যেভাবে জুমার খুতবা দিতেন নবী কারিম সা.

  • মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে নববির মিম্বর, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববির মিম্বর, ছবি : সংগৃহীত

জুমার খুতবায় হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবাইকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে উৎসাহিত করতেন। কেননা এটাই তাদের কল্যাণ লাভের বড় মাধ্যম। তারপর মৃত্যুর বিভীষিকা বর্ণনা করে সতর্ক করতেন। কেননা মানুষ দুনিয়ার মায়ায় পড়ে নিজেকে দুনিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা ভেবে বসে এবং মৃত্যুকে এড়িয়ে থাকতে চায়।

কোনো জায়গা থেকে কোনো প্রতিনিধিদল উপস্থিত হলে তিনি প্রচারমূলক আয়াত পাঠ করতেন। এভাবে নবীজি (সা.) তার খুতবায় আল্লাহ, রাসুল, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, মেরাজ, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করতেন। বিশেষত আল্লাহ তার বন্ধু ও অনুগতদের জন্য যেসব পুরস্কার এবং তার শত্রু ও অবাধ্যদের জন্য যেসব শাস্তি রেখেছেন, তা সবিস্তারে বর্ণনা করতেন।

বিজ্ঞাপন

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন জুমার খুতবা দিতে দাঁড়াতেন, তখন (কখনো কখনো) তার দুই চোখ লাল হয়ে যেত, আওয়াজ উঁচু হতো এবং চেহারা মোবারকে ক্রোধের লক্ষণ পরিলক্ষিত হতো।

মনে হতো তিনি যেন কোনো সেনাবাহিনীর আক্রমণের ভয় দেখাচ্ছেন এবং বলছেন, হে লোকেরা! সকালে কিংবা সন্ধ্যায় তোমাদের ওপর শত্রুরা ঝাঁপিয়ে পড়বে। তিনি খুতবা সংক্ষিপ্ত করতেন এবং নামাজ দীর্ঘ করতেন। তিনি খুতবায় ইসলামের মূলনীতি ও শরিয়তের বিধি-বিধান বর্ণনা করতেন।

বিজ্ঞাপন

কখনো কোনো বিষয়ে মুসলমানদের আদেশ বা নিষেধ করার প্রয়োজন পড়লে তিনি খুতবায় তা করতেন। যেমন- খুতবার সময় প্রবেশকারী এক ব্যক্তিকে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের আদেশ করেছেন। সময়ের দাবি অনুপাতে তিনি খুতবা দিতেন। মুসলিমদের মধ্যে অভাব-অনটন দেখা দিলে দান-খয়রাত করার আদেশ দিতেন এবং সদকা করার প্রতি তাদের উৎসাহ দিতেন। খুতবায় দোয়া করার সময় সময় কিংবা আল্লাহর জিকির করার সময় শাহাদত আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করতেন।

অনাবৃষ্টি দেখা দিলে ও বৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করলে তিনি খুতবাতেই বৃষ্টির জন্য দোয়া করতেন। মসজিদে লোকেরা একত্র হলেই তিনি বের হয়ে আসতেন। মসজিদে প্রবেশ করে সালাম দিতেন। মিম্বরে আরোহণ করে উপস্থিত মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে আরেকবার সালাম দিতেন। তারপর মিম্বারে বসতেন। এরই মধ্যে হজরত বেলাল (রা.) আজান দেওয়া শুরু করতেন। আজান শেষ হলে তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা শুরু করতেন। খুতবা প্রদানকালে তিনি লাঠি বা ধনুকের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়াতেন। তার মিম্বরে তিনটি সিঁড়ি ছিল। মিম্বর নির্মাণের আগে তিনি খেজুরগাছের একটি গোড়ার ওপর দাঁড়াতেন। মসজিদের মাঝখানে মিম্বর স্থাপিত হয়নি; বরং পশ্চিম পাশে স্থাপিত হয়েছিল। মিম্বর ও দেয়ালের মধ্যে মাত্র একটি ছাগল চলাচলের দূরত্ব ছিল।

তিনি যখন জুমা ছাড়া অন্য সময় মিম্বরে বসতেন কিংবা জুমার দিন খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়াতেন, তখন সাহাবিরা তার দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতেন। তিনি দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন। তারপর সামান্য সময় বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় খুতবা দিতেন। খুতবা শেষ করলেই হজরত বেলাল (রা.) ইকামত দেওয়া শুরু করতেন। তিনি মুসল্লিদের খুতবার সময় ইমামের নিকটবর্তী হওয়ার আদেশ দিতেন এবং চুপ থাকতে বলতেন। তিনি বলতেন, জুমার দিন খুতবার সময় যে ব্যক্তি তার পাশের ব্যক্তিকে বলবে, চুপ থাকো, সে অনর্থক কাজ করল। আর যে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করবে তার জুমা বাতিল হয়ে যাবে (মর্যাদা ও সওয়াব নষ্ট হবে)। জুমার নামাজ শেষে তিনি স্বীয় ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দুই রাকাত জুমার সুন্নত নামাজ আদায় করতেন। তিনি জুমার নামাজের পর চার রাকাত সুন্নত পড়ারও আদেশ দিয়েছেন।