আল আকসার প্রতি ভালোবাসা ইমানের অংশ



মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
আল আকসা কমপ্লেক্সে অবস্থিত ডোম অব রকের সোনালী গম্বুজ

আল আকসা কমপ্লেক্সে অবস্থিত ডোম অব রকের সোনালী গম্বুজ

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনে অবস্থিত বায়তুল মোকাদ্দাস বা মসজিদে আকসা মুসলমানদের প্রথম কেবলা। এটি ইসরা ও মিরাজের স্মৃতি বিজরিত পূণ্যভূমি। আল আকসার প্রতি ভালোবাসা স্থাপন ইমানের অংশ, ইবাদতের অংশ। এই মসজিদের কথা পবিত্র কোরআনে আলোচনা করা হয়েছে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় মসজিদ। তা কোরআন মাজিদে বর্ণিত (আরদে মোকাদ্দাসসহ) বিশেষ পবিত্র জমিনে অবস্থিত। এই মসজিদের আশেপাশে অনেক নবীদের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। অনেক নবী হিজরত করেছেন এই এলাকায়। এমনকি এই মসজিদে অনেক নবী ইমামতি করেছেন। বিশেষত হজরত জাকারিয়া (আ.)।

পবিত্র মেরাজের রাতে সব নবী-রাসুলদের আল্লাহতায়ালা বায়তুল মোকাদ্দাসে একত্রিত করেন কুদরতিভাবে। নবী কারিম (সা.) তখন দুই রাকাত নামাজের ইমামতি করেন।

হাশরের কেন্দ্রস্থল হবে মসজিদে আকসা ও তার আশপাশ এলাকা। এই মসজিদে প্রতি রাকাত নামাজে ২৫০ রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়। যেসব মসজিদে বিশেষ সওয়াবের আশায় সফর করা জায়েজ, এই মসজিদ তার একটি। এই মসজিদ ও তার চতুর্পাশ বরকতময়। এই মসজিদে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। এই মসজিদে নামাজ পড়লে তার গোনাহ এমনভাবে মাফ হয়, যেমন সদ্য জন্মলাভকৃত শিশু।

সেই বায়তুল মোকাদ্দাসকে বুকে ধারণ করা ফিলিস্তিন প্রায় সাত-আট দশক ধরে ইহুদিদের দ্বারা দখল হয়ে আছে। দখলদার ইসরাইলিদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে বুলেট ও মিসাইল ব্যবহার, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের কোনো তোয়াক্কা না করে দখলকৃত ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ও ক্ষেত-খামার ধ্বংস করা, জাতিসঙ্ঘের অনেক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ধারাবাহিক উপেক্ষা, ইত্যাদি ঘটনা ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভকে উসকে দিয়েছে। ফলে স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসসহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ সশস্ত্র প্রতিরোধের রূপ নেয়। যা বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।

অথচ এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এ লক্ষে দেওয়া প্রস্তাবে আরব পিস ইনিশিয়েটিভ (এপিআই) বা সৌদি ইনিশিয়েটিভ হতে পারে একমাত্র সমাধানের উপায়। এটি মূলত আরব-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধ করতে তৎকালীন সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ কর্তৃক উত্থাপিত কিছু দাবি। ২০০২ সালের ২৭-২৮ মার্চ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আরব লিগের ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনে এর অনুমোদন দেওয়া হয়। শীর্ষ সম্মেলনের পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ‘আরব পিস ইনিশিয়েটিভ’ শিরোনামে আরব লিগের তৎকালীন মহাসচিব আমর মুসা তা পাঠ করে শোনান।

পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা, গোলান ভূমি ও লেবাননের ভূমিসহ ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত স্থান পুরোপুরি প্রত্যাহার, জাতিসংঘের ১৯৪তম ধারা মতে ফিলিস্তিন শরণার্থী সমস্যার ‘ন্যায্য নিষ্পত্তি’ ও পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করাই পিস ইনিশিয়েটিভের মূলকথা। দাবিগুলো পূরণ হলে আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরিতে আর কোনো বাধা থাকবে না বলে তাতে মন্তব্য করা হয়। তবে ইসরায়েলকে ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফিরতে বলায় তৎকালীন ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন উদ্যোগটিকে ‘নন স্টার্টার’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২০০৭ সালে আরব লিগ পিস ইনিশিয়েটিভকে আবার অনুমোদন দিলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট পরিকল্পনাকে কৌশলে স্বাগত জানান।

