আল আকসা রক্ষার লড়াই মুসলিম উম্মাহর



মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী, অতিথি লেখক, ইসলাম
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আল-আকসা মসজিদে জুমা আদায়ে বাধা পেয়ে রাস্তায় নামাজ পড়ছে মুসলমানরা

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আল-আকসা মসজিদে জুমা আদায়ে বাধা পেয়ে রাস্তায় নামাজ পড়ছে মুসলমানরা

  • Font increase
  • Font Decrease

গত সাত দশক ধরে শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলন হামাস গাজা উপত্যকার নেতৃত্ব দিচ্ছে। সেখানে রয়েছে ইসলামিক জিহাদ নামের আরেকটি স্বাধীনতাকামী দল। তাদেরও লক্ষ্য, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। গাজার মুসলমানদে এ দাবীকে নস্যাৎ করে, ইসরায়েল তাদের বসতি স্থাপনে অবৈধভাবে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করছে প্রতিনিয়ত, তাদের কার্যক্রমে বাধা দিলে ইসরায়েল উন্মাদের মতো নির্বিচার হামলা করে মুসলমানদে শহীদ করে এলাকার পর এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, এ বিরোধ থামানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা বিশ্ব বরাবরের মতোই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে থাকে। যার পরিণাম ধ্বংস আর রক্তপাত। রক্তাক্ত মধ্যপ্রাচ্য।

দখলদার ইসরায়েল ১৯৪৮ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। বিরামহীনভাবে চলছে হামলা-নির্যাতন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফিলিস্তিনিকে ঘর থেকে বের করে তার ঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কারো ভিটেমাটি কারো বা ফসলের জমি কেড়ে নিচ্ছে। তবে এবারের বর্বরোচিত হামলা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের জাতীয় দুর্যোগের ইতিহাস সুদীর্ঘ। একসময় এটা ছিলো রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ। দশম শতকে আরব ভূগোলবিশারদরা একে বলতেন ফিলিস্তিন। তখন ফিলিস্তিন ছিলো- সিরিয়ার একটি প্রদেশ। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ছিলো- অটোম্যান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। মুসলমান, ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কাছে এটি ছিলো- পবিত্র স্থান। জেরুজালেম, হেবরন, বেথেলহেম ও নাজারেত ছিলো- ফিলিস্তিনের পবিত্র সব নগরী। অটোম্যান সাম্রাজ্যের শেষ সময়ে ফিলিস্তিনের জনসংখ্যা ছিলো ৬ লাখ ৫০ হাজার। তাদের ব্যাপক অংশ ছিলো আরব। এ আরবদের ১০ শতাংশ খ্রিস্টান, বাকিরা মুসলমান। তবে ৭৫ হাজার ইহুদিও ছিলো।

ফিলিস্তিনের আত্মপরিচয়ের উদ্ভব ঘটে দুটি প্রধান রাজনৈতিক ঘটনার ফলে। এর প্রথমটি হলো- এ অঞ্চলে ইউরোপের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক হস্তক্ষেপ। এর ফলে প্রধান প্রধান ইউরোপীয় শক্তি বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্য। ফিলিস্তিন লীগ অব নেশনসের ম্যান্ডেটে ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পাশ্চাত্যের এ আগ্রাসনের ফলে এ অঞ্চলে আরব জাতীয়তাবাদ এবং নিখিল আরব জাতীয়তাবাদের উদ্ভব ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে যে মানচিত্র রচিত হয়, সেই মানচিত্রই এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সূত্র।

ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদের বিকাশের পেছনে যে সাংস্কৃতিক কারণটি কাজ করেছে সেটি হল ইহুদিবাদী আন্দোলন। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের সহায়তায় ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি সৃষ্টি করা। ফিলিস্তিনে অটোম্যান সাম্রাজ্যের আমল থেকেই ক্ষুদ্র আকারে ইহুদি বসতি শুরু হয়েছিলো। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের আবাসভূমি নীতির আশ্রয়ে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসন, বসতি স্থাপন এবং জমি দখল সহজতর হয়। ইহুদিবাদের লক্ষ্য হিসেবে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আবাসভূমি স্থাপনের নীতি গ্রহণ করা হয়। ফলে আরব জনগণের আশা-আকাঙ্খা পদদলিত হয়। অভিবাসনের ফলে ফিলিস্তিনে ১৯২২ সালে ইহুদির সংখ্যা ১১ শতাংশ থেকে ১৯৪৪ সালে এসে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়। তখন ফিলিস্তিনের জনসংখ্যা ছিলো ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬২৪। এসব কারণে ফিলিস্তিনে আরব জাতীয়তাবাদের অভ্যুদয় অনিবার্য হয়ে ওঠে।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দুটি পৃথক ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে ভাগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আরবরা এ উদ্যোগের বিরোধিতা করে। এর ফলে ইহুদি ও আরবদের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা হয়। ব্রিটিশরা ফিলিস্তিন থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু ইহুদিরা গায়ের জোরে জাতিসংঘ নির্দেশিত এলাকার বাইরেও তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ১৯৪৮-১৯৪৯-এর যুদ্ধে নবগঠিত ইসরায়েল রাষ্ট্র ফিলিস্তিন বাহিনী এবং প্রতিবেশী আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিন মুছে যায়।

ইসরায়েলের বোমায় দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকা এভাবেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়

 

ইসরায়েল বিরাট এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। জর্দান পশ্চিম তীরের ওপর এবং মিসর গাজা অঞ্চলের ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করে। ফিলিস্তিনের আরব জনগণের মধ্যে ৭ লাখ মানুষ যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। তাদের নিজ আবাসভূমিতে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে পশ্চিম তীর, গাজা এবং পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোয়- বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া ও জর্দানে আশ্রয় গ্রহণ করে। খোদ ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ১৯৫০ সালে ১ লাখ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি থেকে গিয়েছিল।

১৯৬৭ সালে ছয় দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর মসজিদুল আকসাসহ পুরো জেরুজালেম ইসরায়েল দখল করে নেয়। আন্তর্জাতিক আইনে অধিকৃত ভূমি হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরায়েল শহরটিকে একীভূত করে নেয় এবং অখণ্ড জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে। বিভিন্ন সময় শহরটিতে থাকা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ইসরায়েল ইহুদিদের শহরে আবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

এরপর যুদ্ধ ও কূটনীতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনিরা নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এর সামান্য সাফল্য হলো- গাজা ও পশ্চিম তীরে প্যালেস্টাইন স্টেট অথোরিটি প্রতিষ্ঠা। তাছাড়া মসজিদে আকসাকে মুসলমানদের পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো। ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর পাস করা এক প্রস্তাবনায় বলা হয়, জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের ওপর ইসরায়েলের কোনো অধিকার নেই, আল আকসা মুসলমানদের পবিত্র স্থান।

হাজার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি জাতিকে কীভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়, তাদের গৃহহারা করা যায়, তাদের পরিচয় মুছে দেওয়ার জঘন্য চেষ্টা করা হয়, ফিলিস্তিন তার এক অন্ধকারাচ্ছন্ন দৃষ্টান্ত। ফিলিস্তিনিদের জীবন হারাতে হয়েছে নিজ দেশে এবং প্রবাসী হিসেবে অন্যদেশে। যেমন জর্দানের শাতিলা ক্যাম্পে তাদের রীতিমতো জবাই করা হয়েছে। যারা জবাই করেছে, তারাও আরব ও মুসলিম। একবিংশ শতাব্দীতে ইতিহাসের ট্রাজেডি যদি কোথাও থাকে তা আছে ফিলিস্তিনে।

ফিলিস্তিনিরা রক্ত দিচ্ছে। কোনো রক্তই বৃথা যায় না। আজ হোক কাল হোক, ফিলিস্তিনের বিজয় হবে- ইনশাআল্লাহ। সাম্প্রদায়িক ইহুদিবাদের মৃত্যু ঘটবেই। তবে ভুলে গেলে চলবে না মুসলমানদের প্রথম কেবলা মসজিদে আকসা রক্ষার এই সংগ্রাম শুধু ফিলিস্তিনিদের একার সংগ্রাম না, এই সংগ্রাম গোটা মুসলিম উম্মাহর সংগ্রাম।

লেখক : আলেম, প্রাবন্ধিক ও কলেজ শিক্ষক

   

মুজদালিফায় হাজিদের অবস্থানের অনিশ্চয়তা কেটেছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মুজদালিফায় হাজিদের অবস্থানের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

মুজদালিফায় হাজিদের অবস্থানের দৃশ্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৌদি আরবের রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানির অধীনে সেবাগ্রহণকারী এজেন্সির ২৮ হাজার ৩৩ জন হজযাত্রীর মুজদালিফায় উন্মুক্ত মাঠে অবস্থানের অনিশ্চয়তা কেটেছে। সৌদি সরকারের নতুন নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে এসব হাজিদের হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান মুজদালিফায় অবস্থানের বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছিল।

সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশের হজ অফিস এ বিষয়টির সুরাহা করেছে। গত ৪ মে বাংলাদেশ হজ অফিসে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ২৮ হাজার ৩৩ জন হজযাত্রীর মুজদালিফায় উন্মুক্ত মাঠে অবস্থানের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার কথা জানানো হয়। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।

হজের সবচেয়ে বড় দিন বলা হয় চতুর্থ দিনকে। এদিন মুজদালিফায় সারা রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করতে হয়। সেখানে সুবহে সাদিক পর্যন্ত থাকা সুন্নত। আর সুবহে-সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত যেকোনো এক মুহূর্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্য ওঠার কিছু সময় আগে মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়া। মুজদালিফায় অবস্থানের সময় মিনায় শয়তানকে মারার জন্য রাতে কিংবা সকালে পাথরের টুকরা সংগ্রহ করা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সনের হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী হজপালন করবেন। আগামী ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে জানায়, মিনা-আরাফাত-মুজদালিফায় সেবা প্রদানকারী তাওয়াফা কোম্পানি রিফাদের অধীন ২৮ হাজার ৩৩ জন হাজির মিনা ও আরাফাতের তাঁবুতে অবস্থান এবং মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিস জানিয়েছে, এবার হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব পর্বের কার্যক্রমের মধ্যে অনেকগুলো কার্যক্রমে নতুন পদ্ধতির অবতারণা ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবে খরচের অর্থ প্রেরণ ব্যবস্থাপনা এবং মিনায় তাঁবু নির্ধারণ ব্যবস্থাপনা উল্লেখযোগ্য। বিগত বছরগুলোতে মিনা ও আরাফাতের তাঁবু তাওয়াফা কোম্পানিগুলো হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় থেকে বুঝে নিয়ে হাজি সংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন দেশের মিশন বরাবরে বা এজেন্সি বরাবরে বরাদ্দ প্রদান করত। সেই মোতাবেক অন্যান্য সেবা প্রদান করত। কিন্তু এ বছর হজ মিশনসমূহ বা এজেন্সিসমূহ সরাসরি অথবা মিশনের মাধ্যমে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় থেকে তাঁবু গ্রহণ করে তাওয়াফা কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেবে। তাওয়াফা কোম্পানি তাঁবুতে বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে।

সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাওয়াফা কোম্পানি নির্বাচন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত থাকায় এ বছর এজেন্সিগুলো বিভিন্ন সংখ্যায় বিভক্ত হয়ে ছয়টি তাওয়াফা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির মধ্যে হাজি সংখ্যা অনুযায়ী রিফাদ তাওয়াফা কোম্পানি দ্বিতীয়। কোম্পানিটির অধীনে প্রায় ২৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বেসরকারি মাধ্যমের হাজি চুক্তিবদ্ধ রয়েছে।

রিফাদের আওতাধীন হাজিদের জন্য মিনার তাঁবু গ্রহণের সময় জানা যায় যে, তাওয়াফা কোম্পানি রিফাদ বাংলাদেশি হাজিদের জন্য মাশায়ের এলাকায় তারাদ্দুদিয়া (সার্কুলার সার্ভিস) নামক পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করবে। এরূপ নতুন পরিবহন পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষ এলাকার তাঁবু গ্রহণের ক্ষেত্রে সবাই একমত কি না তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হলে উপস্থিত সবাই একমত হয়ে জানান যে, রিফাদের অধীন সব এজেন্সি তাদের হাজিদের জন্য তারাদ্দুদিয়া পরিবহন ব্যবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট মিনা তাঁবু গ্রহণে আগ্রহী। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক তাঁবু রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। কিন্তু তাঁবুর রিকুয়েস্ট অনুমোদন না করে হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানায় বলে জানায় হজ অফিস।

সাক্ষাতে জানানো হয়, রিফাদ কোম্পানির কোনো তারাদ্দুদিয়া পরিবহন সংশ্লিষ্ট মিনা তাঁবু নেই। তারাদ্দুদিয়া সংশ্লিষ্ট তাঁবু বরাদ্দের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হলে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়- রিফাদের কোনো তারাদ্দুদিয়া তাঁবু নেই। তবে শর্তসমেত প্রায় অর্ধেক সংখ্যক হাজির জন্য তারাদ্দুদিয়া সংশ্লিষ্ট তাঁবু গ্রহণ করা যাবে মর্মে জানান। শর্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট তাঁবুতে অবস্থান করা হলে সেসব হাজি মুজদালিফার খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করতে পারবে না। আরাফাতের ময়দান হতে সরাসরি মিনার এই তাঁবুতে এসে রাত্রিযাপন করতে হবে।

