পারিবারিক অশান্তি ও সামাজিক অবক্ষয় বাড়ার কারণ



সাইদুর রহমান শাহিদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে

ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে

  • Font increase
  • Font Decrease

বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন এবং তার পরিণতিতে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ সমাজে মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে ঘন ঘন নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে দেশের নানা জায়গা থেকে। দিন দিন বাড়ছে এই জঘন্যতম অপরাধের হার। এর কারণ কী কী হতে পারে, সে বিষয়ে সবারই কমবেশি ধারণা রয়েছে।

বর্তমান সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির। ইন্টারনেট সংযোগ গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ফলে ইন্টারনেটে যুক্ত স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও অন্যান্য ডিভাইস বহির্বিশ্বের বিশ্বাস, প্রথা, সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের মতো ব্যাপারগুলো খুব ব্যাপকতার সঙ্গে আমাদের সামনে উপস্থাপন করছে। মানুষ তাতে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে।

বিশ্বের বহুদেশে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের রেওয়াজ রয়েছে, যা লিভ টুগেদার নামে পরিচিত। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের সমাজের একশ্রেণির মানুষের চিন্তাধারায়। খেয়াল করলে দেখবেন, বর্তমানের সিনেমা-নাটকে লিভ টুগেদারকে অনেকটা স্বাভাবিক বিষয় ও ইতিবাচক ভঙ্গিতে তুলে ধরা হয়। সেখান থেকে অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহী হয়। তরুণ-তরুণীদের মাঝে অবাধ মেলামেশার প্রবণতা থেকে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে এমন কাজে।

যৌন আকাঙ্খা যেহেতু মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য, সেহেতু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকাঙ্খা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বিষয়; ফলে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের পরিণতিতে ঘটছে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ। পরবর্তীতে লোকলজ্জা বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে কিংবা সমাজে ওই সন্তান স্বীকৃতি না পাওয়ার ভয়ে করছে গর্ভপাত। শহরের বিভিন্ন আবর্জনার স্তূপ, ডাস্টবিন আর ড্রেনে ঘন ঘনই উদ্ধার হচ্ছে নবজাতকের লাশ। যা বর্বরতম ঘৃণ্য একটি অপরাধ।

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ এবং পাপের কাজ। মানুষ ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চলার কারণেই জড়িয়ে পড়ছে এহেন গর্হিত কাজে। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা ব্যভিচারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ এবং হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এবং এর শাস্তি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পন্থা।’-সুরা বনী ইসরাঈল : ৩২

এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন ব্যভিচার করে, তখন তার ভেতর থেকে ঈমান বেড়িয়ে যায়, এরপর তা তার মাথার ওপর ছায়ার মতো অবস্থান করতে থাকে। এরপর সে যখন তা থেকে তওবা করে, তখন তার ঈমান পুনরায় তার কাছে ফিরে আসে।’ -সুনানে আবু দাউদ

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক কঠোর শাস্তি নির্ধারিত থাকবে। তারা হচ্ছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক এবং অহংকারী গরীব।’-সহিহ মুসলিম

অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারের শাস্তির বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমি স্বপ্নে একটি চুলা দেখতে পেলাম, যার ওপরের অংশ ছিল চাপা আর নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত আর সেখানে আগুন উত্তপ্ত হচ্ছিল, ভেতরে নারী-পুরুষরা চিৎকার করছিল। আগুনের শিখা ওপরে আসলে তারা ওপরে উঠছে, আবার আগুন স্তিমিত হলে তারা নিচে যাচ্ছে, সর্বদা তাদের এ অবস্থা চলছিল, আমি হজরত জিবরাইল (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? হজরত জিবরাইল (আ.) বলেন, তারা হলো- অবৈধ যৌনচারকারী নারী ও পুরুষ। -সহিহ বোখারি