২০০৯ সালে ইসরায়েলের প্রতি আরব রাষ্ট্রের শান্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হলে আনন্দ প্রকাশ করেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ। তখন তিনি এ কথাও বলেন, ‘এই ইনিশিয়েটিভ প্রস্তুতকালে ইসরায়েল এর অংশীদার ছিল না। তাই এর সব শব্দের সঙ্গে একমত পোষণ আবশ্যক নয়।’

দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফা শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের জানাজায় শোকার্তদের ভিড় 

 

২০১৫ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু উদ্যোগকে সমর্থন করলেও ২০১৮ সালে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার ভিত্তি হিসেবে এটিকে প্রত্যাখ্যান করেন।

ফিলিস্তিনের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের পর মাহমুদ আব্বাসও এটি সমর্থন করেন। ফিলিস্তিনের হামাসসহ অনেক দল ইনিশিয়েটিভ নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। পরবর্তী সময়ে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ৫৭টি রাষ্ট্র এবং বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বেশ কিছু দিন আগে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব আমিরাতের স্বাভাবিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে আরব পিস ইনিশিয়েটিভের আলোকে ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। এর পর থেকে আবারও তা মুসলিম বিশ্বের আলোচনায় আসে। নিম্নে আরব পিস ইনিশিয়েটিভের মূলকথা তুলে ধরা হলো।

কাউন্সিল অব দ্য লিগ অব আরব স্টেটের ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনে উত্থাপিত ‘আরব পিস ইনিশিয়েটিভ’-এ বলা হয়, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরব রাষ্ট্রের কৌশলগত বিকল্প হিসেবে পুনর্বিবেচনা করা হয়। আর তা আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বাস্তবায়ন সম্ভব। এতে ইসরায়েল সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়ক ভূমিকা থাকতে হবে।

সৌদি আরবের যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ কর্তৃক উত্থাপিত ‘আরব পিস ইনিশিয়েটিভ’ বা শান্তি উদ্যোগে ১৯৬৭ সালের জুন মাস থেকে ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত আরব ভূমি পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়। যা ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ সম্মেলনে অনুমোদিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩৩৮ ধারা বাস্তবায়ন ও শান্তির বিনিময়ে ভূমি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, পশ্চিম জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে ইসরায়েলের স্বীকৃতিদানের বিনিময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে ব্যাপক শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করা হবে।

মোটকথা, সংঘাতের মাধ্যমে সামরিক সমাধান কখনো শান্তি বয়ে আনবে না কিংবা কোনো পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করার বিষয়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর একাত্মতা পোষণ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই অধিবেশন প্রত্যাশা করে-

এক. ইসরায়েল যেন নিজেদের নীতিগুলো পুনর্বিবেচনা করে এবং এ ঘোষণা দেয় যে ন্যায়সংগত শান্তি তাদের কৌশলগত বিকল্প নীতি।

দুই. ইসরায়েলের প্রতি আরো অনুরোধ থাকবে- ক. তারা যেন ১৯৬৭ সালের ৪ জুন থেকে সিরিয়ার গোলান ভূমিসহ ’৬৭ সালের পর থেকে দখলকৃত ভূমি পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের দখলকৃত ভূমিও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে, খ. ফিলিস্তিন শরণার্থী সমস্যার ন্যায্য সমাধান করতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ১৯৪তম ধারার প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করতে হবে, গ. ১৯৬৭ সালের ৪ জুন থেকে ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকায় পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিন. ওপরের দাবিগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আরব রাষ্ট্রগুলো নিম্নের বিষয়াবলি নিশ্চিত করবে- ক. আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিসমাপ্তি এবং এই অঞ্চলের সব রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলো শান্তিচুক্তি সম্পাদন করবে, খ. সর্বাঙ্গীণ শান্তির প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে।

চার. আয়োজক আরব রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ পরিস্থিতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ফিলিস্তিনের সব ধরনের জাতীয়তাবোধ প্রত্যাখ্যানের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

