আল আকসার ১০ বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানুন
আল আকসা, বায়তুল মোকাদ্দাস, আল কুদস, মসজিদুল হারাম কিংবা মসজিদুল আকসা- যে নামেই বলি না কেন, তা নিছক কোনো স্থাপনা নয়। বরকতময় একাধিক স্থাপনার মিলন মোহনা। অসংখ্য নবী-রাসুল এবং অলি-আউলিয়াদের ইবাদত-বন্দেগির স্থান। প্রিয় জায়গাটি মুসলমানদের হৃদয়ের খুব গভীরে জায়গা করে নিয়েছে। তাইতো সর্বদা উন্মুখ থাকে বিশ্ব মুসলিম বায়তুল মোকাদ্দাস ও ফিলিস্তিনের বিজয় সংবাদ শোনার জন্য। নিরাপদ ভূমিতে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের জন্য। আল আকসার রয়েছে অগণিত ফজিলত, অসংখ্য গুণ-বৈশিষ্ট্য। সেখান থেকে অনন্য ১০টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হলো-
প্রথম কেবলা
সব নবী-রাসুলই বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করেছেন। নবী কারিম (সা.) মক্কায় থাকাবস্থায় বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেছেন। মদিনায় হিজরতের পর ১৬ মাস নামাজ পড়েছেন। ২য় হিজরির শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে বনু সালামা গোত্রের মসজিদে জোহর মতান্তরে আসরের নামাজের ২য় বা ৩য় রাকাতে আল্লাহর পক্ষ হতে আদেশ হলে নবীজি সাহাবাদের নিয়ে নামাজেই ঘুরে যান কাবা শরিফের দিকে।
পৃথিবীর দ্বিতীয় মসজিদ
পবিত্র কাবা হলো- পৃথিবীর প্রথম ঘর, প্রথম মসজিদ। এর ৪০ বছর পর নির্মিত হয় বায়তুল মোকাদ্দাস। যা পৃথিবীর ২য় মসজিদ। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বলেন, মসজিদে হারাম। অতপর আমি আরজ করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বলেন মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, উভয়ের নির্মাণের মধ্যে কত দিনের ব্যবধান রয়েছে? তিনি বলেন ৪০ বছরের। তিনি আরও বলেন, এই হলো মসজিদদ্বয়ের নির্মাণক্রম। কিন্তু আল্লাহতায়ালা পুরো ভূপৃষ্ঠকেই আমাদের জন্য মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং যেখানেই নামাজের সময় হয় নামাজ পড়ে নাও।
দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না আকসায়
কেয়ামতের পূর্বে দাজ্জাল দাপিয়ে বেড়াবে পুরো পৃথিবী। ফেতনা ছড়িয়ে ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করবে। কিন্তু চারটি মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না- ১. মদিনার মসজিদ ২. মক্কার মসজিদ ৩. মসজিদে আকসা ও ৪. মসজিদে তূর। -তাফসিরে মারেফুল কুরআন : ৭৬৬
বরকতময় ও মনোনীত ভূমি
আল্লাহতায়ালা বায়তুল মোকাদ্দাস ও তার আশেপাশের এলাকায় অসংখ্য বরকত রেখেছেন। সুরা বনি ইসরাইলের ১ নম্বর আয়াতের একাংশে বিবৃত হয়েছে, ‘বারাকনা হাওলাহু।’ অর্থাৎ আমি তার আশপাশ বরকতময় করেছি। এখানে হাওল দ্বারা পুরো সিরিয়া উদ্দেশ্য। বরকত দুই ধরনের- ১. ইহলৌকিক ও ২. পারলৌকিক।
ইহলৌকক বরকত হলো- জমি ঊর্বর, ফল-ফসলের সারি সারি উদ্যান, দিগন্তজুড়ে সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠ, ঝর্ণা ইত্যাদি।
পারলৌকিক হলো- সব নবী-রাসুলের কেবলা হওয়া, আগমন ঘটা, পদভারে ধন্য হওয়া, বাসস্থান হওয়া, কবরস্থান হওয়া, পবিত্র প্রাঙ্গণে ইবাদত করে প্রভূত কল্যাণ অর্জন করা ইত্যাদি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা সেই পবিত্র ভূমিতে প্রবেশ করো, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এবং নিজেদের পেছনের দিকে ফিরে যেয়ো না, তা হলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে।’ -সুরা মায়েদা : ২১
সওয়াবের উদ্দেশে আকসা ভ্রমণ জায়েজ
পৃথিবীর কোনো মসজিদে শুধু সওয়াবের উদ্দেশে ভ্রমণ করা জায়েজ নেই তিনটি মসজিদ ব্যতীত। তার অন্যতম বায়তুল মোকাদ্দাস। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, শুধু তিনটি মসজিদ অভিমুখে ইবাদতের নিয়তে সফর করা যাবে। আল মাসজিদুল হারাম, মাসজিদুন নববি ও মাসজিদুল আকসা। -সহিহ বোখারি : ১৮৬৪
