অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচার দোয়া

অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচার দোয়া

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র কোরআন-হাদিসে বৃষ্টির নানা উপকারিতার কথা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি ভূপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিত উৎপন্ন করেছি।’ -সুরা কাফ : ৭

স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ। তবে অতীতে অনেক জাতি বৃষ্টির আজাবে ভুগেছিল। হজরত নুহ (আ.)-এর জাতিকে অতিবৃষ্টির মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি রবকে ডেকে বললেন, আমি তো অসহায় হয়ে পড়েছি, আমাকে সাহায্য করুন। অতঃপর আমি আকাশের দরজা প্রবল বর্ষণের জন্য উন্মুক্ত করে দিই। ভূপৃষ্ঠ থেকে ঝরণা প্রবাহিত করি। অতএব, সব পানি পরিকল্পনা অনুসারে মিলিত হয়।’ -সুরা কামার : ১০-১৩

মেঘের গর্জনে আজাবের শঙ্কা : বৃষ্টির আগমুহূর্তে মেঘের গর্জন শুনলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ দেখা যেত। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, আমি কখনো রাসুল (সা.)-কে এমনভাবে হাসতে দেখিনি যে তার আলা জিহ্বা দেখা যায়। তিনি সব সময় মুচকি হাসতেন। তিনি মেঘ বা বাতাস দেখলে তার চেহারায় শঙ্কা দেখা যেত। আমি বলতাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ মেঘ দেখে খুশি হয়। কারণ তাদের আশা একটু পরই বৃষ্টি হবে। আর আপনি মেঘ দেখলে আপনার চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ করা যায়? তখন তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! আমি কিভাবে নিশ্চিত হবো যে, তাতে আজাব নেই? কারণ অনেক সম্প্রদায় প্রবল বাতাসে নিশ্চিহ্ন হয়েছে। অনেক সম্প্রদায় মেঘ দেখে বলেছে, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮২৮

আজাব থেকে মুক্তির দোয়া : অনেক সময় বৃষ্টির মাধ্যমে আজাব ঘনিয়ে আসে। অতিবৃষ্টির কারণে তৈরি হয় ভয়াবহ বন্যা বা ভীতিকর পরিবেশ। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা উপত্যকার প্রান্তে মেঘ দেখল তখন বলতে লাগল, এই মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে, (তখন বলা হলো) বরং এটা তা-ই, যা তোমরা তাড়াহুড়া করতে, এই ঝড়ো বাতাসে মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।’ -সুরা আহকাফ : ২৪

মেঘের গর্জন শুনে দোয়া : মেঘের শব্দ শুনলে দোয়া পড়া সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মেঘ ও বজ্রের আওয়াজ শুনলে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের আপনার ক্রোধ দিয়ে হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করবেন না এবং এর আগেই আমাদের নিরাপদে রাখুন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৪০৫

অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির থেকে মুক্তির দোয়া : অতিবৃষ্টিতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন এবং ফসল বিনষ্ট হয়। তাই অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি উভয়টি ক্ষতিকর। হজরত আনাস বিন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, জুমার দিন এক ব্যক্তি মিম্বার বরাবর দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে। তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন। সেই লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং রাস্তাও বন্ধ হয়ে পড়েছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করে বলেন, ‘আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা আল্লাহুম্মাস কিনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের বৃষ্টি দিন (তিনবার বলেন)। আল্লাহর শপথ, ওই সময় আকাশে মেঘ বা অন্য কিছুই ছিল না। সালআ পাহাড় ও আমাদের মধ্যভাগে কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। অতঃপর পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মেঘ বেরিয়ে এসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়।

এরপর ছয় দিন পর্যন্ত সূর্যের দেখা পাইনি। পরের জুমার দিন ওই দরজা দিয়ে আবার এক লোক প্রবেশ করে। রাসুল (সা.) খুতবা দিতে দাঁড়ালে সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! সম্পদ নষ্ট হচ্ছে এবং পথঘাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি তা বন্ধ করেন।

রাসুল (সা.) দুই হাত তুলে দোয়া করলেন, ‘আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা, ওয়া লা আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াল জিবালি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের ওপর নয়, আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন। টিলা, পাহাড়, উঁচু ভূমি, মালভূমি, উপত্যকা ও বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, এরপর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় এবং আমরা রোদের মধ্যে হাঁটতে শুরু করি। -সহিহ বোখারি : ১০১৩

   

মেয়ের স্মৃতি রক্ষায় নির্মিত এক মসজিদের কথা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রামের বাঁশখালী মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ ইসলামের এক অনুপম ও প্রাচীন নিদর্শন। প্রায় পৌনে ৩০০ বছরের প্রাচীন মসজিদটি মোগল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। এর মিনার গম্বুজ মেহরাব সবই নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দনভাবে, যা দীর্ঘদিন ধরে প্রাচীন মোগল স্থাপত্য শৈলীর উপমা হয়ে আছে।

বাঁশখালী সরল ইউনিয়নে তৎকালীন প্রভাবশালী জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে তার একমাত্র মেয়ে মালেকা বানু চৌধুরীর স্মৃতিস্বরূপ এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্রাট শাজহান যেমন তার প্রিয়তমা সহধর্মিণীকে ভালোবেসে আগ্রার তাজমহল গড়েছিলেন। আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী তার একমাত্র কন্যার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তার স্মৃতি ধরে রাখতেই এই মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন।

জানা গেছে, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার জবরদস্ত খাঁ ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে মালেকা বানু চৌধুরীর বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শ্বশুর বাড়ি চলে আসলে মালেকার স্মৃতি ধরে রাখতেই তৎকালীন জমিদার আমীর মোহাম্মদ চৌধুরী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে শাসক লর্ড চার্লস কর্নওয়ালিস শাসন আমল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ ও তৎসম ভূমি জমিদারিতে নিবন্ধনভুক্ত হয়।

সংস্কারের আগে ও পরে, ছবি : সংগৃহীত

আমীর মোহাম্মদ চৌধুরীর বংশধরদের মধ্যে বর্তমানে দিদারুল কবির চৌধুরী বলেন, মসজিদটি সর্বপ্রথম ১৭৩০ সালে স্থাপিত হয়। পরে জমিদারি বন্দোবস্ত হয় ১৭৯৩ সালে।

১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রথম সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও এর শ্রীবৃদ্ধিকরণে বাংলা ২০১০ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটিতে টালি সংযোজন সংস্কার করে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। পরবর্তী সর্বশেষ ২০২১ খ্রিস্টাব্দে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর ছেলেরা মূল মসজিদের পুনঃসংস্কার করে একতলা বিশিষ্ট এর বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। বর্তমানে মরহুম ফৌজুল কবির চৌধুরীর বংশধরগণ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করে আসছেন।

মালেকা বানু চৌধুরীর ভাই দেওয়ান আলী চৌধুরীর সর্বকনিষ্ঠ বংশধর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিদারুল কবির চৌধুরীর বলেন, ইতিহাস থেকে জানা যায়, মালেকা বানু চৌধুরীর পিতা আমির মোহাম্মদ চৌধুরী ছিলেন তৎকালের প্রভাবশালী জমিদার। তার আট সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যাসন্তান ছিলেন মালেকা বানু চৌধুরী। তার বাবার জীবদ্দশায় মালেকা বানু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী জমিদার পুত্র জবরদস্ত খা ওরফে মনু মিয়ার সঙ্গে। তাদের এই বিবাহের পূর্বে মিলন-বিরহের ঘনঘটাপূর্ণ কাহিনী যাই থাকুক না কেন বর্তমানে কয়েকশত বছর ধরে মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদটি প্রাচীন অনুপম নিদর্শন হিসেবে ইসলামের দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে।

মালেকা বানু চৌধুরী জামে মসজিদ, ছবি : সংগৃহীত

যেভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম শহরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালীগামী যেকোনো বাসে করে বাঁশখালী উপজেলার মিয়ার বাজার স্টেশনে নেমে প্রধানসড়কস্থ পশ্চিম দিকে হারুনবাজার সড়ক দিয়ে সিএনজি অটোটেক্সি, মাইক্রোবাসে সরাসরি সরল বাজার যেতে হবে। সরল বাজার থেকে সামান্য দূরে পশ্চিম দিকে একই গাড়ী নিয়ে মালেকা বানুর স্মৃতিবিজড়িত দীঘি ও মসজিদ স্পটে যাওয়া যাবে।

;