পাঁচ. শান্তির সম্ভাব্য পথ অবলম্বনে রক্তপাত বন্ধে করতে ইসরায়েল সরকার ও ইসরায়েলবাসীকে কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। এতে আরব রাষ্ট্রগুলো ও ইসরায়েল নিরাপদে ও উত্তম প্রতিবেশী হয়ে বসবাস করতে পারবে এবং পরবর্তী প্রজম্মকে নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ প্রদান করতে পারবে।

ছয়. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সব রাষ্ট্র ও সংস্থাকে এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সাত. এই শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতির কাছে আবেদন করা হয়, যেন তিনি আগ্রহী সদস্য রাষ্ট্র ও আরব লিগ মহাসচিবের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন, যারা জাতিসংঘ, নিরাপত্তা পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র, রুশ ফেডারেশন, মুসলিম রাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অন্যদের কাছ থেকে এই উদ্যোগের সব রকম সমর্থন আদায়ে জরুরি যোগাযোগ সম্পন্ন করবে।

   

অপরূপ প্রকৃতির মাঝে দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ, শ্রীমঙ্গল, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ বনানী, পাহাড় আর চা বাগানের অপরূপ দৃশ্য মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলকে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচয় করিয়েছে। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এখানে। শ্রীমঙ্গলে অনেকেই দেখতে আসনে পাহাড়ের মাঝে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদ।

শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে সামনে দিকে গেলেই দেখা মিলবে মসজিদটির। জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের প্রবেশদ্বার পেরিয়ে প্রথমে খাতায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পর সুযোগ মিলবে তা পরিদর্শনের।

শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ, নেই কোনো কোলাহল। দূর থেকে দেখা যায়, সবুজের মাঝে সিঁড়ির লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণ। শতাধিক সিঁড়ি। এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ঘেরা নৈসর্গিক পরিবেশ। রয়েছে সারি সারি চা বাগান। গুনে গুনে ১৫০ সিঁড়ি পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছতে হবে মসজিদে।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে পরিচিত মসজিদটির নাম ‘মসজিদুল আউলিয়া খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)। ‘মসজিদটি নিয়ে মানুষের আকর্ষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে, এর স্থাপত্যশৈলী আর অবস্থান।

প্রায় ১৯ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হয় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি। সমতল থেকে প্রায় ৭০-৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মসজিদটি। চারপাশে রয়েছে, নানা রকমের গাছগাছালি। আছে লেবু ও আনারস বাগান। সবুজের সমারোহ চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে মসজিদ ঘিরে। চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর নাম না-জানা পাখিদের কিচিরমিচির এক অন্যরকম পরিবেশের তৈরি করেছে।

খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এই মসজিদটিতে প্রায় ৮০০ লোক একসঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধনে এর চারপাশে লাগানো হয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ। এর গঠনশৈলীও চমৎকার। তুর্কি স্থাপত্যের আদলে নির্মিত মসজিদটির ভেতরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক ঝাড়বাতি, যা আনা হয় সুদূর চীন থেকে।

মসজিদের সামনের অংশ

দর্শনীয় এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খাজা টিপু সুলতান। টিপু সুলতান ছিলেন খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.)-এর সাহেবজাদা। এই খাজা শাহ্ মোজাম্মেল হক (রহ.) আবার ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সুফি-সাধক খাজা ইউনুছ আলী এনায়েতপুরীর (রহ.) উত্তরসূরি।

মসজিদটির প্রাঙ্গণে আছে দুটি গেস্টহাউস এবং একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। এই চিকিৎসাকেন্দ্রে সপ্তাহের ছয় দিন গরিব মানুষদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া এখানে আছে একটা হেলিপ্যাড। গেস্টহাউসটি মূলত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের বিশ্রামের জন্য ব্যবহৃত হয়।

মসজিদের পাশেই রাখা হয়েছে কবরস্থানের জায়গা। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকরা একবার হলেও এখানে এসে ঘুরে যায়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২৪ নভেম্বর এ মসজিদ ঘিরে আয়োজন করা হয় বার্ষিক ওরস মাহফিলের।