আকসার মুসল্লিদের পাপমুক্তির আশ্বাস
বায়তুল মোকাদ্দাসে যারা নামাজ পড়বে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিষ্পাপ শিশুর মতো গোনাহমুক্ত হয়ে যাবে- ইনশাআল্লাহ। নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা এমন আশ্বাসের কথাই বিবৃত হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেন, হজরত সোলায়মান ইবনে দাঊদ (আ.) বায়তুল মাকদিসের নির্মাণ কাজ শেষ করে আল্লাহর কাছে তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেন- আল্লাহর হুকুমমতো সুবিচার, এমন রাজত্ব যা তার পরে আর কাউকে দেওয়া হবে না এবং যে ব্যক্তি বায়তুল মাকদিসে কেবলমাত্র নামাজ পড়ার জন্য আসবে, তার গোনাহ যেন তার থেকে বের হয়ে যায় তার মা তাকে প্রসব করার দিনের মত। এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, প্রথম দুটি তাকে দান করা হয়েছে এবং আমি আশা করি তৃতীয়টিও তাকে দান করা হবে। -ইবনে মাজাহ : ১৪০৮
কেয়ামতের আগে আকসা বিজয়
নবী কারিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন কেয়ামতের আগে আল আকসা (ফিলিস্তিন) বিজয়ের। হজরত উমর (রা.) জেরুজালেমসহ বায়তুল মোকাদ্দাস জয় করেছিলেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত শেষে সুলতান সালাহউদ্দিন উদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) ১১৮৭ সালে তা আবার জয় করেন। পরে মুসলমানদের উদাসীনতায় আবার তা হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে মুসলিম উম্মাহ আবারো তা জয়ের দ্বারপ্রান্তে- ইনশাআল্লাহ। এত শহীদ ও নিষ্পাপ রক্ত তারই ইঙ্গিত বহন করছে।
নবী কারিম (সা.) বলেন, কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্তু গণনা করো। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম। -সহিহ বোখারি
হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে হিজরি ১৬ সালে বায়তুল মাকদিস বিজয়ের মাধ্যমে নবী কারিম (সা.)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে।
আল আকসা ইসরা ও মিরাজের জ্বলন্ত সাক্ষী
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শ্রেষ্ঠ মুজেজা ইসরা ও মিরাজ। তিনি রাতের সামান্য অংশে মসজিদে হারাম (কাবা প্রান্তর) থেকে মসজিদে আকসায় ভ্রমণ করেছেন অতপর সেখান থেকে ঊর্ধ্বগগনে ভ্রমণ করেছেন। বায়তুল মোকাদ্দাস সেই ইসরা ও মিরাজের স্মৃতি ধারণকারী সাক্ষ্য বহনকারী। আল্লাহতায়ালা বলেন, পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তার বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। -সুরা বনী ইসরাইল : ১
আকসা হাশরের ময়দান হবে
আল আকসা ফিলিস্তিন এই দেশ ও আশপাশের শহর হবে হাশরের ময়দানের সূচনা। হজরত মাইমুনা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! বায়তুল মোকাদ্দাস সম্পর্কে কিছু বলুন, তিনি বলেন বায়তুল মোকাদ্দাস হলো- হাশরের ময়দান, পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা সেখানে নামাজ আদায় করো। কারণ, বায়তুল মাকদিসের এক রাকাতে অন্য মসজিদের তুলনায় এক হাজার রাকাতের সওয়াব। -মুসনাদে আহমদ
আকসা দখল ও অধিকার গ্রহণ
তিন ধর্মের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত আল আকসার দখলবাজি যুগ যুগ ধরে চলছে। মুসলমানরা শক্তি সামর্থ্যের গুণ-বৈশিষ্ট্য অর্জন করে আল্লাহর তওফিকে দেরিতে হলেও তা মুক্ত করছে। এ নগরীর মতো রক্তস্নাত, হৃদয়বিদারক, ত্যাগের ইতিহাস আর কোনো ভূখণ্ডে নিয়ে নেই। পবিত্র এই নগরীর স্থাপনাগুলো দুইবার ধংস করা হয়। ৫২ বার আক্রমণ ৪৪ বার উদ্ধার এবং ২৩ বার অধিকৃত হয়। এখনও আল আকসা জায়নবাদি ইসরায়েলি ইহুদিদের দখলে। বিশ্ব মুসলিম অপেক্ষায় মুক্ত আল আকসার।