হাদিসের ঘটনা

সত্যবাদিতার প্রয়োজনীয়তা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

সততায় বরকত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে হাদিসের বর্ণনা আছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নবীদের মধ্যে কোনো একজন জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, ‘যে নতুন বিয়ে করেছে এবং তার সঙ্গে বাসর করার বাসনা রাখা সত্ত্বেও যে এ পর্যন্ত তা করেনি, তেমন লোক যেন আমার সঙ্গে না যায়। এমন লোকও যেন না যায়, যে ঘর তুলেছে, কিন্তু এখনো ছাদ ঢালেনি। তেমন লোকও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল বা মাদি উট কিনে সেগুলোর বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’

এরপর ওই নবী জিহাদের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাজের সময় বা তার কাছাকাছি সময়ে ওই গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন) পৌঁছালেন। তারপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তার) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ সূর্যকে আটকে দেওয়া হলো। এমনকি আল্লাহতায়ালা (ওই জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন।

এরপর তিনি গণিমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এলো, কিন্তু সে তা খেল না (ভস্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গণিমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য থেকে একজন আমার হাতে বায়াত করুক।’

তারপর (বায়াত করতে করতে) একজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। তাই তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে বায়াত করুক।’ দুই বা তিনজনের হাত তার হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ তারা গাভির মাথার মতো একটি সোনার মাথা নিয়ে এলো। তিনি তা গণিমতের সঙ্গে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল।

নবী কারিম (সা.) বলেন, আমাদের আগে গণিমতের মাল কারও জন্য হালাল ছিল না। পরে আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখে আমাদের জন্য তা হালাল করে দেন। -সহিহ বোখারি

;

বরকত নষ্ট হয় যে কাজে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুদৃষ্টির কারণে মানুষের রিজিক এবং সময় থেকে বরকত উঠে যায়। ছোট ছোট কাজ বিশালাকার ধারণ করে। যে কাজের চেষ্টাই করুক না কেন সেটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হয় কাজ হয়ে যাবে, কিন্তু যথাসময়ে গিয়ে দেখা যায় যে, হতে হতেও কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। এর ফলে দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি বাড়ে বৈ কমে না। অনেকে তো বলেই বসে, ‘একটা সময় ছিল, যখন স্পর্শ করলে মাটিও সোনায় পরিণত হতো। আর এখন সোনা স্পর্শ করলেও তা মাটি হয়ে যাচ্ছে।’ কিন্তু কেন? এর কারণ কী?

হজরত উমর (রা.) বলেন, দু’টি পুরাতন জীর্ণ হাড়ও যদি নির্জনে একত্রিত হয়, একে অন্যের প্রতি আসক্ত হবেই হবে। (দু’টি জীর্ণ হাড় দ্বারা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে বোঝানো হয়েছে।)

হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলতেন, কুদৃষ্টি স্মৃতিশক্তির জন্য প্রাণনাশকারী বিষের ন্যায়।

হজরত মুজাদ্দিদে আলফেসানি (রহ.) স্বীয় চিঠিপত্র সংকলনে লিখেছেন, যার দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণে নেই, তার অন্তরও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। আর যার অন্তর নিয়ন্ত্রণহীন হয় তার লজ্জাস্থানও তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) বলেছেন, এক ব্যক্তির মৃত্যুর সময় লোকেরা তাকে কালেমার তালকিন (মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া) করতে লাগল। সে উত্তর দিল, (কালেমা পাঠের সময়) আমার জিহ্বা নড়ছে না। জিজ্ঞাসা করা হলো, কী কারণে এমন হচ্ছে? সে বলল, এক নারী আমার কাছে তোয়ালে ক্রয়ের জন্য এসেছিল। আমার তাকে ভালো লেগে গিয়েছিল, তাই লালসার দৃষ্টিতে তাকে দেখছিলাম। -আপবীতী : ৬/৪২০

শায়খুল হাদিস যাকারিয়া (রহ.) আরও বলেন, ‘কুদৃষ্টি বড়ই বিধ্বংসী রোগ। আমার অনেক পরিচিতজনদের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। তাই একটি অভিজ্ঞতা আমারও আছে। জিকিরে মনোনিবেশের ফলে শুরুতে স্বাদ লাভ ও জোশের একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কুদৃষ্টির কারণে ইবাদতের মিষ্টতা ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে তা ইবাদত ছুটতে থাকারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। -আপবীতী : ৬/৪১৮

কুদৃষ্টি দ্বারা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় : হজরত মাওলানা খলিল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) বলেন, পর নারী এবং নাবালেগ শিশুদের কুদৃষ্টির সঙ্গে দেখার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

কুদৃষ্টি দ্বারা কখনও তৃপ্তি লাভ হয় না : হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) বলেন, ‘কুদৃষ্টি যত বেশি পরিমাণেই করা হোক, এমনকি যদি হাজার হাজার নারী-পুরুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নিয়েও দেখা হয়, তবুও তাতে তৃপ্তি লাভ হবে না।’

আলেমরা বলেন, কুদৃষ্টি এমন পিপাসার জন্ম দেয়, যা কখনও নিবারণ করা যায় না। পানি শূন্যতার রোগীকে যত পানিই পান করানো হোক, যদি তার পেট ফেঁটে যাবারও উপক্রম হয়, তবুও তার পিপাসা দূর হয় না। আল্লাহতায়ালা একজনকে অপরজনের তুলনায় অধিক সৌন্দর্য দান করেছেন। মানুষ যত সুন্দরিকেই দেখুক না কেন, একজনকে দেখবে তো আরেকজনকে দেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এটি এমন এক সমুদ্র, সারাজীবন সাঁতার কেটেও যার তীরে পৌঁছা সম্ভব নয়। কেননা এটি হচ্ছে কূলহীন দরিয়া।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে চোখের হেফাজত করে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে চলার তওফিক দান করুন।

;

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় নির্মিত মসজিদে নূর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। নান্দনিক সৌন্দর্যের এ মসজিদটি কাছে টানছে দর্শনার্থীদের। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে মুসল্লিরা আসেন এখানে নামাজ আদায় করতে।

শতবর্ষের পুরোনো কোনো মসজিদ না হলেও এর সৌন্দর্যের কথা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদটিতে আসা মুসুল্লিদের দাবি, বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগে এমন সুন্দর নান্দনিক মসজিদ আর নেই।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

মসজিদের দায়িত্বে থাকা ইমাম জানান, মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মসজিদের কাঠামো। যা দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।

জানা গেছে, হজে যাওয়ার পর মদিনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক চিশতী (ওরফে বাবুল চিশতী)। তিন দরজাবিশিষ্ট মসজিদের ছাদের মাঝখানে আছে বড় একটি গম্বুজ। যার ভেতরের অংশেও আছে সুন্দর নকশার সমাহার। আর চারপাশে পিলারের ওপর নির্মিত হয়েছে সাতটি গম্বুজসহ চারটি বড় মিনার। মসজিদটির সৌন্দর্য দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসেন দর্শনার্থীরা।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

বকশীগঞ্জের শহরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে এই মসজিদটি। পৌরসভার দড়িপাড়ায় ব্যক্তিগত অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য ভরা মসজিদে নূর। তুরস্কের আদলে তৈরি করা মসজিদটি দ্বিতলবিশিষ্ট ও সম্পূর্ণ কারুকার্যমণ্ডিত। এই মসজিদে দুই হাজার ৫০০ মুসুল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

শেরপুর থেকে শাউন মোল্লা নামের এক দর্শনার্থী পরিবারকে নিয়ে এই মসজিদ দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অনেক বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশী এই মসজিদ সম্পর্কে বলেছে। আসবো আসবো করে আসা হয় না। এবা সুযোগ বের করে পরিবার নিয়ে এসেছি, নামাজও পরলাম।

সৌন্দর্য ছড়ানো জামালপুরের মসজিদে নূর

স্থানীয় বাসিন্দা লাভলু মণ্ডল জানান, মাহবুবল হক চিশতী অনেক সময় ধরে এই মসজিদ তৈরি করেছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে মসজিদ তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়েছে।

মসজিদের মোয়াজ্জিন মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই মসজিদের মূল ক্যাম্পাসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। ফুলের বাগানে ঘেরা এই মসজিদের পাশে বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, মাদরাসাসহ দৃষ্টিনন্দন একটি অজুখানা রয়েছে। অজুখানাটিও দেখতে বেশ সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন।

মসজিদের নূরের ইমাম মো. বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই মসজিদে ২০১৮ সালের ১১ মে প্রথম জুমার নামাজের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নামাজ আদায় করা শুরু হয়।

;