জুমার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নতের গুরুত্ব
জুমার নামাজের দ্বিতীয় আজানের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়াকে ‘কাবলাল জুমা’ বলে। এটি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস হাদিস ও আসার তথা সাহাবা ও তাবেয়িনদের মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক কর্মধারা) আমল দ্বারা প্রমাণিত।
জুমার পূর্বে নবীজির নামাজ
জুমার দ্বিতীয় আজানের আগে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অধিক নামাজ পড়তেন এবং সাহাবাদেরকে এর প্রতি উৎসাহ দিতেন৷ তবে তিনি নফল পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত খুতবার পূর্বে চার রাকাত এবং নামাজ শেষ করে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়তেন। -আল মুজামুল আওসাত : ১৬১৭
এ প্রসঙ্গে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকেও একটি হাদিস বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার পূর্বে এবং পরে চার রাকাত সুন্নত পড়েছেন। -আল মুজামুল কাবির : ১২৬৭৪
সাহাবি ও তাবেয়িনদের কর্মধারা
হজরত আবু আবদুর রহমান আসসুলামি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমাদেরকে জুমার পূর্বে চার রাকাত এবং পরে চার রকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক : ৫৫২৫
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জুমার পূর্বে চার রাকাত পড়তেন। আর এ চার রাকাতের মাঝে কোনো সালাম ফিরাতেন না। অতঃপর জুমা শেষে দুই রাকাত এবং তারপরে চার রাকাত পড়তেন। -শরহু মাআনিল আসার : ১৯৬৫
হজরত ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) বলেন, তারা (সাহাবায়ে কেরাম) জুমার পূর্বে চার রাকাত আদায় করতেন। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ৫৪০৫
এই নস দ্বারা স্পষ্ট জানা যায় সাহাবায়ে কেরাম জুমার আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন। আর ইবাদাত সংক্রান্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল বা মন্তব্য ‘মারফু’ তথা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমল হিসেবে ধর্তব্য।
উপরোক্ত মারফু, মাউকুফ, মাকতু হাদিস ও আসার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, জুমার আগে চার রাকাত নামাজ সুন্নত এবং তা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবা ও তাবেয়িসহ সব যুগের উলামায়ে কেরামের ওপরই আমল করতেন।
কাবলাল জুমা নামাজ সুন্নতে মোয়াক্কাদা
উম্মাহর অধিকাংশ ইমামদের মতে জুমার নামাজের আগের সুন্নত হলো- সুন্নতে মোয়াক্কাদা। আর ইমামগণ নসের আলোকেই সুন্নতে মোয়াক্কাদা বলেছেন। কারণ নফল নামাজের বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া যায়, আদেশ দেওয়া যায় না। আদেশ করার অর্থ, এই নামাজ অন্তত সুন্নতে মোয়াক্কাদা, যেমন পরের চার রাকাত সুন্নতে মোয়াক্কাদা।
এ বিষয়ে ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এই বিষয়ে ইজমা আছে যে, জুমার আগে সূর্য ঢলার পর নামাজ পড়া উত্তম আমল। তবে ইমামরা এই বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন যে, জুমার আগের সুন্নত জোহরের আগের চার রাকাতের মতো মোয়াক্কাদা, নাকি আসরের আগের সুন্নতের মতো মোস্তাহাব?
এক্ষেত্রে অধিকাংশ ইমামদের মত হলো, জুমার আগের সুন্নত হলো- সুন্নতে মোয়াক্কাদা বা রাতিবা। এটি ইমাম আওজায়ি, সুফিয়ান সাওরি, ইমাম আবু হানিফা এবং তার ছাত্রদের কথা। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)- এর মতও এমন। -ফাতহুল বারি : ৫/৫৪২-৫৪৪
জুমার দিন যাদের ক্ষমা করা হয়
ইসলামে সাপ্তাহিক দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিনকে মর্যাদাপূর্ণ দিন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোরআন ও হাদিসে এই দিনের বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে।
জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা
শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মতের জন্য এই দিনটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা আগের জাতিগুলোর কাছে জুমার মর্যাদা অজ্ঞাত রাখেন। তাই ইহুদিরা শনিবার নির্ধারণ করে। আর খ্রিস্টানরা রবিবার নির্ধারণ করে। অতঃপর আমরা আসি। আমাদের কাছে তিনি জুমার দিনের মর্যাদা প্রকাশ করেন।’ -সহিহ মুসলিম : ৮৫৬