ইসলামের দৃষ্টিকোণে ট্রান্সজেন্ডার

  • মীযান মুহাম্মদ হাসান, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান, ছবি : সংগৃহীত

তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান, ছবি : সংগৃহীত

সহজে বলা যায়, ট্রান্সজেন্ডার মানে হলো- পুরুষ থেকে নারী হয়ে ওঠা। কিংবা কোনো পুরুষ নিজেকে অপারেশনের মাধ্যমে নারী হিসেবে দাবি করা। তারা কখনো কখনো নিজেদের ট্রান্স হিসেবেও পরিচয় করান।

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মতবাদ, চেতনা ও ফেতনা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যেসবের লক্ষ থাকে- কখনো গোটা মানবজাতিকে গ্রাস করা, কখনো সামগ্রিকভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করা। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। নানাবিধ ফেতনা ও বিপর্যয় উস্কে দেওয়া। সামাজিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করা। ঠিক এমনই এক ফেতনা হচ্ছে, নিজের লিঙ্গ পরিচয়কে অস্বীকার করা। কিংবা নিজেকে না নারী, না পুরুষ- এই পরিচয় দিয়ে স্বস্তিবোধ করা; নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে এ জাতীয় মানসিকতা ও ফেতনার প্রধান টার্গেট হচ্ছে- উঠতি তরুণ-যুব প্রজন্ম। বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর ভয়াবহ বিস্তারের সংবাদ পাওয়া গেছে। অভিভাবকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, সেদিন খুব দূরে নয়; যেদিন এ আগ্রাসন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতেও ঢুকে যাবে। গ্রাস করবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের। অবাধ অপসংস্কৃতির বিস্তার ও কতিপয় মিডিয়ার নগ্ন প্রচারণা এমন কাজকে সহজ করে তুলছে। নির্লজ্জতাকে দূর করছে বিভিন্ন কৌশলে। কখনো মানবতার নামে, নয়ত অধিকার প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে। একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী এসব বাস্তবায়নে কৌশলে তরুণ প্রজন্মের পেছনে কাজ করছে। নানাভাবে এই ভয়াবহ মানসিক বিকারগস্ত মানসিকতা জাগিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছে। অনেকের আচার-আচরণেও বিরূপ প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও নেমেছে।

একজন নারীর পুরুষে রূপান্তরিত হওয়া। কিংবা পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে দাবি করা- সুস্থ মানসিকতা নয়। এটা কীভাবে, কী করে সম্ভব?

বিজ্ঞাপন

হাদিসের আলোকে আমরা জানব, কোনো নারী নিজেকে পুরুষ হিসাবে দাবি করা। অথবা কোনো পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার বিধান কী? হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কী বলেছেন?

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) ওইসব পুরুষকে অভিশাপ করেছেন, যারা নারীর বেশ ধারণ করে। আর ওই সব নারীকেও অভিশাপ করেছেন, যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। –সহিহ বোখারি : ৫৮৮৫

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত গণ্য হবে। -সুনানে আবু দাউদ : ৪০৩১

বর্ণিত হাদিসদ্বয় থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কোনো পুরুষ নিজেকে নারীর সাদৃশ্য অবলম্বন করে প্রকাশ করলে, সে নারী জাতিরই অন্তর্ভুক্ত হবে। ঠিক একই কথা বিপরীতমুখী আচরণের ক্ষেত্রেও।

কোরআন মাজিদে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো জাহান্নামের আগুন থেকে। যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছেন নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাবের ফেরেশতাগণ। যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন, তা অমান্য করেন না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হন, তাই করেন।’ -সুরা তাহরিম : ০৬

এই আয়াতে মুমিনদের জন্য পালনীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তা হলো- নিজেদেরকে সংস্কার ও সংশোধন করার সঙ্গে সঙ্গে নিজ নিজ পরিবারের লোকদেরকে সংস্কার ও সংশোধন। তাদেরকে ইসলামি শিক্ষা-দীক্ষা প্রদানের প্রতি যত্নবান হওয়া। যাতে তারা জাহান্নামের জ্বালানী হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আর এই কারণেই হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শিশুরা যখন সাত বছর বয়সে পৌঁছে যাবে, তখন তাদেরকে নামাজ পড়ার আদেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে পৌঁছে যাওয়ার পর (তারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন হলে) তাদেরকে (শিক্ষামূলক) প্রহার করো।’ -সুনানে আবু দাউদ

ঠিক একইভাবে তাদেরকে রোজা পালনেরও আদেশ দিতে হবে এবং অন্যান্য বিধি-বিধানের অনুসরণ করার শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। যাতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মধ্যে সত্য দ্বীন মানার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। -তাফসিরে ইবনে কাসির

আমাদের সবারই উচিত ছেলে-মেয়েকে এ জাতীয় আগ্রাসন ও ফেতনা বিষয়ে সচেতন করা। তাদেরকে সঠিক জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা। তাদেরকে ইসলামের সঠিক শিক্ষা প্রদান করলে, আশা করা যায়- তারা মানব সভ্যতাবিরোধী সংস্কৃতি ও ইসলাম বিদ্বেষী যাবতীয় ফেতনা থেকে বাঁচতে পারে।

লেখক : খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর।