বৃষ্টির দিনে রাস্তায় চলাচলে সতর্কতা
বৃষ্টির দিন রাস্তায় চলতে গিয়ে আমরা প্রায় একটা দৃশ্যের সম্মুখীন হই। রাস্তার পাশ দিয়ে বা ফুটপাত ধরে কেউ একজন হেঁটে যাচ্ছেন, হঠাৎ করে একটা গাড়ি তাকে ক্রস করে চলে গেলো। আর রাস্তা ছিলো কিছুটা ভাঙা, সেখানে বৃষ্টির পানি জমে ছিলো; সেই পানি চাকার চাপে ছুটে গিয়ে পথিকের জামা-কাপড় একদম মাখামাখি। পথিক হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে যাচ্ছিলেন। কোনো অনুষ্ঠানে বা নামাজ পড়তে অথবা হতে পারে তিনি কোনো চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছেন।
নিজেকে একটু সেখানে কল্পনা করুন, কেমন নিদারুণ পরিস্থিতি! যারা গাড়ি চালান, এ ব্যাপারে তাদের সতর্কতা কাম্য।
আমার যেমন অধিকার আছে, আমি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় চলবো। তেমনই যিনি হেঁটে যাবেন, তারও অধিকার আছে রাস্তার পাশ দিয়ে বা ফুটপাত ধরে তিনি হেঁটে যাবেন। আমার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে আমি কারো অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারি না। এটা আমার জন্য উচিতও নয়।
আপনি যদি মনে করেন, কোথায় পানি জমে আছে, কোথায় রাস্তা ভাঙা; এতোকিছু দেখে তো আমি চলতে পারবো না। তাহলে দ্রুত আপনার চিন্তার সংশোধন প্রয়োজন।
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত মুসলিম ওই ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ -সহিহ বোখারি : ১০
মুখ অর্থ তো মুখ, মৌখিক ক্ষমতা। অর্থাৎ প্রকৃত মুসলিম মৌখিক ক্ষমতা দ্বারা অপর মুসলিমকে কখনো কষ্ট দেয় না। আর হাদিসে যে হাত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, এর অর্থ ব্যাপক। হাত অর্থ শুধু হাত নয়। শুধু হাতের ক্ষমতাও নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে- ক্ষমতা। সেটা যেকোনো ধরণের ক্ষমতা হতে পারে। প্রকৃত মুসলিমের চিন্তাক্ষমতা, কর্মক্ষমতাসহ সকল প্রকার ক্ষমতা থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে। বৃষ্টির দিনে আমি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছি বা গাড়ি ব্যবহার করছি। আমার গাড়ির চাকার চাপের পানির ছিটা থেকে অপর মুসলিমকে নিরাপদ রাখা প্রকৃত মুসলিমের দায়িত্ব। এটা প্রকৃত মুসলিম হতে হলে করণীয়ও বটে। আমার এই ক্ষমতা থেকেও অপর মুসলিমকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।
রাস্তায় পানি জমে থাকলে পথিক চলতে কষ্ট পায়। আমরা চাইলে এই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পারি। রাস্তা থেকে অন্যান্য কষ্টদায়ক জিনিসও সরানোর ব্যবস্থা করতে পারি অথবা নিজে সরিয়ে দিতে পারি।
হাদিসে এই কাজের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এবং এটাকে ইমানের অংশ বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের সত্তর অথবা ষাটটির বেশি শাখা রয়েছে। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে- আল্লাহ ব্যতিত ইলাহ নেই এ কথা স্বীকার করা। আর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।’ -সহিহ মুসলিম : ৩৫
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়াকে সদকা বলেছেন। -সিলসিলাতুস সহিহাহ : ৫৭৬
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া অবশ্যই ভালো কাজ। কয়েকজন বন্ধু মিলে একসঙ্গে এই কাজে অংশ নেওয়া যায়। নিজের আশেপাশের ভাঙা রাস্তা মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন রাস্তা সুন্দর হবে, চলাচলে সুবিধা হবে, দেশের কল্যাণ হবে; অন্যদিকে আমাদের ইমানও মজবুত হবে। নেকির পাল্লাও ভারি হবে। কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা সৎকাজে ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করো। খারাপ কাজে ও গোনাহের ব্যাপারে সহযোগিতা করো না।’ -সুরা মায়েদা : ০২