এই সিঁড়ি বেয়েই আপনাকে ওপরে ওঠতে হবে

জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদটি দেখতে প্রথমে আপনাকে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্টের বিপরীত পাশের রাস্তা দিয়ে আসতে হয় এখানে। সিলেট শহর থেকে কিংবা গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে সিএনজি বা ইজিবাইক রিজার্ভ করে যেতে পারেন। শহর থেকে যাওয়া-আসা ভাড়া প্রায় তিন থেকে চারশ টাকা। গ্র্যান্ড সুলতানের সামনে থেকে গেলে ভাড়া কিছু কম পড়বে। অটোরিকশা দিয়েও যেতে পারেন। চারপাশের মনোরম পরিবেশ দেখতে দেখতে পৌঁছতে পারবেন।

;

পরনিন্দার পাপ থেকে বাঁচতে যা করবেন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘গিবত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পরনিন্দা করা, কুৎসা রটানো, পেছনে সমালোচনা করা, পরচর্চা করা, দোষারোপ করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার দোষ অন্যের সামনে তুলে ধরা।

শরিয়তে গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। হাদিসের বর্ণনা, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ -সহিহ মুসলিম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ -সুরা হুজুরাত : ১২

‘দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।...অবশ্যই তারা হুতামাতে (জাহান্নামে) নিক্ষিপ্ত হবে। তুমি কি জানো হুতামা কী? তা আল্লাহর প্রজ্বলিত অগ্নি, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। নিশ্চয় বেষ্টন করে রাখবে, দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে।’ -সুরা হুমাজা : ১-৯

গিবত এমনই ভয়াবহ পাপ। এটা থেকে বেঁচে থাকা মুমিন-মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। গিবত থেকে বাঁচার কিছু উপায় হলো-

১. কারও বিষয়ে হুটহাট করে কিছু না বলা। ভেবে-চিন্তে কথা বলা। যতটুকু সম্ভব কম কথা বলাই ভালো, কারণ- চুপ থাকাও একটা ইবাদত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’ -সহিহ বোখারি : ৬০১৮

২. যে উপস্থিত নেই, তাকে নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। সুতরাং বন্ধু-বান্ধব কিংবা কাছের কোনো আত্মীয়ের অনুপস্থিতিতে তাদের নামে ভালো কথাও না বলা। কারণ ভালো কথা বলা ফাঁকে শয়তান আপনাকে দিয়ে কখন যে গিবত করিয়ে নেবে; সেটা আপনি টেরই পাবেন না।

৩. অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকসমাগম এড়িয়ে চলা। কেননা যেখানে মানুষ বেশি থাকে সেখানে গিবতও বেশি হয়।

৪. আপনার কাছে কেউ গিবত করলে তাকে থামিয়ে দেবেন। সম্ভব হলে বুঝিয়ে বলবেন। কারণ গিবত করা ও গিবত শোনা উভয়টাই হারাম।

নিজেও যখন কথা বলতে বলতে গিবত করে ফেলবেন এবং খেয়াল হবে যে, আরে আমি তো গিবত করে ফেলেছি; সঙ্গে সঙ্গে থেমে যাবেন এবং তওবা করবেন।

৫. অমুক কেমন জানি পোশাক পরে, অমুকের রান্না ভালো না, অমুক মোটা, অমুক কালো, দেখতে একদম ভালো না ইত্যাদি- এ ধরনের কথাও গিবত। তাই এ জাতীয় কথা বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

৬. অমুক এই এই কাজগুলো ভালো করেনি। অমুকের এই-এই স্বভাব ভালো না। অমুকের নামে এই-এই বদনাম আছে। ওমুক আমার এই-এই ক্ষতি করছে। এগুলো বলার অর্থ হলো যে, মানুষের দোষ নিয়ে কথা বলা; যেটা গিবতের অন্তর্ভুক্ত।

৭. এর পরও যদি গিবত হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আস্তাগফিরুল্লাহ অথবা দুই রাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নেওয়া।

কাউকে নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা আমরা আল্লাহর কাছে বলা। পারলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। মানুষের কাছে এগুলো নিয়ে আলোচনা করে উল্টো নিজের গোনাহ কামানো কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না। অন্যের দোষ ঢেকে রাখলে আল্লাহতায়ালাও এ কারণে আমার-আপনার দোষ ঢেকে রাখবেন- ইনশাআল্লাহ!

