জুমার দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস

  • শরিফ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মসজিদে নববিতে জুমার আজান দিচ্ছেন মোয়াজ্জিন, ছবি : সংগৃহীত

মসজিদে নববিতে জুমার আজান দিচ্ছেন মোয়াজ্জিন, ছবি : সংগৃহীত

জুমার দিন সপ্তাহের সেরা দিন। দিনটি মহান আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন, যা অন্যকোনো জাতিকে দেওয়া হয়নি। এই দিনের নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। সেখানে জুমার দিনের প্রধান আমলের কথা বলা হয়েছে, অসংখ্য হাদিসে জুমার বিভিন্ন আমল ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে‌। এখানে জুমার দিনের দ্বিতীয় আজানের ইতিহাস তুলে ধরা হলো।

প্রথম যুগে জুমার আজান
আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং হজরত আবু বকর ও হজরত উমর (রা.)-এর জামানায় জুমার দিন মাত্র একটি আজান ও ইকামত প্রচলিত ছিল। হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমার দিন তৃতীয় আজান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)। নবী কারিম (সা.)-এর সময় জুমার জন্য একজন ব্যতীত মোয়াজ্জিন ছিল না এবং জুমার দিন আজান দেওয়া হতো, যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের ওপর খুতবার পূর্বে। –সহিহ বোখারি : ৮৬৭

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় আজানের প্রচলন
হজরত উসমান (রা.)-এর খেলাফতকালে দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। বহু এলাকা মুসলমানদের খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন তিনি সবাইকে জুমার নামাজের সম্পর্কে জানানোর জন্য সাহাবায়ে কেরামের সম্মতিতে দ্বিতীয় আজানের প্রচলন করেন। হজরত সায়িব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম (সা.) হজরত আবু বকর (রা.) এবং হজরত উমর (রা.)-এর সময় জুমার দিন ইমাম যখন মিম্বরের ওপর বসতেন তখন প্রথম আজান দেওয়া হতো। পরে যখন হজরত উসমান (রা.) খলিফা হলেন এবং লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেল তখন তিনি জাওরা থেকে দ্বিতীয় আজান বৃদ্ধি করেন। ইমাম বোখারি (রহ.)বলেন, জাওরা হলো- মদিনার অদূরে বাজারের একটি স্থান। –সহিহ বোখারি : ৮৬৭

দ্বিতীয় আজান সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত
দ্বিতীয় আজানের প্রবক্তা হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) হওয়ার কারণে তাকে বেদআত বলা কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নত, উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। হজরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রা.) বলেন, একদিন ফজরের নামাজের পর হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে এমন এক উচ্চাঙ্গের নসিহত করলেন যে, তাতে আমাদের চক্ষু থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগলো এবং অন্তর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। তখন এক ব্যক্তি বললেন, এতো বিদায়ী ব্যক্তির মতো নসিহত- ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আমাদের ওপর কি অসিয়ত করে যাচ্ছেন? তিনি বললেন, তোমাদের আমি আল্লাহকে ভয় করার অসিয়ত করছি, যদি এ হাবশি গোলামও আমির নিযুক্ত হয়, তবুও তার প্রতি অনুগত থাকবে। তার নির্দেশ শুনবে। তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে তারা বহু বিরোধ প্রত্যক্ষ করবে। তোমরা সাবধান থাকবে নতুন নতুন বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে। কারণ তা হলো- গোমরাহি। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ওই যুগ পাবে তার কর্তব্য হলো- আমার সুন্নত এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতের ওপর অবিচল থাকা। এগুলো তোমরা চোয়ালের দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে থাকবে। –সুনানে আবু দাউদ : ৪৫৫২

বিজ্ঞাপন

দ্বিতীয় আজানের জবাব
সকল আজান ও ইকামাতে জবাব প্রদান গুরুত্বপূর্ণ হলেও জুমার দ্বিতীয় আজানের জবাব দেওয়া নিয়ে ইমামগণের মধ্যে বিভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তার সারাংশ হলো- ইমামের জন্য দ্বিতীয় আজানের জবাব দেওয়া উচিত। আর মুসল্লিরা মৌখিকভাবে জবাব না দিয়ে মনে মনে জবাব প্রদান করবে। –ইনআমুল বারী : ৪/৯৪

ওই সময় হাত তুলে মোনাজাতের রীতি ভিত্তিহীন। এটা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।