সুরা কাহাফের গুরুত্ব ও ফজিলত

  • শরিফ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সুরা কাহাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক, ছবি : সংগৃহীত

সুরা কাহাফের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক, ছবি : সংগৃহীত

মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া সুরা কাহাফ পবিত্র কোরআনের ১৮ নম্বর সুরা। ১১০ আয়াতবিশিষ্ট এ সুরায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শিক্ষণীয় ঘটনা বর্ণনার পাশাপাশি কেয়ামত ও‌ মানুষের জীবনের তাৎপর্যবহুল দৃশ্যপটের অবতারণা করা হয়েছে। সর্বোপরি মানুষের আকিদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি সংশোধনে কোরআনি রীতি প্রতিফলিত হয়েছে। এ সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নরূপ-

সুরা কাহাফের শানে নুজুল
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরাইশ গোত্রের লোকেরা নজর ইবনে হারেস ও উকবা ইবনে মুঈতকে মদিনায় পাঠায়। এ সময় তাদের বলে দেওয়া হয়, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর অবস্থা মদিনার ইহুদি ধর্মযাজকদের নিকট বর্ণনা করবে। তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। কেননা তাদের মতো জ্ঞানভাণ্ডার আমাদের নেই। তারা যে সিদ্ধান্ত দেয়, তা আমাদের জানাবে। উভয় দূত মদিনায় পৌঁছে ইহুদি ধর্মযাজকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তখন ইহুদি ধর্মযাজকরা বলে তোমরা তাকে (নবী কারিম সা.) তিনটি প্রশ্ন করবে। তিনি যদি সঠিক উত্তর দেন, তবে নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসুল। আর যদি প্রশ্নগুলোর জবাব না দেন, তবে বুঝবে তিনি সত্যবাদী নন। প্রশ্নগুলো হলো- এক. সেই যুবকগণ কারা ছিল, যারা অতীতকালে বিদায় নিয়েছেন এবং যাদের ঘটনা সারা পৃথিবীতে অত্যন্ত বিস্ময়কর, আর সেই ঘটনাগুলো কি? দুই. সেই ব্যক্তি কে? যে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন? তার ঘটনাবলি কি? তিন. রুহের তাৎপর্য কি?

বিজ্ঞাপন

কোরাইশদের প্রেরিত দুই ব্যক্তি মক্কায় প্রত্যাবর্তন করে তাদের সব জানিয়ে দিল। অতঃপর তারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে প্রশ্ন তিনটি উত্থাপন করল। তিনি বললেন, আমি আগামীকাল বলবো। কিন্তু তিনি ভুলে ইনশাআল্লাহ বলেননি। এর ফলে ১৫ দিন অহি আসা বন্ধ ছিল। এ সময়ে কাফেরদের বিরূপ মন্তব্যে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) চিন্তিত ও পেরেশান ছিলেন। অবশেষে দয়াময় আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) সুরা কাহফ নিয়ে আগমন করলেন। আর প্রশ্নোগুলোর সমাধান হয়ে গেল। -তাফসিরে জালালাইন : ৪/১৪, তাফসির ইবনে কাসির : ১৪/৪

গুরুত্ব ও তাৎপর্য
এ সুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। হজরত উসায়েদ ইবনে হুজায়ের (রা.) এ সুরা পাঠকালে বিশেষ রহমত নাজিল হয়েছিল। যা সে স্বচক্ষে দেখেছে। হজরত বারা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করছিলেন। তার ঘোড়াটি দুটি রশি দিয়ে তার পাশে বাঁধা ছিল। তখন একখণ্ড মেঘ এসে তার ওপর ছায়া বিস্তার করল। মেঘখণ্ড ক্রমশঃ নিচের দিকে নেমে আসতে লাগল। আর তার ঘোড়াটি ভয়ে লাফালাফি শুরু করে দিল। ভোরবেলা যখন লোকটি রাসুল (সা.)-এর কাছে ওই ঘটনার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন- এ ছিল আস সাকিনা (প্রশান্তি) যা কোরআন তেলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল। -সহিহ বোখারি : ৪৬৪৭

বিজ্ঞাপন

ফজিলত
এ সুরার ফজিলত সম্পর্কে বেশ কয়েকটি হাদিস পাওয়া যায়। প্রথম এবং শেষ ১০ আয়াতের বিশেষ গুরুত্ব আছে। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। -সহিহ মুসলিম : ১৭৫৬

হজরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, আমি যদি তোমাদের মধ্যে থাকাকালে সে বের হয়, তবে আমি তার প্রতি দোষারোপ করব তোমাদের আগে। আর আমি যখন তোমাদের সঙ্গে থাকবো না, সে যদি তখন বের হয়- তখন তোমাদের উচিত হবে তার প্রতি দোষারোপ করা। আর আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আমার খলিফাস্বরূপ হবেন (তিনি তাদের দাজ্জালের হাত থেকে রক্ষা করবেন), এরপর তোমরা যারা তার দেখা পাবে, তার উচিত হবে তার সামনে সুরা কাহাফের প্রথম দিকের আয়াতগুলো পাঠ করা। কেননা তা পাঠ করলে তোমরা তার ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে... । -সুনানে আবু দাউদ : ৪২৭০, জামে তিরমিজি : ২৮৮৬

জুমার দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াতের উপকরিতা
জুমার দিনে অনেক আমল আছে। অন্যতম একটি আমল হলো- সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা। জুমার নামাজের আগে হোক বা পরে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য তার থেকে কাবা শরিফ পর্যন্ত দীর্ঘ নূর চমকাতে থাকবে। -শোয়াবুল ঈমান : ২৪৪৪

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহাফ পাঠ করবে যেমন তা নাজিল হয়েছে, কেয়ামতের দিন তার জন্য তার স্থান থেকে মক্কা পর্যন্ত দীর্ঘ এক নূর চমকাতে থাকবে। -মুসতাদরাকে হাকেম : ২১১২

ফজিলতপূর্ণ এই সুরা সকলে নিয়মিত পাঠ করা উচিত। মহান আল্লাহ সবাইকে তওফিক দান করুন।