মনে রাখবেন, গিবত আমাদের নেক আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। আল্লাহতায়ালা সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

;

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

পথচারীদের ঠাণ্ডা শরবত দিচ্ছে মারকাজুল কোরআন পরিবার, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তীব্র দাবদাহে রাজধানীর পিপাসার্ত মানুষের মাঝে টানা চার দিন ধরে সুপেয় ঠাণ্ডা শরবত (লাল চিনি, বিট লবণ, লেবু এবং এসএমসির ম্যাংগো ও অরেঞ্জ ফ্লেবার মিশ্রিত) বিতরণ করছে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার।

রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যাণ্ড, মিরপুর বাংলা কলেজের সামনে এবং মিরপুর ১ ও ১০-এর বিভিন্ন পয়েণ্টে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর পর ধারাবাহিকভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ১ হাজার ৫ শ’ লিটার শরবত বিতরণ করা হচ্ছে।

মে দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিকে সামনে রেখে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবার বুধবার (১ মে) মিরপুর ঈদগাঁহ ময়দান ও টিএসসির মোড়ে শরবত বিতরণ করবে।

পথচারীদের মাঝে ঠাণ্ডা শরবত বিতরণের বিষয়ে মারকাজুল কোরআন শিক্ষা পরিবারের সভাপতি ও মানবসেবায় সাড়া জাগানো প্রতিষ্ঠান তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঢাকাসহ সমগ্র দেশবাসী এখন প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে অবস্থান করছেন। এমন সময় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গরমে আমাদের আশপাশে অবস্থান করা শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই মূলত এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘গরমের তীব্রতা বেশি থাকলে সামনে আরও বেশ কিছুদিন এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

হিট স্ট্রোকের মারাত্মক এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্পটে ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথচারীদের বিনামূল্যে এমন উদ্যোগে ভীষণ খুশি সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, প্রচণ্ড গরমে রাস্তায় বেরিয়ে সবার প্রাণ যখন উষ্ঠাগত, তখন পথচারীদের ডেকে ডেকে শরবত করাচ্ছেন আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্ররা। এর চেয়ে বড় মানবিক কাজ আর হতে পারে না।

;

শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক হবে ভাই ভাই



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

শ্রমজীবী মানুষের প্রেরণা ও আবেগের দিন পয়লা মে। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মাহুতি দান করেছিলেন শ্রমিকরা। তাদের রক্তাক্ত স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৮৯০ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে মে দিবস গুরুত্বসহকারে পালিত হয়। মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই মেহনতি মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সঙ্গে সঙ্গে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে।

সময়ের পরিবর্তনে মে দিবস এখন সারা দুনিয়ায় সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। মে দিবসের ঐতিহাসিক প্রেরণায় কল-কারখানা, অফিস-আদালতসহ সব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকরা এখন উজ্জীবিত। যে উদ্দেশ্যে শ্রমিকেরা আন্দোলন করে জীবন দিয়েছিলেন সেই কাঙ্ক্ষিত কাজের সময়সূচি এখন প্রায় কর্মক্ষেত্রে অনুসৃত হচ্ছে। তবে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে নানা আপত্তি রয়েছে। তারপরও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা যে নেই তা বলা যাবে না।

এমন কথাও বড় করে বলার উপায় নেই যে, ১৮৮৬ সালের পর দীর্ঘ একশত আটত্রিশ বছর পর শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি মিলেছে; শ্রমিক তার অধিকার সত্যিকারার্থে ফিরে পেয়েছে এবং তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত মজুরি নিশ্চিত করতে পেরেছে। কর্মক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা শ্রমের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, কিন্তু এখনও শ্রমিক নিপীড়ন থামেনি এবং শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রমের মূল্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অহরহ শ্রমিক বিক্ষোভ থেকে সহজেই এটা অনুধাবন করা যায়।

সুতরাং অনেকটা জোড় গলায় বলা যায় যে, দুনিয়ার কোথাও শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক, শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি এবং তাদের বাঁচার উন্নত পরিবেশ এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে একমাত্র ইসলামই শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগে।