‘একই সঙ্গে তাঁবুতে অবস্থান করতে হলে হজ অফিসকে ‘কোনোরূপ সমস্যা হবে না’ বলে অঙ্গীকারনামা দাখিলেরও শর্ত আরোপ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে তাওয়াফা কোম্পানি এজেন্সি এবং হজযাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।’

হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় এবং রিফাদ কোম্পানির সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে একাধিকার সভা করে সব দুরাশাকে দূর করে রিফাদের অধীন ২৮ হাজার ৩৩ হজযাত্রীর তারাদ্দুদিয়া পরিবহন সিস্টেমের বাহিরে বাস ও ট্রেন যোগাযোগের সুবিধাসম্পন্ন মিনা তাঁবু, আরাফাতের তাঁবু এবং মুজদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁবু গ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানায় জেদ্দা হজ অফিস।

এখন সব এজেন্সিকে জরুরি ভিত্তিতে ভিসা ইস্যু সম্পন্ন করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধও জানিয়েছে হজ অফিস।

;

মসজিদে হারামে আগতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মসজিদে হারামে আগতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে হারামে আগতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববির পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আসন্ন হজসহ বিভিন্ন ওয়াক্ত এবং জুমার নামাজে আগতদের জন্য প্রশান্তিদায়ক পরিবেশের নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

সৌদি বার্তা সংস্থা এসপিএ জানায়, মসজিদে হারামে আসা উমরাপালনকারী ও আগত নামাজ আদায়কারীদের সুবিধার্থে ‘বিশেষ পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছে। ‘তানাকুল’ অ্যাপের মাধ্যমে উমরা পালনকারীদের জন্য প্রায় পাঁচ হাজার ইলেকট্রিক ও সাধারণ হুইল চেয়ারের সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ইলেকট্রিক ও সাধারণ হুইল চেয়ার বুকিং করার সুবিধা মিলবে।

হারামাইন পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববির প্রবেশদ্বারসহ বিভিন্ন স্থানে নিযুক্ত কর্মকর্তারা দর্শনার্থীদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছেন। এছাড়া ধর্মীয় কোনো বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য, উভয় মসজিদের বিভিন্ন স্থানে ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে যেকোনো বিষয়ে জানার সুযোগ রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, ল্যান্ডলাইন বা মোবাইল ফোনে ২৪ ঘণ্টা প্রশ্ন এবং দর্শনার্থীদের দিক-নির্দেশনা ও বিভিন্ন শরিয়া বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য দুটি টোল-ফ্রি নম্বর বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোনের স্মার্ট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় জুমার খুতবা দ্রুত অনুবাদের সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। আরও থাকছে প্রতিদিন হারামাইন শরিফাইনের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় আলোচনার ব্যবস্থা।

মসজিদে হারামে আগতদের জন্য হুইল চেয়ার, ছবি : সংগৃহীত

করোনা পরবর্তী সময়ে মসজিদে হারামসহ মসজিদের নববিতে প্রতিদিন কয়েকবার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সুগন্ধি দেওয়া হয়। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পুরো মসজিদ প্রাঙ্গণকে স্যানিটাইজ করা হয় আশপাশের পরিবেশকে দুর্গন্ধহীন করা হয়।

এছাড়া নামাজ আদায়কারী ও উমরাপালনকারীদের জন্য রাখা আছে ঠান্ডা পানি ও জমজমের পবিত্র পানি। এর বাইরে নির্দিষ্ট লোক রয়েছে, যারা মসজিদে হারামের দর্শনার্থীদের মাঝে জমজমের বোতল ও পানি সরবরাহ করেন।

সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলের জন্য মসজিদে হারামের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন রয়েছে, যারা দর্শনার্থীদের চলাচল সুশৃঙ্খল রাখতে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে পথ হারিয়ে যাওয়াদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার মতো কাজটিও আন্তরিকভাবে করছেন।

উর্দু নিউজ অবলম্বনে মুফতি উমর ফারুক আশিকী

;

হজ ভিসা আবেদনের সময় বাড়ল ৪ দিন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

