ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি
মানুষ যখন সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালাকে ভুলে ইবাদত-বন্দেগি থেকে দূরে সরে যায় এবং বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত হয়- তখন আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে কোনো বিপর্যয় বা বালা-মসিবত সৃষ্টি করেন। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অন্যায়-অনাচার থেকে ফিরে আসে, তওবা করে; ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করে। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণেই জলেস্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। আর তা এ কারণে যে, আল্লাহতায়ালা বান্দাকে তার কিছু কৃতকর্মের স্বাদ আস্বাদন করান, যাতে তারা (তওবা করে) ফিরে আসে।’ -সুরা আর রূম : ৪১
অন্য এক আয়াতে তিনি বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই নিদর্শনসমূহ পাঠাই।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯
তেমনি একটি বিপর্যয় হলো- ভূমিকম্প। এটি আল্লাহতায়ালার অসীম শক্তিমত্তার একটি প্রমাণ। অতীত যুগে এর মাধ্যমে তিনি অনেক অবাধ্য সম্প্রদায়কে সমূলে বিনাশ করেছেন। কেয়ামত দিবসেও প্রচণ্ড এক ভূমিকম্পের মাধ্যমেই তিনি দুনিয়াকে ধ্বংস করবেন। এ সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ‘যিলযাল’ (কম্পন) নামে স্বতন্ত্র একটি সুরাও নাজিল করেছেন।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।’ -সুরা আনআম : ৬৫
আরেক আয়াতে আল্লাহতায়ালা নাফরমান বান্দাদের ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘তোমরা কি তোমাদেরকে নিরাপদ মনে করে নিয়েছ যে, যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদেরকে জমিনে বিধ্বস্ত করে দেবেন না, যখন তা হঠাৎ থর থর করে কাঁপতে থাকবে?’ -সুরা মুলক : ১৬
ভূমিকম্প সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এ উম্মত ভূমিকম্প, বিকৃতি এবং পাথর বর্ষণের মুখোমুখি হবে। একজন সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন, কখন হবে সেটা হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বলেন, যখন গায়িকা এবং বাদ্যযন্ত্রের প্রকাশ ঘটবে এবং মদপানের সয়লাব হবে।’ -জামে তিরমিজি : ২২১২
অন্য এক হাদিস থেকে জানা যায়, ভূমিকম্প হলো- কেয়ামতের একটি আলামত। কেয়ামতের পূর্বে অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে। -সহিহ বোখারি : ১০৩৬
এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জিত হবে, কাউকে বিশ্বাস করে সম্পদ গচ্ছিত রাখা হবে, কিন্তু তা আত্মসাৎ করা হবে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা হবে, একজন পুরুষ তার স্ত্রীর বাধ্যগত হয়ে মায়ের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করবে, বন্ধুকে কাছে টেনে পিতাকে দূরে সরিয়ে দেবে, মসজিদে উচ্চস্বরে শোরগোল হবে, সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি সমাজের শাসকরূপে আবির্ভূত হবে- সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের, ভূকম্পনের, ভূমিধ্বসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন), পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনের জন্য।’ -জামে তিরমিজি : ১৪৪৭
ভূমিকম্প যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সতর্কবার্তা, তাই আমাদের সতর্ক হতে হবে। তওবা করে সব ধরনের গোনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফারের (ক্ষমাপ্রার্থনার) পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে বিশেষ মনোনিবেশ করতে হবে।
ইসলামি স্কলাররা বলেন, ভূমিকম্পের সময় বেশি বেশি ‘লা-ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন’ পড়া। এতে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই দোয়ার বরকতেই আল্লাহতায়ালা হজরত ইউনুস (আ.) কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
এছাড়া ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি দান-সদকা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘সদকা বিপদ-আপদ দূর করে।’
ভূমিকম্প হলে হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার গভর্নরদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে দান-সদকা করার প্রতি জোর তাকিদ দিতেন।
ভূমিকম্প যেহেতু একটি আজাব, তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে। তিনি ছাড়া কেউ আমাদের রক্ষা করতে পারবেন না। আল্লাহতায়ালা সবাইকে আমল করার তওফিক দান করুন। ভূমিকম্পসহ সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।