বর্তমান সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাকে খুব সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, যাত্রাপথে সহযাত্রী হিসেবে, ফেইসবুক বা অনলাইনে পরিচিতির খাতিরে নারী-পুরুষের মাঝে বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। ইসলামি দৃষ্টিকোণে এগুলো নিষিদ্ধের আওতায়। এ ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া চোখের জিনা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা জিহ্বার জিনা, অবৈধভাবে কাউকে স্পর্শ করা হাতের জিনা, ব্যাভিচারের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাওয়া পায়ের জিনা, খারাপ কথা শোনা কানের জিনা আর জিনার কল্পনা করা ও আকাঙ্খা করা মনের জিনা। অতঃপর লজ্জাস্থান একে পূর্ণতা দেয় অথবা অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।’ -সহিহ বোখারি

ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তানকে শান্তির ধর্ম ইসলাম মেরে ফেলতে বলেনি। বরং তার সুরক্ষা ও ভরণপোষণের ব্যাপারে তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সেই শিশু নিষ্পাপ, তাকে সেই পাপের অংশীদার না বানানোর কথা বলা হয়েছে। ইসলামি শরিয়তে ব্যভিচারের ফলে জন্মলাভ করা সন্তান মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে, যেহেতু তার পিতা অবৈধ এবং মাকেই তার ভরণপোষণের দায়ভার গ্রহণ করতে হবে।

কিন্তু আমাদের সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনে তো একটি পাপ করছে উপরন্তু নবজাতককে হত্যা করে আরও একটি মহাপাপ করছে। এমন জঘন্যতম অপরাধ বন্ধে আমাদেরকে তৎপর হতে হবে। জীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি, বিধিনিষেধ এবং অনুশাসন মেনে চলার পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়তি সতর্কতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এরকম ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বিনাশ করা সম্ভব হবে। সেগুলো হলো-

সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার ঘটানো এবং নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। এমন অবৈধ সম্পর্কের পরিণতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানানোর ব্যবস্থার পাশাপাশি পরকালের শাস্তির আলোচনা বেশি বেশি করা। তরুণ-তরুণীদের মধ্যকার অবাধ মেলামেশা নিয়ন্ত্রণে অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন হওয়া। ইন্টারনেটের নেতিবাচক প্রভাবের ব্যাপারে জনগণকে অবহিত করা। নবজাতক হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান কার্যকর করা।

প্রাপ্তবয়স্কদের অনতিবিলম্বে বিয়ের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ঘাটতির মতো সমস্যা নিরসনে উদ্যোগী হওয়া। সর্বোপরি জীবনের সর্বক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। কোনো ব্যক্তি যদি পরিপূর্ণভাবে ধর্মকে লালন করে, তাহলে তার দ্বারা এমন গর্হিত পাপকার্য সম্পন্ন হওয়ার কথা নয়।

   

গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি, ছবি : সংগৃহীত

গাজা বিষয়ে আমেরিকান মুসলিমদের নতুন কর্মসূচি, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে বদলে যাচ্ছে মার্কিন রাজনীতির গতিপথ। ১৬ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরও ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন করায় আমেরিকান মুসলিমদের ভোট হারাতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সমর্থন করা থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ৯ রাজ্যের মুসলিম নেতারা।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) মিশিগানের ডিয়ারবোর্নে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সদ্য গঠিত জাতীয় জোট এব্যান্ডন বাইডেনের প্রধান জয়লানি হুসাইন।

নতুন এই জোটে রয়েছে মিশিগান, মিনেসোটা, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নেভাদা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়া রাজ্যের মুসলিম নেতারা। এখানে সবচেয়ে বেশি আরব আমেরিকান মুসলিমদের বসবাস রয়েছে এবং ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোর ভোটের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস মিনেসোটার নির্বাহী পরিচালক ও সদ্য গঠিত জাতীয় জোট এব্যান্ডন বাইডেনের প্রধান জয়লানি হুসাইন বলেন, ‘আমরা আজ ঘোষণা করছি, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২৪ সালের নির্বাচনে হেরে গেছেন। হ্যাশট্যাগ এব্যান্ডন বাইডেন ২০২৪ প্রচারাভিযান আসন্ন নির্বাচনে বাইডেনের পরাজয় নিশ্চিত করবে। কারণ তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে অনাগ্রহী।’

আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের (এএআই) তথ্য অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক ৩.৪৫ মিলিয়ন আমেরিকান মুসলিম ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করে আসছে। তবে গত অক্টোবরে এএআই পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, আরব আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের প্রতি সমর্থন ৪২ শতাংশ কমেছে। মূলত গাজায় ইসরায়েলের হামলা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাইডেনের প্রতি মুসলিম সমর্থন কমতে শুরু করে।

জরিপে আরব আমেরিকানদের মাত্র ১৭ শতাংশ নির্বাচনে বাইডেনের পক্ষে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। অথচ ২০২০ সালে বাইডেনের পক্ষে তাদের ৫৯ শতাংশ সমর্থনের কথা জানিয়েছিল। আরব আমেরিকান ইনস্টিটিউটের ২৬ বছরের সমীক্ষার ইতিহাসে এবারই প্রথম আরব আমেরিকান ভোটাররা ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষে এত কম সমর্থন দিয়েছে।

;

ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি



হেদায়াতুল্লাহ বিন হাবিব, অতিথি লেখক, ইসলাম
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা, ছবি : সংগৃহীত

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি এলাকা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মানুষ যখন সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে ভুলে ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে সরে যায় এবং বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়- তখন আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে কোনো বিপর্যয় বা বালা-মসিবত সৃষ্টি করেন। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অন্যায়-অনাচার থেকে ফিরে আসে, তওবা করে; ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আর তা এ কারণে যে, আল্লাহতায়ালা বান্দাকে তার কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, যাতে তারা (তওবা করে) ফিরে আসে।’ -সুরা আর রূম : ৪১

অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শনসমূহ পাঠাই।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯

তেমনি একটি বিপর্যয় হলো- ভূমিকম্প। এটি আল্লাহতায়ালার অসীম শক্তিমত্তার একটি প্রমাণ। অতীত যুগে এর মাধ্যমে তিনি অনেক অবাধ্য সম্প্রদায়কে সমূলে বিনাশ করেছেন। কেয়ামত দিবসেও প্রচণ্ড এক ভূমিকম্পের মাধ্যমেই তিনি দুনিয়াকে ধ্বংস করবেন। এ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ‘যিলযাল’ (কম্পন) নামে স্বতন্ত্র একটি সুরাও নাজিল করেছেন।

অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ -সুরা আনআম : ৬৫

আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা নাফরমান বান্দাদের ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘তোমরা কি তোমাদেরকে নিরাপদ মনে করে নিয়েছ যে, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদেরকে জমিনে বিধ্বস্ত করে দেবেন না, যখন তা হঠাৎ থর থর করে কাঁপতে থাকবে?’ -সুরা মুলক : ১৬

ভূমিকম্প সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন হবে সেটা হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ -জামে তিরমিজি : ২২১২

অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ভূমিকম্প হলো- কেয়ামতের একটি আলামত। কেয়ামতের পূর্বে অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে। -সহিহ বোখারি : ১০৩৬

এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে- সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধ্বসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।’ -জামে তিরমিজি : ১৪৪৭

ভূমিকম্প যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। তওবা করে সব ধরনের গোনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফারের (ক্ষমাপ্রার্থনার) পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষ মনোনিবেশ করতে হবে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভূমিকম্পের সময় বেশি বেশি ‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’ পড়া। এতে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই দোয়ার বরকতেই আল্লাহতায়ালা হজরত ইউনুস (আ.) কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

এছাড়া ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি দান-সদকা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সদকা বিপদ-আপদ দূর করে।’

ভূমিকম্প হলে হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দান-সদকা করার প্রতি জোর তাকিদ দিতেন।

ভূমিকম্প যেহেতু একটি আজাব, তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে। তিনি ছাড়া কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবেন না। আল্লাহতায়ালা সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুন। ভূমিকম্পসহ সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;

মুচকি হাসিও ইবাদত



সাকী মাহবুব, অতিথি লেখক, ইসলাম
অর্থ : তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা

অর্থ : তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) মুচকি হাসাও একটি সদকা

