দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শ্বাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছো- সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র (বিয়ে) করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সুরা নিসা : ২৩

মাহরামের পরিচয় জানা থাকলে অনেক গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। যাদের সঙ্গে দেখা করা গোনাহ কিন্তু আত্মীয় পরিচয়ে সাধারণ দেখা-সাক্ষাৎসহ অনেক সময় বিয়ের মতো জঘন্য গোনাহের কাজও সংঘটিত হয়ে যায়। তাই মাহরামের পরিচয় জানা সবার জন্য জরুরি। এখানে মাহরাম ও গায়রে মাহরামের একটি তালিকা দেওয়া হলো-

পুরুষের জন্য মাহরামের তালিকা
দাদী, মা/দুধ মা, বোন/দুধ বোন, শাশুড়ি, স্ত্রী, মেয়ে/দুধ মেয়ে/সৎ মেয়ে, ছেলের/দুধ ছেলের স্ত্রী, ফুপু, খালা, ভাইয়ের/বোনের মেয়ে এবং নানী।

পুরুষের জন্য গায়রে মাহরামের তালিকা
মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন, চাচাতো বোন, ভাবী, বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন, চাচী, ফুফাতো বোন, খালাতো বোন, মামাতো বোন, শ্যালক/শ্যালিকার মেয়ে, শ্বশুর/শাশুড়ির বোন, শ্যালিকা, মামী, স্ত্রীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুফাতো বোন, স্ত্রীর ভাবী, মেয়ের ননদ এবং ছেলে/মেয়ের শাশুড়ি।

নারীদের জন্য মাহরামের তালিকা
দাদা, বাবা, ভাই, শ্বশুর, স্বামী, ছেলে, নাতী, চাচা, ভাইয়ের/বোনের ছেলে, নানা এবং মামা।

নারীদের জন্য গায়রে মাহরামের তালিকা
মায়ের খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই, চাচাতো ভাই, দুলাভাই, বাবার খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই, ফুপুর স্বামী (ফুপা), ফুপাতো ভাই, খালাতো ভাই, মামাতো ভাই, ননদের ছেলে, শ্বশুর/শাশুড়ির ভাই, দেবর/ভাসুর, ননদের স্বামী, স্বামীর খালাতো/চাচাতো/মামাতো/ফুপাতো ভাই, স্বামীর দুলাভাই, ছেলের শ্যালক, ছেলে/মেয়ের শ্বশুর এবং খালার স্বামী (খালু)।