নবী মুহাম্মদ (সা.) শ্রমিকের মেহনতের কষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে জন্য তিনি যে ঐশ্বরিক বিধান চালু করেছিলেন, তাতে শ্রমিক ও শ্রমের মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার অমোঘ বাণী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আজও সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে অতুলনীয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ককে ভাই ভাই উল্লেখ করে তিনি তাদের অধিকার ও পাওনার ব্যাপারে যে উক্তি করেছিলেন তা অসাধারণ।

নবী কারিম (সা) বলেছেন, ‘মজুর-শ্রমিক ও ভৃত্যদের যথারীতি থাকা ও পোশাক দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যারা তোমাদের কাজ করছে তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন।’ -সহিহ বোখারি

রাসুলুল্লাহ (সা.) শ্রমিককে আপনজনের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যেমন ব্যবহার করো, তাদের সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে।’ একই কথা নবী কারিম (সা.) আরেক হাদিসে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘তোমরা অধীনস্থদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোনোরকম কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জানো না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথাদানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন করো না।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকরাও মানুষ। তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও মানবিক অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘মজুরদের সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করবে না। অগত্যা যদি তা করাতে হয় তবে নিজে সাহায্য করো।’ -সহিহ বোখারি

শ্রমিকের প্রতি মালিক যাতে সহনশীল থাকে এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমার মতো মহৎ মনের অধিকারী হয়, সেটা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহর নবী (সা.) হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘মজুর চাকরদের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্ত্বের লক্ষণ।’ নবী কারিম (সা.) আরও বলেছেন, ‘অসদাচরণকারী মালিক বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’

শ্রমিকের মজুরি আদায়ের ব্যাপারে নবী কারিম (সা.)-এর অতি পরিচিত এবং বিখ্যাত একটি উক্তি সবার জানা। তিনি বলেছেন, ‘মজুরকে তার গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও।’ শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নবী কারিম (সা.)-এর এই বাণী শ্রমিকের মর্যাদার বিষয়টিকে আরও বেশি মহীয়ান করেছে।

এভাবে ইসলাম শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার যে নিশ্চয়তা দিয়েছে, তা দুনিয়ার আর কোনো মতবাদ বা দর্শন দেয়নি। আধুনিক বিশ্বের পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী রাষ্ট্র দর্শনের কোনোটাই শ্রমিকের প্রকৃত অধিকার ও মর্যাদার ন্যূনতম সমাধান দিতে পারেনি। ফলে এখনও শ্রমিক-মজুররা নিষ্পেষিত হচ্ছে। মালিকের অসদাচরণ, কম শ্রমমূল্য প্রদান, অনপযুক্ত কর্ম পরিবেশ প্রদানসহ নানা বৈষম্য শ্রমিকের দুর্দশা ও মানবেতর জীবনযাপনের কারণ হয়ে আছে।

মে দিবসের প্রাক্কালে আমরা বলতে চাই, নানা আয়োজনে প্রতি বছর শ্রমিক দিবস পালন করার মধ্যে শ্রমিকের প্রকৃত মুক্তি নেই। যে অধিকারের জন্য শ্রমিকরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন শিকাগোর রাজপথে, তা বাস্তবে এখনও অর্জিত হয়নি। আজও শ্রমিকেরা পায়নি তাদের কাজের উন্নত পরিবেশ, পায়নি ভালোভাবে বেঁচে থাকার মতো মজুরি কাঠামো এবং স্বাভাবিক ও কাঙ্ক্ষিত জীবনের নিশ্চয়তা। মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে শ্রমিকের প্রতি মালিকের সহনশীল মনোভাব থাকতে হবে। শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার আলোকে তাকে কাজ দিতে হবে। শ্রমিককে মানুষের মতো বেঁচে থাকার জন্য তার মজুরি সেভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

মালিককে অবশ্যই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তার নিজের স্বজনরা যে রকম জীবনযাপন করবে, তার অধীনস্থ শ্রমিকরাও সে রকম জীবনের নিশ্চয়তা পাবে। মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তিতে ইসলাম যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, তাকে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা গেলে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা অবশ্যই সুরক্ষিত হবে- ইনশাআল্লাহ।

;