অনেক ঘটনার নীরব সাক্ষী আল-আকসা
ফিলিস্তিন এবং সিরিয়া যদিও ভৌগোলিকভাবে আরব রাষ্ট্র, কিন্তু তা রোমানদের দখলে ছিল। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর সময়ে ফিলিস্তিনের কিছু অংশ মুসলিমরা বিজয় করেন। ইয়ারমুক যুদ্ধের পর মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রা.)-এর মাধ্যমে ৬৩৭/৩৮ খ্রিস্টাব্দে পুরো ফিলিস্তিন বিজিত হয়। সেই বিজিত অঞ্চলে মুসলিমরা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
মুসলিম বিশ্বের খলিফা নিজে উপস্থিত হয়ে জেরুজালেমবাসীকে অভয় দিয়ে আসেন। তাদেরকে স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকার এবং জান-মালের নিরাপত্তা দেন। বিজিত অঞ্চল থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করেননি।
অপরদিকে ১০৯৫ সালে থেকে শুরু হওয়া খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বর্বরতার দৃশ্য পৃথিবীর ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। এমনকি ক্রুসেডের নতুন রূপের বরবর্তা আজকের পৃথিবীকে বিষময় করে তুলেছে। ৩টি স্তরে বিভক্ত ৮টি ক্রুসেডের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১০৯৫-১১৪৪ খ্রিস্টাব্দে ক্রুসেডাররা এশিয়া মাইনর ও রোম দখল করে নেয়। ১০৯৮ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া এবং ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম দখল করে। ১১০০-১১০৯ খ্রিস্টাব্দ জেরুজালেমের খ্রিস্টান রাজা বলডুইন স্থানীয় জাফা, আক্কা, বৈরুত এবং ত্রিপলি দখল করে৷ সেই যুদ্ধগুলোতে তারা দশ হাজারের অধিক নারী ও শিশু হত্যা করে। ষষ্ঠ ক্রুসেডে ১২১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দে পোপ তৃতীয় ইনসেন্টের অধীনে আড়াই লাখ খ্রিস্টান ধর্মযোদ্ধা সিরিয়ায় উপস্থিত হয়ে মিসরের দিকে ডামিয়েটা আক্রমণ করে সেখানকার সত্তর হাজার অধিবাসীকে হত্যা করে। তারা মুসলিমদের ক্যারাভানে আক্রমণ করে মুসলিম নারীদের ধরে নিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো।
তাদের এমন নৃশংস ঘটনার সমালোচনায় ঐতিহাসিক মিলম্যান মাইকদ বলেন, ‘যুবতীদের ওপর সদর রাস্তায় বীভৎস অত্যাচার করা হতো। গণিকারা কুৎসিত গানে পবিত্র ধর্মগৃহ অপবিত্র করতো এবং খ্রিস্টান যাজকরা বিপুল লুণ্ঠিত দ্রব্য গ্রহণ করার নিমিত্তে আগ্রহ সহকারে উপস্থিত হতো।’
ঐতিহাসিক মিলস বলেন, ‘প্যালেস্টাইনের ব্যভিচারী, বিশ্বাসঘাতক এবং উৎপীড়ন খ্রিস্টানরা আবার পবিত্র ভূমির রক্ষক বলে পরিগণিত হতো।’
এই ক্রুসেড পশ্চিমাদের জন্য এক কলঙ্কময় ইতিহাস হয়ে আছে। ক্রুসেডের এই বর্বরতা থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করতে এসেছিলেন ইমামুদ্দিন (রহ), নুরুদ্দিন (রহ.) ও সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.)। সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ.) যখন জেরুজালেমে প্রবেশ করেন, তখন তিনি দেখতে পান; আল-আকসার ভেতরেও ধর্ষিতা মুসলিম নারীর লাশ। খ্রিস্টানদের এসব নির্যাতনের প্রতিশোধের বদলে সালাহউদ্দিন আইয়ুবী তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যা মক্কা বিজয়ের মতো ইতিহাসের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শান্তি ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করেছিলেন মুসলিম বিশ্বকে।
কিন্তু মুসলিম বিশ্বের দূর্বল নেতৃত্বের কারণে নতুনরূপে ক্রুসেড আবার আক্রমণ করছে আল-আকসাসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে। তারা সিরিয়া ও ইরাকে হাজার হাজার নারী, শিশুকে হত্যা করেছে। আফগানিস্তানের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে বৃষ্টির মতো বোমাবর্ষণ করেছে। অনাহারী আফ্রিকানদের খনিজসম্পদ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সর্বশেষ ৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ কিলোমিটার প্রস্তের গাজা উপত্যকার অধিবাসীদের সর্বশক্তি দিয়ে হত্যা করে যাচ্ছে প্রতিদিন। নারী ও শিশুদের বন্দী করে উল্টো গাজাবাসীদেরকেই মিডিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে। ইসরায়েলি আক্রমণে দালানের ধ্বংসস্তুপের নিচে পড়ে থাকা শহীদ বাবার মুখে হাত বুলাতে বুলাতে ছোট্ট শিশুর আর্তচিৎকার যেন- এ সময়ের কোনো এক সালাহউদ্দিনকে আহ্বান করছে।
হ্যাঁ, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক যুগে একেক সালাহউদ্দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এই উম্মতের জন্য প্রতি একশত বছরের শিরোভাগে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যিনি এই উম্মতের দীনকে তার জন্য সঞ্জীবিত করবেন। -সুনানে আবু দাউদ : ৪২৯১