চোখের গোনাহ থেকে সাবধান
দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে অন্তরের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ প্রথমে কোনো কিছু আত্মস্থ করে। বুঝে নেয় অথবা অনুমান করে। কোনো বস্তুর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ হওয়ার পর তাকে নিয়ে ভাবা হয়। ভালো কিছুর প্রতি নজর করলে অন্তরে একটি ভালো রেখা অঙ্কিত হয়, মন ভালো থাকে।
আর খারাপ কিছুর প্রতি দৃষ্টি পড়লে মন খারাপ হয়। তাই বৈধ জিনিসের প্রতি নজর করা কাম্য। কারণ দৃষ্টিশক্তি আল্লাহর দান। তার দেওয়া বস্তু তার নির্দেশিত পন্থায় ব্যবহার করতে হবে। অন্যথায় ইহকালীন ও পরকালীন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
ইসলামের সীমারেখা
দৃষ্টিপাত করার ক্ষেত্রে কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ, তা নির্ধারণ করে দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি, নিদর্শন ও নেয়ামতের প্রতি দৃষ্টিপাত এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার দ্বারা স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এই চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে অশেষ সওয়াব রয়েছে। কোরআন মাজিদে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মাঝে এবং রাত-দিনের বিবর্তনের মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন। যারা দাঁড়িয়ে ও বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান জমিনের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে, আর বলে; হে আমাদের প্রভু! আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৯১
পক্ষান্তরে নাচগান, সিনেমা কিংবা অশ্লীল দৃশ্য দেখা ইসলামে নিষিদ্ধ। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য অধিক বিশুদ্ধতা। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সে বিষয়ে অবগত যা তারা করে।’ -সুরা নুর : ৩০
পরবর্তী আয়াতে মুমিন নারীদের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আপনি মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষু অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে।’ -সুরা নুর : ৩১
অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টির ক্ষতি
চোখ আল্লাহর দেওয়া অনেক বড় নেয়ামত। নিষিদ্ধ জিনিস দেখার দ্বারা এ নেয়ামতের অবহেলা করা হয়, চোখের জ্যোতি কমে যায়। তাই ইসলামে এসব জিনিস দেখা হারাম করা হয়েছে। হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টি হচ্ছে- শয়তানের বিষাক্ত তীরসমূহ থেকে একটি তীর।’ -মুসনাদে আশ শিহাব : ১/১৯৫
এই তীরে বিদ্ধ হওয়া থেকে বাঁচতে হলে নজর হেফাজত করতে হবে। অন্যথায় অগণিত নেকআমল করা সত্ত্বেও আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘নজর এমন একটি তীর, যা মানুষের অন্তরে বিষের উদ্রেক করে।’ -ইবনে কাসির : ৩/১৭৬
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা দৃষ্টিকে নত করো, নিয়ন্ত্রণ করো এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করো।’ -তাবারানি : ৮০১৮
কেবল পরকালের জন্যে নয়। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ ও পবিত্রতা রক্ষা না করা হলে দুনিয়ায়ও খারাপ পরিণতি দেখা দিতে পারে। এর অন্যতম হলো- স্বামীর অন্তর অন্য নারীর দিকে আকৃষ্ট হওয়া এবং স্ত্রীর মন সমর্পিত হওয়া অন্য পুরুষের দিকে। এর পরিণতি হচ্ছে- পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে আশু বিপর্যয় ও ভাঙ্গন।
দৃষ্টিশক্তির বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তিনি দৃষ্টিসমূহের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে এবং (তারই কারণে) অন্তরে যে কামনা-বাসনা গোপনে জাগ্রত হয় তা ভালোভাবেই জানেন।’ -সুরা মুমিন : ১৯
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম বায়যাবি (রহ.) লিখেছেন, ‘বিশ্বাসঘাতক দৃষ্টি হলো- গায়য়ে মাহরাম নারীদের প্রতি বারবার দৃষ্টি নিক্ষেপ, তার প্রতি চুরি করে তাকানো বা চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অথবা দৃষ্টির অন্যকোনো বিশ্বাসঘাতকতামূলক আচরণ।’ -তাফসিরে বায়যাবি : ২/২৬৫
অনিয়ন্ত্রিত দৃষ্টিপাতের ব্যাপারে অবহেলা
বর্তমানে চোখের হেফাজত না করা একটি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখের গোনাহকে গোনাহ মনে হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই চোখের জিনা (ব্যভিচার) হচ্ছে- (অন্যায়) দৃষ্টিপাত করা।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৬৪৭
ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইন-অফলাইনে সর্বত্রই নারীর ব্যাপক উপস্থিতি। অবাধে বিজ্ঞাপনে নারীদের ব্যবহার করা হয়। ইসলামে স্পষ্ট হারাম জিনিসকে কতটা হালকা করে দেখা হচ্ছে। পর্নোগ্রাফিকে খারাপ ও হারাম মনে করলেও আমরা গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত হারাম মনে করি না। এ জন্যই আমরা নামাজে ও অন্য ইবাদতের স্বাদ পাই না। ইবাদত করাটা বোঝা মনে হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু ও অন্তর এসবের বিষয়ে হাশরের মাঠে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৩৬
ইসলামি স্কলাররা বলেন, মহান রবের সান্নিধ্য লাভ করতে হলে এবং ইবাদতের স্বাদ পেতে হলে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চোখের হেফাজত করতে হবে।