ওয়াদা পালনের গুরুত্ব

  • সায়েম আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অর্থ : আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর, সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো

অর্থ : আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর, সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো

সমাজে আমরা নানা ধরনের কাজ করে থাকি। তন্মধ্যে ওয়াদা পালন অন্যতম। ওয়াদা পালন ইসলামের অন্যতম একটি অধ্যায়। ওয়াদা শব্দের অর্থ, অঙ্গীকার, চুক্তি, প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ইত্যাদি। পরিভাষায় বলতে গেলে, কারো সঙ্গে কোনো অঙ্গীকার করলে তা পালনের নাম ওয়াদা। সামাজিকভাবে প্রকৃত মানুষ চেনা যায়, ওয়াদা পালনের মাধ্যমে। ওয়াদা পালনের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। সমাজে সম্মানী ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। মানুষের চরিত্রগত দিক বুঝা যায় ওয়াদা পালনের মধ্য দিয়ে।

আমাদের সমাজে কিংবা আশেপাশে এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ওয়াদা পালন করেন, ওয়াদাকে গুরুত্ব দেন না; নানা কারণে ওয়াদা ভঙ্গ করে থাকেন। এতে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায় এবং অবিশ্বাসযোগ্য মানুষ হিসেবে বিবেচিত হযন। সমাজে সে যত সম্মানী ব্যক্তি হোক না কেন। সবাই তাকে ঘৃনার চোখে দেখে। ওয়াদা পালনের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা চুক্তিসমূহ পূরণ করো।’ -সুরা মায়েদা : ০১

বিজ্ঞাপন

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর, সেই অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং পাকাপাকি কসম করার পরে তা ভঙ্গ করো না। আর এই ব্যাপারে তো তোমরা আল্লাহকে জামিন করেছ। তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন।’ -সুরা আন-নাহল : ৯১

পবিত্র কোরআনে যেমন ওয়াদা পালনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ঠিক তেমনি হাদিসেও ওয়াদা পালনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ওয়াদা পালনের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে নবী কারিম (সা.)-এর আচরণ। তিনি ওয়াদা রক্ষায় তিন দিন একই স্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু হাসমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়ত লাভের আগে একদা আমি তার কাছ থেকে কেনাকাটা করি। যার কিছু মূল্য পরিশোধ করতে বাকি রয়ে গিয়েছিল। আমি তার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি অবশিষ্ট দাম নিয়ে তার নির্ধারিত স্থানে এসে হাজির হবো। আমি এই প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পরে আমার স্মরণ হলো। এসে দেখলাম তিনি সেই নির্দিষ্ট স্থানে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বললেন, তুমি আমাকে খুব বিপদে ফেলেছিলে। আমি তিন দিন যাবত তোমার অপেক্ষা করছি। -সুনানে আবু দাউদ

বর্ণিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ওয়াদা পালনে কতটা আন্তরিক ছিলেন। এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।

বলতে দ্বিধা নেই, আমরা হাসি-তামামার ছলে অনেক ওয়াদা ভঙ্গ করে ফেলি। আমরা ছোট কিংবা বড়দের দুষ্টামির ছলে বলি, তোমাকে আমি এটা দেবো, ওটা দেবো। কিন্তু পরে আর তা দেই না। এটা যে ওয়াদা ভঙ্গ করার মতো কাজ, তাও মানি না। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন। তখন রাসুল (সা.) আমাদের ঘরে বসাছিলেন। মা বললেন, এদিকে এসো। তোমাকে আমি কিছু দেব। তখন রাসুল (সা.) আমার মাকে বললেন, তুমি তাকে কি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছো? তিনি বললেন, আমি তাকে একটি খেজুর দিতে ইচ্ছা করেছি। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, সাবধান! যদি তুমি তাকে কিছু না দিতে, তবে তোমার আমলনামায় একটি মিথ্যা কথা বলা লেখা হতো। -সুনানে আবু দাউদ

সুতরাং আমাদের ব্যক্তি জীবনে হাসি-তামাশা কিংবা দুষ্টামির ছলে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এর ভয়াবহতা কঠোর।

ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের আলামত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি- ১. কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে ও ৩. আমানত রাখলে তা খেয়ানত করে। -সুনানে তিরমিজি

এই হাদিসের মাধ্যমে স্পষ্ট বুঝা যায়, ইসলামে কতটা গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ওয়াদা পালনের ব্যাপারে। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো বিশেষ কারণে ওয়াদা পালন করতে না পারে এতে কোনো অপরাধ হবে না। যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি ওয়াদা করার সময় যদি তা পূরণের নিয়ত রাখে কিন্তু পরে (কোনো বিশেষ অসুবিধার কারণে) তা পূরণ করতে না পারে। তবে এতে তার অপরাধ হবে না। -সুনানে তিরমিজি

ইসলামি স্কলাররা বলেন, সমাজে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে হলে অবশ্যই ওয়াদা পালনে সোচ্চার হতে হবে। সামাজিক কর্মনীতিতে ওয়াদার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আসুন, ইসলামি বিধি-বিধান মেনে চলি, পরকালের সম্বল সংগ্রহ করি।