আরাফাতের ময়দানে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হজপালনকারীরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

২০২৪ সালের হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী হজপালন করবেন। ৯ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৫ হাজারের মতো হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন হয়েছে। এখনও ৫০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা হয়নি, এমতাবস্থায় হজ ভিসার জন্য আবেদনের সময় আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। বর্ধিত সময় অনুযায়ী আগামী ১১ মে পর্যন্ত হাজিরা ভিসা আবেদন করতে পারবেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম। তিনি জানান, সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় হাজিদের জন্য ভিসা আবেদনের সময় ১১ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

গত ২৯ এপ্রিল ছিল হজ ভিসা আবেদনের শেষ সময়। কাঙ্ক্ষিত ভিসা আবেদন না হওয়ায় প্রথম দফায় ৭ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই সময়ের মধ্যে সবাইকে ভিসার আবেদন করার জন্য অনুরোধ করা হলেও দ্বিতীয় দফায় ফের সময় বাড়ানো হলো।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। ২০২৪ সালের হজে বাংলাদেশ থেকে ৮৩ হাজারের বেশি হাজি হজপালন করবেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। বুধবার হজ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চলতি বছর ৮৩ হাজার হজযাত্রীকে বহন করার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সৌদিয়া) ও সৌদির বেসরকারি এয়ারলাইন্স ফ্লাইনাস মোট ২২৮ হজ ফ্লাইট পরিচালনা করবে। সে অনুযায়ী শিডিউল ঘোষণা করেছে এয়ারলাইন্সগুলো। চুক্তি অনুযায়ী, মোট হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বাকি অর্ধেক বহন করে সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ার।

চুক্তি অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মোট ১১৮টি ফ্লাইটে ৪৮ হাজার ৮৩৫ জন হজযাত্রী বহন করবে। সৌদি এয়ারলাইন্স এবং ফ্লাইনাস এয়ার বাকি হজযাত্রী বহন করবে।

;

লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়রের রেকর্ড



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

সাদিক খান, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাদিক খান হচ্ছেন লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের মেয়র পদে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন লেবার পার্টির প্রার্থী সাদিক খান। লন্ডনের মেয়র হিসেবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। তখন থেকেই পদটি ধরে রেখেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম এই রাজনীতিক।

সাদিক খানের জন্ম লন্ডনে, ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর। এর দুই বছর আগে ১৯৬৮ সালে তার মা-বাবা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যের অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান। বাবা আমানউল্লাহ ছিলেন বাসচালক। মা শেহরুন করতেন দরজির কাজ। সাত ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাদিক পঞ্চম। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় তার দাদা-দাদি ভারত থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সাদিক খানের পড়ালেখা ইউনিভার্সিটি অব নর্থ লন্ডন থেকে। বিষয় ছিল আইন। পড়াশোনা শেষে মানবাধিকার-বিষয়ক আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কম বয়সেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন লেবার পার্টির রাজনীতিতে।

১৯৯৪ সালে লেবার পার্টির হয়ে লন্ডনের ওয়ান্ডসওর্থ বারার কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তখন তার বয়স মাত্র ২৪ বছর। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্যের জাতীয় নির্বাচনে দক্ষিণ লন্ডনের টুটিং আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০৮ সালে গর্ডন ব্রাউন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন স্থানীয় সরকারের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাদিক খান। ২০১০ সালে লেবার পার্টি বিরোধী দলে গেলে তিনি ছায়া মন্ত্রিসভায় বিচার বিষয়ক ছায়া মন্ত্রী, লর্ড চ্যান্সেলর (ছায়া অর্থমন্ত্রী) ও লন্ডন-বিষয়ক ছায়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র পদে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন সাদিক খান। সে বছরের ৯ মে কনজারভেটিভ পার্টির জেক গোল্ডস্মিথকে হারিয়ে প্রথমবার লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০২১ সালে কনজারভেটিভ পার্টির সোন বেইলিকে পরাজিত করে মেয়র পদ ধরে রাখেন সাদিক।

এবার তৃতীয় দফায় সাদিক খানের জয় আগামী জাতীয় নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে সাদিক খানের দুই সন্তান রয়েছে। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও আগ্রহ রয়েছে তার। সাদিক খানের পছন্দের খেলা ফুটবল, ক্রিকেট ও বক্সিং। ২০১৪ সালে লন্ডন ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিনে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নেন সাদিক খান।

;