  • Font increase
  • Font Decrease

হাসি সৌন্দর্যের প্রতীক। হাসিমুখে কথা বললে শত্রুও বরফের মতো গলে যায়। একে অপরের থেকে দূর হয়ে যায় হিংসা ও বিভেদের চওড়া দেয়াল। হৃদয় থেকে দূর হয় অহংকার ও আত্নগরিমা। হাসির মাধ্যমে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। একটুখানি মুচকি হাসি দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে দিতে যোগ করতে পারে নতুন মাত্রা। তাছাড়া এভাবে কথা বলা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। তাই পরিচিত-অপরিচিত সবার সঙ্গে সদা হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা উত্তম।

একজন মুসলিম হিসেবে অন্য ভাইয়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ কেমন হওয়া উচিৎ, তা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়ে গেছেন। পাশাপাশি অপর ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকা। আর গুরুত্বপূর্ণ একটি ভালো কাজ হলো- অন্য ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা।’ -জামে তিরমিজি

আরেক হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমার ভাইয়ের মুখে (সাক্ষাতে) মুচকি হাসি নিয়ে আসাও একটি সদকা। হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাসোজ্জ্বল মুখ তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরুপ। -জামে তিরমিজি

কারও সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করলে সে খুশি হয়। মুখ গোমড়া করে রাখালে মনে সন্দেহের দানা বাঁধে। তাই সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা ও আনন্দ দেওয়ার বিষয়টি আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন। নবী কারিম (সা.) সবসময় মুচকি হাসতেন। মুচকি হাসি ছিল তার চিরাচরিত ভূষণ। সুতরাং আমরা কথা ও কাজে সবসময় মুচকি হেসে কথা বলব। তাহলে আমাদের পরস্পরে সৃষ্টি হবে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির অমোঘ বন্ধন। সেই সঙ্গে পালন করা হবে রাসুলের সুন্নত। আল্লাহতায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

;

৮ সপ্তাহ ধরে মসজিদে আকসায় প্রবেশে বিধি-নিষেধ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আল আকসা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করছেন অল্প কয়েকজন মুসল্লি

আল আকসা প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করছেন অল্প কয়েকজন মুসল্লি

  • Font increase
  • Font Decrease

ফিলিস্তিনের পবিত্র মসজিদুল আকসায় জুমার নামাজ পড়তে মুসল্লিদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েলি পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর পবিত্র এ মসজিদে প্রবেশে আগের চেয়ে কঠোরতা বাড়িয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এ নিয়ে গত আট জুমার নামাজে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ও এর প্রাঙ্গণ প্রায় মুসল্লিশূন্য ছিল।

সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর এ মসজিদে মাত্র সাড়ে তিন হাজার মুসল্লি জুমার নামাজ পড়েছেন। তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।

জেরুজালেমের ইসলামিক ওয়াকফ বিভাগ জানিয়েছে, ‘সাধারণত পবিত্র মসজিদুল আকসায় ৫০ হাজারের বেশি মুসল্লি জুমার নামাজ পড়তে আসেন। কিন্তু আজ মাত্র সাড়ে তিন হাজার লোক এখানে জুমার নামাজ পড়েছেন। গত ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মসজিদে প্রবেশে শক্ত অবস্থানে রয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। আর জুমার দিন তাদের বিধি-নিষেধ আরো কঠোরভাবে পালন করা হয়।’

ওয়াকফ বিভাগ আরো জানায়, ‘পবিত্র আকসা মসজিদ ও আশপাশের চত্বর প্রায় মুসল্লিশূন্য থাকলেও সেখানে মুসল্লিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আকসা প্রাঙ্গণে শুধু ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মুসল্লিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত আট জুমায় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়।’

মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে না পেরে বিভিন্ন রাস্তায় নামাজ পড়তে বাধ্য হন বেশির ভাগ মুসল্লি। জেরুজালেমের অলিগলিতে মোতায়েন করা ইসরায়েলি পুলিশ কম বয়সীদের মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয় এবং অনেককে গ্রেপ্তার করে। এমনকি ওয়াদি আল-জোজ এলাকায় মুসল্লিদের ওপর ইসরায়েলি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকে ৪৮ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে প্রায় ১৬ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়; যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু ও নারী।

এরপর গত ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি গত শুক্রবার শেষ হয়। এ সময়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি ও জিম্মি বিনিময় হয়।

;